ছোটবেলা থেকে গাছের সাথে সংখ্যতা ছিল সিদ্দিকের। গাছ আর বাগান ছিল সবসময়ের বন্ধু। পড়াশোনার পাশাপাশি অবশিষ্ট সময়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ আর বাগানে সময় পার করতেন সিদ্দিক। বয়স বাড়ার সাথে চাপ বাড়তে থাকে পড়াশোনার। বাড়ি থেকে পড়াশোনার জন্য চলে যেতে হয় দূরে। তবে এ চাপ আর দূরত্ব গাছ থেকে দূরে রাখতে পারেননি তাকে। অবসরে গাছ আর বাগান নিয়ে সময় কেটেছে তার।
পড়াশোনার জন্য বাড়ি থেকে দূরে থাকলেও স্বপ্নে বিভোর ছিল সিদ্দিক। দু চোখ জুড়ে শুধু গাছ আর বাগান। আর সে স্বপ্ন বাস্তব রুপ নিয়েছে তার। পড়াশোনা শেষ করে বাড়িতে এসে ৩০ প্রজাতির ফল বাগান করে সফল হয়েছেন সিদ্দিক।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের লধাবাড়ি গ্রামের আমিনুর রহমানের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক। বাড়ির পাশে ভাউলারহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি শেষ করে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি ও ম্যানেজম্যান্ট বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি। বর্তমানে বিসিএস এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাগান করে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে অনেক বেকার যুবকের। পড়াশোনার পাশাপাশি এমন উদ্যোগে সফল হওয়ায় সাড়া ফেলেছে জেলাজুড়ে।
বাগান দেখতে আসা বন্ধু সুবল রায় বলেন, পড়াশোনার সুবাদে আমি ঢাকায় থাকছি। আজকে তার বাগানে আমার প্রথম আসা হল। বাগানটি দেখার পর আমি অভিভূত হয়েছি। লেবু, বরই, ত্বীন, আপেল, দার্জিলিং কমলাসহ নানা ধরনের গাছ নিয়ে তার বাগান। সবচেয়ে বড় বিষয় হল প্রায় সবগুলোতে ভালো ফলন এসেছে। এটি আসলে আমাদের বন্ধুমহলের গর্বের বিষয়। তার জন্য সবসময় শুভ কামনা থাকবে।
আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ছোট বেলা থেকে গাছ ভালো লাগতো। শখ ছিল একটা বড় বাগান করব। গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে দেখি মানুষ ছাঁদেও বাগান করছে। এতে করে আমার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে বাগানের কাজ শুরু করি। আট মাস হতে না হতেই আমি লক্ষাধিক টাকা আয় করেছি। আগামী রমজান মাসে চার লক্ষ পিচ লেবু বিক্রি করব বলে আশা করছি। আলাদা ফল ও বিক্রি করেছি কয়েকবার। পাশাপাশি আমার বাগানে ত্বীনফল, কমলা, বরই, ড্রাগন, সজনা, আপেল, লেবুসহ ৩০ প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে কিছুর গাছের ফল আমি ইতিমধ্যে বিক্রি শুরু করেছি। আরো এখন কিছু বিক্রি করা হচ্ছে। আরো কিছু গাছের ফল এক মাসের মধ্যে চলে আসবে বলে আশা রাখছি। আমরা সকলে চাকরী নিয়ে পরে থাকলে সফল হতে পারবনা। বরং পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু উদ্যোগ নিয়ে শুরু করলেই সফল হওয়া যায় বলে আমি বিশ্বাস করি। এ ছাড়াও আমি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা নিয়ে এসে এ বাগানটি করেছি। কেউ যদি বাগান করতে আগ্রহী হয়ে থাকে অবশ্যই তাকে আমি সহযোগিতা করব। আমি আরো জায়গা প্রস্তুত করছি আমার বাগানের পরিধি বাড়ানোর জন্য। এতে করে আমি আরো আয় বাড়ানোর পাশাপাশি অধিক মানুষের কর্মসংস্থান ঘটবে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল আজিজ বলেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা চাকরী নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করেন। তার মধ্যে একজন শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।
দৈনিক বগুড়া