বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘সালাম’ যেভাবে নির্বিঘ্নে জান্নাতে যাওয়ার উপায়

‘সালাম’ যেভাবে নির্বিঘ্নে জান্নাতে যাওয়ার উপায়

জান্নাত সবার কামনা। কিন্তু যে কেউ চাইলেই কি জান্নাতে যেতে পারবে? শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে যেতে কি কোনো সহজ আমল রয়েছে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি সুস্পষ্টভাবে এ সম্পর্কে কিছু বলেছেন? বলে থাকলে কি সেই সহজ আমল?

কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা মেনে জীবন পরিচালনায় রয়েছে জান্নাতের ঘোষণা। যে কোনো সুখের জিনিস লাভে পরিশ্রম ও কষ্টের বিকল্প নেই। কিন্তু বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণায় শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে যেতে রয়েছে সহজ ও ছোট্ট একটি আমল। তা হচ্ছে বেশি বেশি সালামের প্রচলন তথা আদান-প্রদান করা। সালাম দেয়ার এ আমলটি সবারই জানা এবং তা পালনেও সহজ।

‘হ্যাঁ’, শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে যাওয়ার সহজ আমল হলো- ‘সালাম দেয়া’। পরিচিত অপরিচিত সব মুসলিমকে সালাম দেয়া। ‘সালাম’-ই হলো সেই ছোট্ট ও সহজ আমল; যার মাধ্যমে মানুষ শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে যেতে পারবে। এ সম্পর্কে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতকালীন সময়ের একটি ঘটনার বর্ণনায় সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। তাহলো-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসেন। সে সময় বিখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনায় থাকতেন। তিনি ছিলেন তাওরাতের অনুসারী ও পারদর্শী ইয়াহুদি। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আসার পর তিনি তাঁকে দেখে ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সে সময়ের ঘটনা এটি।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু অন্যদের সঙ্গে এ মর্মে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতে গেলেন যে, তিনি সত্য নবি কিনা। মদিনার মানুষেরা বাঁধাভাঙা স্রোতের মতো তাঁকে দেখতে তাঁরই দিকে ছুটতে লাগলো আর বলাবলি করছিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় চলে এসেছেন।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ভিড়ের মাঝে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারা দেখেই তাঁকে সত্যবাদী হিসেবে চিনতে পারলাম। এ চেহারার মানুষ মিথ্যাবাদী হতে পারে না। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সেদিন যে কথাগুলো বলতে শুনেছি; তাহলো-

‘হে মানুষেরা! তোমরা সালামের প্রচলন বাড়াও, (ক্ষুধার্ত) মানুষকে খাবার খাবার দাও এবং যখন অন্য মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ পড়, তাহলে তোমরা শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে যেতে পারবে।’ (তিরমিজি)

এ হাদিসে ৩টি আমলের কথা বলেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম। এরমধ্যে সবচেয়ে সহজ হলো সালামের প্রচলন বাড়ানো। এমন কোনো মানুষ পাওয়া যাবে না, যে ব্যক্তি সালাম জানে না। আর এ সালাম বিনিময়ের মধ্যমে শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে জান্নাত যাওয়া সহজ ও নিরাপদ।

‘সালাম’ এমন কোনো শব্দ নয়, যার মাঝে লুকিয়ে আছে অশান্তি কিংবা অরাজকতা। বরং সালামই একমাত্র আমল ও দোয়া; যা শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করে দেয়। অপরাধীকে পবিত্র চরিত্রের অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলে। এ সালামের বেশি বেশি প্রচলন বাড়াতে বলেছেন বিশ্বনবি। যার বিনিময়ে তিনি উম্মতে মুহাম্মাদিকে শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে যাওয়ার সহজ আমল হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, বেশি বেশি সালামের আদান-প্রদান করা। একে অন্যকে সালাম দেয়া। পরিচিত-অপরিচিত সব মুসলিমকে সালাম দেয়া। সালামের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত সমাজ গঠন ও সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা। সালাম হোক মুসলিম উম্মাহর পরস্পরের অভিভাদনের একমাত্র মাধ্যম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সমাজের সর্বস্তরে সালামের প্রচলন ও প্রসার ঘটানোর তাওফিক দান করুন। শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

দৈনিক বগুড়া