মেধা, দক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে বিচার বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জিভূত মামলাজট কমিয়ে সহজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
গতকাল রোববার বিকেলে (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে একটি ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।
বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষকে দ্রুত ও সহজে ন্যায়বিচার দেওয়ার মাধ্যমে জাতিসংঘের এসডিজি ও সরকারের ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার আহ্বান জানান আইনমন্ত্রী।
বিচারকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যত বেশি দক্ষ হবেন, যিনি যত দ্রুত মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারবেন, স্মার্ট বাংলাদেশে তিনি তত বেশি এগিয়ে যাবেন। সে কারণেই বিচারকদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম উপায় হলো সুষম মানবসম্পদ উন্নয়ন। মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হলো প্রশিক্ষণ। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতেও দরকার প্রশিক্ষণ।
আইনমন্ত্রী বলেন, উন্নত ও সুদক্ষ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিটের পক্ষেই সুদক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব। সে কারণেই আমরা বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বাড়িয়েছি। আমি দেখেছি, এখানে একসাথে ৪০ জনের বেশি বিচারককে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেত না। ৪০ জনের একটি ব্যাচের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা হলে অন্য বিচারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেত না।
আরও দেখেছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স আয়োজন করতে না পারার কারণে অনেক সহকারী জজের চাকরি স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি পেতে বিলম্ব হয়েছে। অনেক প্রয়োজনীতা থাকা সত্বেও অন্যান্য স্তরের বিচারকদের জন্য নির্ধারিত প্রশিক্ষণ কোর্স যথাসময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি।
এ নিয়ে বিচারকদের মনে ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, যা নিয়ে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকেও রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কল্যাণে এখন সেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে। আজ এখানে একসাথে প্রায় ৮০ জন বিচারককে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। একই সঙ্গে সহকারী জজদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স এবং যুগ্ম জেলা জজদের ওরিয়েন্টেশন কোর্স চালানো সম্ভব হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের অভিযাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ধাপে ধাপে সফলতার সাথে অগ্রসর হচ্ছে, জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রথম ধাপ রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের পথ ধরে এখন তার সরকার এসডিজি ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের পথে দুর্বার গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুকন্যার দেখানো পথে ২০৪১ সালে আমরা অবশ্যই নতুন আরেক বাংলাদেশ দেখতে পাবো, যে বাংলাদেশ হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ-উন্নত বাংলাদেশ; আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী স্মার্ট বাংলাদেশ, যেখানে গড়ে উঠবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ।
জ্ঞানভিত্তিক উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিগত প্রায় দেড় দশক ধরে জ্ঞান অন্বেষণ, জ্ঞান চর্চা, জ্ঞান সৃষ্টি ও জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্র বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহু যুগান্তকারী ও অভূতপূর্ব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে।
আনিসুল হক বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারই জ্ঞান অন্বেষণ, জ্ঞান চর্চা ও জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্র বৃদ্ধির প্রধান মাধ্যম হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ নামক নতুন এক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে প্রবেশে কোন শ্রেণিভেদ নেই। নতুন এই বাংলাদেশে প্রতিটি নাগরিকের সমান প্রবেশাধিকার আছে। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, বঙ্গবন্ধুকন্যা ২০৪১ সালে যে স্মার্ট বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে জ্ঞানই হবে সবচেয়ে বড় শক্তি। যার জ্ঞান থাকবে, স্মার্ট বাংলাদেশে সে-ই সমাজের উঁচু স্তরে পৌঁছে যাবে, তার বংশ-পরিচয় যাই-হোক না কেন?
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সাওয়ার ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) শেখ আশফাকুর রহমান বক্তৃতা করেন।
দৈনিক বগুড়া
