বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইসলামে পবিত্রতার নির্দেশনা

ইসলামে পবিত্রতার নির্দেশনা

পবিত্রতা অর্জনের প্রতি ইসলাম সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলামের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য পবিত্রতা। পবিত্রতা মানে জীবনব্যাপী। বিশ্বাসের পবিত্রতা, কর্মের পবিত্রতা, শারীরিক পবিত্রতা, মানসিক পবিত্রতা, আর্থিক পবিত্রতা, বাহ্যিক পবিত্রতা, অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা, ভাষা তথা বাক্যের ও শব্দের পবিত্রতা, রুচির পবিত্রতা, দৃষ্টি ও দৃষ্টিভঙ্গির পবিত্রতা, পরিবেশ-প্রতিবেশের পবিত্রতা, শ্রবণে পবিত্রতা, দর্শনে পবিত্রতা ও চিন্তায় পবিত্রতা। 

এসবই পবিত্র জীবন যাপনের পূর্বশর্ত ও সহায়ক মাধ্যম। সর্বোপরি জ্ঞানের পবিত্রতা সবার আগে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, উহার অনুসরণ করো না, কর্ণ, চক্ষু, হৃদয়, উহাদের প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সূরা-১৭ আল ইসরা/বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৬)।

পবিত্রতা দিয়েই শুরু ইসলাম। ইসলামের প্রথম অংশ হলো ঈমান বা বিশ্বাস। ঈমানের প্রথম কথা হলো ‘কালিমায়ে তাইয়্যেবা’। কালিমায়ে তাইয়্যেবা’ নামের মানে হলো ‘পবিত্র বাক্য’ বা ‘পবিত্রকারী বাণী’। এই ঘোষণা দ্বারা বিশ্বাস পবিত্র হয়, মানুষ পাপ-পঙ্কিলতা, কুফর–শিরক ও সব ধরনের অন্যায়-অত্যাচার বা পাপাচার থেকে মুক্ত হয়, তাই এর নাম কালিমা তাইয়্যেবা তথা ‘পবিত্র কথা’ বা ‘পবিত্রকারী বাক্য’।

বিশ্বাসের পবিত্রতা মুক্তি দান করে, কর্মের পবিত্রতা সমৃদ্ধি ঘটায়, শারীরিক পবিত্রতা সুস্থতা আনে, মানসিক পবিত্রতা সাধুতা আনে, আর্থিক পবিত্রতা পরিতৃপ্তি দান করে, বাহ্যিক পবিত্রতা সৌন্দর্য বিকাশ ঘটায়, অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা জীবনকে পরিশীলিত করে, ভাষার পবিত্রতা ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়, রুচির পবিত্রতা শ্রেষ্ঠত্ব দান করে, দৃষ্টি ও দৃষ্টিভঙ্গির পবিত্রতা জীবনকে সুন্দর ও সুললীত করে, পরিবেশ ও প্রতিবেশের পবিত্রতা মহানুভব করে।

হাদিস শরিফে রয়েছে, আবু মালিক আশআরী (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত তহুরু শাতরুল ঈমান।’ অর্থাৎ, পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘আত তহুরু নিসফুল ঈমান।’ অর্থাৎ, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। (মুসলিম শরিফ, মিশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা: ৩৮, আলফিয়াতুল হাদিস)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের উঠান ও আঙিনা পরিচ্ছন্ন রাখো।’ মুহাম্মদ (সা.) আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে ভালোবাসেন।’

পবিত্র, নিখাদ ও বিশুদ্ধ জীবন যাপনের জন্য ইসলাম। তাই ইসলামি শরিয়ামতে, আত্মীক পবিত্রতার পাশাপাশি শারীরিক পবিত্রতাও জরুরি। ইসলাম সার্বক্ষণিক পবিত্রতার সঙ্গে ইবাদতে পবিত্রতার শর্তারোপ করেছে। অন্তত তিনটি ক্ষেত্রে পবিত্রতাকে ফরজ ও পূর্বশর্ত করা হয়েছে। যেমন নামাজ পড়া, কোরআন স্পর্শ করা ও কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। নামাজের ১৩টি অপরিহার্য ফরজের প্রথম পর্বের সাতটি শর্তের তিনটিই হলো পবিত্রতাবিষয়ক, যথা- শরীর পাক, কাপড় পাক, নামাজের জায়গা পাক। নামাজ ভঙ্গের ১৯টি কারণের একটি হলো ‘নাপাক জায়গায় সিজদা করা’।

শারীরিক বা বাহ্যিক পবিত্রতার তিনটি বিধিবদ্ধ পন্থা নির্ধারিত রয়েছে। যথা- অজু, গোসল ও তায়াম্মুম। অজু ও গোসল পবিত্র পানি দিয়ে সম্পাদিত করা হয় এবং তায়াম্মুম বিশেষ শর্তে পবিত্র মাটি দিয়ে সম্পন্ন করা হয়। বাহ্যিক ও শারীরিক পবিত্রতার প্রধান পদ্ধতি অজুর চারটি ফরজ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, তোমাদের মাথা মাসহ করবে এবং পা গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করবে। যদি তোমরা অপবিত্র থাকো, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে। তোমরা যদি পীড়িত হও...অথবা পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে।’ (সূরা-৫ আল মায়িদাহ, আয়াত: ৬)।

বাহ্যিক অপবিত্রতা ও নাপাক থেকে পবিত্র হতে যেমন আমদের অজু, গোসল ও তায়াম্মুম করতে হয়, অনুরূপ অভ্যন্তরীণ নাপাক থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য তওবা করা জরুরি। অভ্যন্তরীণ নাপাক হলো, লোভ-লালসা, রিয়া, অহংকার, মিথ্যা, গিবত, ক্রোধ, হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, শত্রুতা ইত্যাদি। হাদিস শরিফে আছে, ‘যে ব্যক্তি সুন্নত তরিকায় ভালোভাবে অজু করবে এবং অজুর শেষে ওপরের দিকে তাকিয়ে কালিমা শাহাদত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটা দরজাই সব সময় খোলা থাকবে, সে যখন খুশি তাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (তিরমিজি)। 

অন্য হাদিসে আছে, ‘নামাজ বেহেশতের চাবি, অজু নামাজের চাবি। (মিশকাত)। অজুর পানির সঙ্গে গুনাহসমূহ ধুয়ে যায় এবং সেই ব্যক্তি পবিত্র হয়ে যায়। পবিত্রতার উদ্দেশ্যে যে গোসল করে, তার পাপরাশি ঝরে যায় এবং ঝরে পড়া প্রতিটি পানির ফোঁটা ও কণা একেকটি নেকি রূপে গণ্য হয়।’ (আল হাদিস)।
পবিত্রতা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর বারি বর্ষণ করেন, তা দিয়ে তোমাদের পবিত্র করার জন্য।’ (সূরা-৮ আনফাল, আয়াত: ১১)। ‘এবং আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি।’ (সূরা-২৫ আল ফুরকান, আয়াত: ৪৮)।

মন ও স্থানের পবিত্রতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ, ‘আমার সহিত কোনো শরিক স্থির করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রেখো।’ (সূরা-২২ হজ, আয়াত: ২৬)।

পবিত্র পরিচ্ছদ গ্রহণ বা পোশাক পবিত্রকরণ মুক্ত হওয়ার বিষয়ে আল্লাহ তায়ালার আদেশ, ‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! উঠুন, সতর্ক করুন এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখুন, অপবিত্রতা পরিহার করে চলুন। (সূরা-৭৪ মুদ্দাছছির, আয়াত: ১-৪)।

ইবাদতের জন্য পবিত্রতা এবং ইবাদতকারীদের জন্য ইবাদতের স্থান আল্লাহর ঘর পবিত্র করার ও পবিত্র রাখার নির্দেশনা, ‘এবং ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)কে আমার গৃহ পবিত্র রাখতে আদেশ দিয়েছিলাম, তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী এবং রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৫)।

আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন এবং পবিত্রগণকে ভালোবাসেন। আত্মিক পবিত্রতার প্রথম ধাপ হলো তওবা তথা পাপ বর্জন করে পুণ্যের পথে ফিরে আসা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীগণকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরকেও ভালোবাসেন।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ২২২)।

পবিত্রতা অর্জন ও তা রক্ষা করার জন্য তাকওয়া অপরিহার্য। সুতরাং এর জন্য চাই তাকওয়ার অনুকূল পারিপার্শ্বিক স্থান ও পরিবেশ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, ‘যে মসজিদের ভিত্তি প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার ওপর স্থাপিত হয়েছে, উহাই আপনার সালাতের জন্য অধিক উপযুক্ত। সেথায় এমন লোক আছে, যারা পবিত্রতা অর্জন ভালোবাসে এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের আল্লাহ ভালোবাসেন।’ (সূরা-৯ তওবা, আয়াত: ১০৮)।

পবিত্রতা নবীরাসুলগণের বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্য। তাঁদের পরিচয় বিবৃত করে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তারা এমন লোক, যারা অতি পবিত্র হতে চায়।’ (সূরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৮২; সূরা-২৭ নমল, আয়াত: ৫৬)।

মহাগ্রন্থ ‘আল কোরআন’ পবিত্র, তাই এটি স্পর্শ করতে পবিত্র হতে হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই ইহা সম্মানিত কোরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে। যারা পূত পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না। ইহা জগতের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ।’ (সূরা-৫৬ ওয়াকিআহ, আয়াত: ৭৭-৭৯)

আর্থিক বা অর্থনৈতিক পবিত্রতার জন্য সদকা অপরিহার্য। সম্পদ পবিত্র না হলে খাবার পবিত্র বা হালাল হয় না, খাবার হালাল ও পবিত্র না হলে কোনো ইবাদতই আল্লাহর কাছে কবুল বা গ্রহণযোগ্য হয় না। আল্লাহ তায়ালা নবীজি (সা.)কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তাঁদের সম্পদ হতে “সদকা” গ্রহণ করবেন, এর দ্বারা আপনি তাদিগকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন। (সূরা-৯ তাওবা, আয়াত: ১০৩)।

আল্লাহ পবিত্র, তাঁর পবিত্র নামগুলোর অন্যতম ‘সুব্বুহুন’ (পবিত্রতম), ‘কুদ্দুসুন’ (অতি পবিত্র ও মহা পবিত্রকারী)। মানবতার পবিত্রতাই আল্লাহর উদ্দেশ্য। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ (সূরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৩৩)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান।’ (সূরা-৫ মায়িদা, আয়াত: ৬)।

পবিত্রতা প্রেম সৃষ্টি করে, পবিত্র চিন্তা সুখী করে, পবিত্র দৃষ্টি অন্তর জয় করে, পবিত্র বাক্য হৃদয়ে প্রশান্তি আনয়ন করে, পবিত্র আবেদন আপন করে, পবিত্র আহ্বান অনুগত করে, পবিত্র স্পর্শ পূর্ণতা প্রদান করে, পবিত্র অনুরাগ বন্ধনে আবদ্ধ করে, পবিত্র বন্ধন সমাজকে উন্নত করে, পবিত্র বিধান জাতিকে ঋদ্ধ-সমৃদ্ধ করে, পবিত্র জীবন আত্মবিশ্বাস ও সৎসাহস তৈরি করে।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

এবার উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির!
বগুড়ায় পানি নিষ্কাশনে ড্রেন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন
বগুড়ায় দাম কমেছে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের
বগুড়ার বিখ্যাত সাদা সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ
এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির
ঈদে ট্রেন যাত্রার পঞ্চম দিনের টিকিট বিক্রি শুরু
গাবতলীতে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত
সারিয়াকান্দিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা পালিত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু