শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

বিয়ের পাঁচ বছর পরেও প্রেমিককে ভুলতে পারিনি

বিয়ের পাঁচ বছর পরেও প্রেমিককে ভুলতে পারিনি

প্রশ্ন: আমার অমতে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল একজন প্রতিষ্ঠিত ছেলের সঙ্গে। কিন্তু বিয়ের পাঁচ বছর পরেও প্রেমিককে ভুলতে পারিনি। অনেক চেষ্টা করেও মন থেকে সরাতে পারিনি প্রথম ভালোবাসার কথা। এখন সে কোথায় আছে জানিও না, তবে চাইলে খোঁজ বের করা সম্ভব। এইদিকে আমি অনেক চেষ্টা করেও স্বামীর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারি না, সন্তান নেওয়ার কথা ভাবতে পারি না। মনে হচ্ছে বছরের পর বছর তাকেও ঠকাচ্ছি। কিন্তু সম্পর্ক ভেঙে ফেলার মতো মনোবল পাচ্ছি না। আমার পরিবার একেবারেই সাপোর্ট করবে না আমাকে।

উত্তর: আপনি আত্ম-দ্বন্দ ও আত্ম-অনুশোচনায় ভুগছেন। আপনি নিজেকে মেনে নিতে পারছেন না। আবার নিজেকে পাল্টাতেও পারছেন না। এভাবে চেষ্টা করে কারোর পক্ষেই কোনোদিন সফল হওয়া সম্ভব না। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা জানি না। জানি না বলেই জীবন বৈচিত্র্যময়। আমাদের জন্য যেটা প্রাকৃতিকভাবে নির্ধারিত, সেটাই হবে। তবে ভবিষ্যৎ যাই হোক না কেন, সেটাকে মেনে নেওয়ার চর্চা করার মাধ্যমেই কেবলমাত্র আপনি প্রশান্তি খুঁজে পাবেন। তবে আপনার বর্তমান অস্থিরতা কমাতে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন-

১। নিজেকে ভালোবাসুন: আপনি আত্ম-দ্বন্দ ও আত্ম-অনুশোচনায় ভুগছেন। আপনি নিজেকে মেনে নিতে পারছেন না। আবার নিজেকে পাল্টাতেও পারছেন না। এভাবে চেষ্টা করে কারোর পক্ষেই কোনদিন সফল হওয়া সম্ভব না। আজ থেকে নিজেকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসুন এবং তথাকথিত ভালো-খারাপ সকল বৈশিষ্ট্যসহ মেনে নেওয়ার চর্চা করুন। তাহলে আপনার মনে প্রশান্তি আসবে আপনার মনের ক্ষত নিরাময় হতে শুরু করবে।

২। সেল্ফ অবজারভেশন বা আত্ম-সচেতনতা বাড়ানো: নিজের ভাবনা, মনোভাব এবং প্রতিক্রিয়া নিয়ে সচেতন হোন। এটি আপনার নার্সিসিস্টিক প্রবণতার উপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার পথে প্রথম পদক্ষেপ।

৩। নিজের ব্যক্তিত্বের সকল বৈশিষ্ট্যকে মেনে নিন: নিজের চরিত্রের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে একে আপনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। এর সমালোচনা করা যাবে না বা এর জন্য নিজেকে তিরস্কার করা বা দায়ী মনে করা যাবে না। নিজের ব্যক্তিত্বের নেতিবাচক, ইতিবাচক সকল বৈশিষ্ট্যকে মেনে নিতে হবে।

৪। আত্মবিশ্বাস বাড়ান: আপনার নিজের মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করুন। আপনি আত্ম-সহায়তামূলক বই, মনোযোগ বা নিঃশ্বাসের ব্যয়ামের মাধ্যমে এটি করতে পারেন। আপনি যদি প্রয়োজন অনুভব করেন, একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।

৫। সমাজ-কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করুন: এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে আপনার বিষণ্ণতা কেটে যাবে। আপনি জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পাবেন।

৬। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: উপরের পদ্ধতিসমূহ অবলম্বন করে কোনও ফল না পেলে একজন অভিজ্ঞ কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপিস্ট বা মনোরোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

প্রশ্ন:  আমার বয়স ১৯ বছর। বাবা-মায়ের ঝগড়া দেখেই বড় হয়েছি, এখনও সেটা চলে প্রতিদিনই। আমি খুব ক্লান্ত। আমার পড়াশোনা হয় না ঠিক মতো। বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না। কোনও বন্ধুও নেই। মনে হয় আত্নহত্যা করি।

উত্তর: প্রতিটি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। দৃষ্টিভঙ্গির এই স্বাভাবিক পার্থক্যকে মেনে না নিতে পারায় আপনার বাবা-মায়ের সম্পর্ক ভালো না এবং আপনার সাথেও উনাদের সম্পর্ক ভালো না। আপনি বর্তমানে হতাশা বা বিষণ্ণতায় ভুগছেন। আপনার এই হতাশা বা বিষণ্ণতা থেকে মুক্তির জন্য নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করুন- 

১। নিজের ব্যক্তিত্বের সকল বৈশিষ্ট্যকে মেনে নিন: নিজের চরিত্রের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে একে আপনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। 

২। সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করুন: সামাজিক কর্মকাণ্ডে বেশি করে অংশগ্রহণ করুন। বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। এতে করে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।

৩। অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স): আপনার বাবা-মায়ের তথা অন্যের ভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন। এটি আপনার সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে এবং সমাধান নির্মাণে সহায়তা করবে।

৪। আত্মবিশ্বাস বাড়ান: আপনার নিজের মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করুন। আপনি আত্ম-সহায়তা বই, মনোযোগ বা নিঃশ্বাসের ব্যয়ামের মাধ্যমে এটি করতে পারেন। আপনি যদি প্রয়োজন অনুভব করেন, একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।

৫। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করুন: নিয়মিত ব্যায়াম, সুস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।

৬। স্ট্রেস হ্রাসের উপায় শিখুন: ধ্যান, প্রাণায়াম, সংগীত শুনুন বা কার্যক্রম চর্চা করুন যা আপনাকে শান্তি ও স্বাস্থ্যকর মনোভাব দেবে।

৭। ব্রিদিং এক্সারসাইজ: শ্বাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১-২-৩-৪-৫-৬ গুনতে গুনতে পেট ভেতর দিকে টেনে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। যখনই মনে হবে তখন একটানা কয়েবার এরকম করুন।

৮। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন: হতাশা যদি আপনার মোকাবিলা ক্ষমতার বাইরে হয়, এর জন্য যদি আপনার পেশাগত জীবন ব্যহত হয় বা আপনার ভেতরে আত্মহত্যার চিন্তা বা প্রবণতা তৈরি হয়, তবে আপনাকে দ্রুত কোনও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। 

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ: