মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামিতে আল্লাহর যে কুদরত দেখে ইসলাম গ্রহণ করলেন তিনি

সুনামিতে আল্লাহর যে কুদরত দেখে ইসলাম গ্রহণ করলেন তিনি

ভয়াবহ সুনামির পর ২০০৫ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন ইন্দোনেশিয়ার আচেহ শহরের বাসিন্দা মুহাম্মদ চেং। সুনামিতে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার যে কুদরত দেখে ইসলাম গ্রহণ করলেন তিনি; চলুন সে সম্পর্কে তার মুখ থেকেই শুনি-

আমি চীনা বংশোদ্ভূত। আমার পরিবার তিন প্রজন্ম ধরে ইন্দোনেশিয়ার আচেহতে বাস করে। আমার পূর্বপুরুষরা ব্যবসার জন্য আসেন এবং অনুকূল পরিবেশ পেয়ে তারা এখানেই স্থায়ী হন। তারা চীনা সংস্কৃতি ও ধর্মাচার পালন করতেন। আমিও তাদের অনুসারী ছিলাম। আমার দোকানটা মসজিদের খুব কাছাকাছি। প্রতিদিন আমি আজানের ধ্বনি শুনতাম, তবে তা আমাকে মুসলিম হতে উদ্বুদ্ধ করেনি। 

অবশেষে ভয়াবহ সেই সকাল এলো। ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪ সকালে প্রতিদিনের মতো আমি ‘গ্র্যান্ড মস্ক অব বান্দা আচেহ’ এর পাশে অবস্থিত আমার দোকানটি খুলি। আবহাওয়া ছিল চমৎকার, কোনো কিছুই অস্বাভাবিক মনে হয়নি। হঠাৎ বিকট শব্দ ও ছোটাছুটি শুরু হলো। মানুষ দৌড়াতে শুরু করল এবং চিৎকার করতে লাগল- পানি, সমুদ্রের পানি এখানে চলে এসেছে। 

মানুষ ছিল দিশাহারা। তারা মসজিদের দিকে ছুটছিল, চিৎকার ও কান্না করছিল। আমি ধূপের ধোঁয়া নিতে গেলাম, আমি আমার উপাস্যের সাহায্য কামনা করতে চাইলাম। ততক্ষণে পানি চলে এসেছে। ধেয়ে আসছে সড়কের নিচে, মসজিদের দিকে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং উপরতলায় উঠে গেলাম। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি সুনামি দেখছিলাম। পানি শুধু বাড়ছিল।

এরপর আমি বিস্ময়কর একটি দৃশ্য দেখলাম। আমি সাদা পোশাক পরিহিত দীর্ঘকায় ব্যক্তিদের দেখলাম। তারা ট্রাফিক পুলিশের মতো মানুষকে চলাচলে নির্দেশনা দিচ্ছিল। তারা মসজিদের সামনে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে ছিল এবং পানি তাদের নির্দেশনা মান্য করছিল। মসজিদের কয়েক মিটার সামনে এসে পানি ভাগ হয়ে মসজিদের ডানে ও বাঁয়ে প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছিল। এরপর আরো পানি এলো। সমুদ্র সমস্ত শক্তি দিয়ে তা শহর ও মসজিদের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। সাদা পোশাক পরা লোকগুলো তখনো সরে গেল না। 

ঢেউয়ের পর ঢেউ এলো, কিন্তু মসজিদের ভেতর পানি ঢুকল না। ভেতরের মানুষগুলো বেঁচে গেল। পুরো দৃশ্য আমি আমার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। এরপর আরো সাদা পোশাক পরিহিত লোক এলো এবং পুরো মসজিদ ওপরে তুলে ধরল। 

মসজিদটি ওপরে ঝুলছিল এবং নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। এটা কী ছিল? যদি কেউ বলে আমি যা দেখেছি তা সে বিশ্বাস করে না। কখনোই না করুক! তবু আমি তা চোখে দেখেছি এবং আমি তখন সজ্ঞানে ছিলাম। আল্লাহ মসজিদ রক্ষা করেছেন।

ভয়াবহ দুর্যোগ ও সুনামির কয়েক সপ্তাহ পর আমি যা দেখেছি তা বলতে প্রতিবেশী এক মুসলিম দোকানদারের কাছে গেলাম। তিনি আমাকে ইমামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরামর্শ দিলেন। দ্বিধা-সংকোচ নিয়েই আমি মসজিদের দিকে পা বাড়ালাম। ইমাম আমাকে স্বাগত জানাতে মসজিদের বাইরে চলে এলেন। 

আমি তাকে পুরো ঘটনা খুলে বললাম। তিনি শুনলেন এবং চোখের পানি ফেললেন। শেষে আমরা পরস্পরকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। ইমাম বললেন, আপনি যাদের দেখেছেন তারা আল্লাহর ফেরেশতা। তারা আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে এসেছিল। আল্লাহ চাননি ধ্বংসাত্মক সুনামির ভেতরও এ মসজিদ ধ্বংস হোক। 

আল্লাহ হয়তো আপনাকে আরো কাছে টেনে নিতে চান। তিনি আপনাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সুখী করতে চান। আপনি কি মুসলিম হবেন? তার প্রশ্নে আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম। একজন চীনা ব্যক্তি কিভাবে মুসলিম হবে? আমাদের জীবনযাপন, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও বিশ্বাস সব কিছু ভিন্ন। ইমামকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে এলাম।

দোকানে এসে আমি দরজা বন্ধ করলাম। কিন্তু বারবার সুনামি দিনের দৃশ্যগুলো মনে পড়ছিল। দুই দিন পর্যন্ত দোকান খুললাম না। বসে বসে শুধু ভাবলাম। তৃতীয় দিন দরজায় টোকা পড়ল। মসজিদের ইমাম আমাকে খুঁজতে এসেছেন। তিন দিন দোকানের দরজা বন্ধ দেখে তিনি চিন্তিত হয়েছেন। কেননা আগে কখনো এমন হয়নি। 
তাকে বললাম, আপনিই ঠিক বলেছেন। আল্লাহ আমাকে নিদর্শন দেখিয়েছেন। এখন বোকার মতো তা উপেক্ষা করা উচিত হবে না। অনুগ্রহ করে বলুন, আমি কীভাবে মুসলিম হব। 

ইমাম বললেন, এটা খুবই সহজ। শুধু দুটি বাক্য উচ্চারণ করলেই হবে। তিনি আমাকে একটা কাগজ দিয়ে তা পাঠ করতে বললেন। আমি তা (কলেমা) উচ্চারণ করলাম এবং একটি দীপ্তি যেন আমার দোকানে ছড়িয়ে পড়ল।

দৈনিক বগুড়া