বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শখের আম বাগানে মালেকের বাজিমাত

শখের আম বাগানে মালেকের বাজিমাত

ইউটিউবে অন্যের আম বাগানের ভিডিও দেখে উৎসাহিত হয়ে ২০১৮ সালে নিজের আড়াই একর জমিতে ৩০০ আমের চারা রোপণ করেন রাজবাড়ীর মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শিকদার (৫০)। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। চলতি মৌসুমে তার আড়াই একর জমিতে তিন শতাধিক আম গাছে প্রচুর পরিমাণে আম ধরেছে। উন্নত জাতের আম বাগান করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তিনি।

আব্দুল মালেক শিকদার রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের জৌকুড়া গ্রামের আব্দুল খালেক শিকদারের ছেলে। তিনি রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।

সরেজমিনে মালেক শিকদারের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, তার প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ধরে আছে বিভিন্ন প্রজাতির আম। এর মধ্যে রয়েছে আম্রপালি, হিম সাগর, হাড়িভাঙা, মল্লিকা, ল্যাংড়া, ফজলি, বারি-৪ সহ বিভিন্ন উন্নত জাতের আম। আমের ভারে প্রতিটি গাছের ডাল নুয়ে পড়েছে। মালেক শিকদার নিজেই তার আমের বাগান পরিচর্যা করছেন। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই তার আম বাগান দেখতে আসছেন। অনেকে আবার আম কিনতেও আসছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি মৌসুমে জেলার ৫ উপজেলায় ৪৮০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫৫ হেক্টর, গোয়ালন্দ উপজেলায় ১০ হেক্টর, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৪৫ হেক্টর, কালুখালী উপজেলায় ১১০ হেক্টর ও পাংশা উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করেছেন চাষিরা। যার প্রতি হেক্টর জমিতে ১১ মেট্রিক টন আম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আম চাষি মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শিকদার বলেন, ২০১৮ সালে আমি ইউটিউবে দেখি অনেক কৃষি উদ্যেক্তা উন্নত জাতের আমের বাগান করে লাভবান হচ্ছেন। তাদের ঐ ভিডিও দেখে উৎসাহিত হয়ে আমি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়ে খোঁজ খবর নিয়ে চন্দনী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ডাউকি গ্রামে আড়াই একর জমির উপরে তিন শতাধিক আম গাছের চারা রোপন করি। রাজবাড়ীর মাটি আম চাষের জন্যে উপযুক্ত হওয়ায় এ বছর আমার বাগানে প্রচুর ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কেজি আম আছে। সে হিসেবে তিন শতাধিক গাছে দুইশো থেকে আড়াইশো মণ আমের ফলন পাবো বলে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, উন্নত জাতের আম চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। আমার সফলতা দেখে এই গ্রামের অনেকেই আমের বাগান করেছেন। আমি আমার এই বাগানে কোনো প্রকারের ক্ষতিকারক ঔষধ বা কীটনাষক প্রয়োগ করিনি। তাই সকলের কাছে আমার বাগানের আমের সুনাম রয়েছে। আমি বাগানে সূলভ মূল্যে আম বিক্রি করি।

বাগানে আম কিনতে আসা ক্রেতা এমের আলী শেখ বলেন, আগে বাজার থেকে আম কিনতাম। সেগুলোতে অনেক সময়ে পোকা থাকতো। এখন আমাদের এখানে স্থানীয় অনেক আমের বাগান হয়েছে। বাগানে এসে সরাসরি আম ক্রয় করছি। রাজবাড়ী জেলার বাগানের আমগুলো অনেক স্বাদ। দামও মোটামুটি হাতের নাগালে। আমরা এখন ভালো মানের আম কিনতে পেরে অনেক খুশি।

আম ব্যাপারী ইয়াকুব মৃধা বলেন, আগে আমরা যশোর, সাতক্ষীরা থেকে পাইকারিভাবে আম কিনতাম। কিন্তু বর্তমানে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমরা স্থানীয় বিভিন্ন বাগান থেকে আম কিনছি। রাজবাড়ীর প্রতিটি বাগানের আম ভালো ও সুমিষ্ট। আমরা বাগান ধরে আম কিনে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। সারা দেশে রাজবাড়ী জেলার আমের সুনাম দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক চাষিই আম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী নারায়ন মন্ডল বলেন, রাজবাড়ী জেলার মাটি আম চাষের জন্য উপযোগী। চন্দনী ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক আমের চাষাবাদ করেছেন। এদের মধ্যে মোহাম্মদ আব্দুল মালেক শিকদার অন্যতম। তিনি আম চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। তার দেখাদেখি অনেকেই আম চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত আম চাষিদের নানাবিধ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি আগামীতে এই অঞ্চলে আমের চাষাবাদ আরও বাড়বে।

দৈনিক বগুড়া