বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সেলিমের শখের ছাদবাগান

সেলিমের শখের ছাদবাগান

বৃক্ষপ্রেমী সেনাসদস্য সেলিম আল-দীন। দেশমাতৃকার সেবায় ব্রত ৩৬ বছরের এ যুবকের আরেক ভালোবাসা কৃষি। তাই এত ব্যস্ততার মধ্যেও পাঁচ বছর আগে ফরিদপুর শহরের ওয়্যারলেস পাড়ায় নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন ছাদবাগান। সেই বাগানই হয়ে উঠেছে তাঁর পরিবারের আশার আলো। কমলা, মাল্টা, আঙুর ও আনার চাষে পেয়েছেন সফলতা।

ছাদবাগানের পাশাপাশি এখন ৯ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন জাতের ফল ও সবজি বাগান গড়ে তুলেছেন। তাঁর এ কাজে পরিবারের অন্য সদস্যরাও যুক্ত হয়েছেন। সেলিম জানান, প্রথম দিকে শখের বশে ছাদে কমলা, মাল্টা ও সৌদি আরবের খেজুর গাছের চারা লাগান। তবে ওই সময় সঠিক জাত সংগ্রহ করতে পারেননি। পরে ইতালি, মিসর, জর্ডান, গ্রিসসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কমলা ও মাল্টার জাত সংগ্রহ করেন। আর ভারত থেকে সংগ্রহ করেন ৮-১০ জাতের চারা। এর মধ্যে কিছু জাতের ফলন ও স্বাদ বাজারের ফলের মতো হওয়ায় বাগানের পরিসর বৃদ্ধি করেন।

তিনি আরও জানান, এক পর্যায়ে ৯৫টি পর্যন্ত আনারের জাত সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে ৪০-৪৫টি আনার বাংলাদেশের মাটিতে সফল হয়েছে। এর মধ্যেই তাঁর মাথায় আসে আঙুর চাষের কথা। প্রথমে মিসর এবং পরে ইউক্রেন, রাশিয়া ও ইতালির কয়েকটি বাণিজ্যিক জাত সংগ্রহ করে ২০২২ সালে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেন। ২০২৩ সালেই বাজারের আঙুরের মতোই সুমিষ্ট ও সুস্বাদু ফলন পান। বর্তমানে তাঁর বাগানে কমলা, মাল্টা, আনার, আঙুর, আম, লিচু ও বরইয়ের বিভিন্ন মিষ্টি ও সুস্বাদু জাত রয়েছে। অনেকেই এখন তাঁর কাছ থেকে এসব চারা কিনছেন।

সেলিম বলেন, বর্তমানে ৪০ প্রজাতির গাছ আমার সংগ্রহে আছে। এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু জাতের ফলন আসা বাংলাদেশের জন্য মাইলফলক। এখন আমার চাষ করা আনার ও আঙুরের জাতগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি, যাতে এগুলো আর আমদানি করতে না হয়।

সেলিমের বড় ভাই হায়দার হোসেন জানান, তিনি আগে ব্যবসা করতেন। ছোট ভাই সেলিম ছুটিতে বাড়িতে এসে ছাদে নানা ফলের বাগান শুরু করার পর তিনিও আগ্রহী হন। এখন তাঁর পরিবারও বাগান পরিচর্যায় যুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এখন প্রতিবেশীসহ অনেকে বাগান দেখতে আসেন এবং বিকেলে সময় কাটান। এটি তাঁদের সামাজিক মর্যাদা বাড়িয়েছে, পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের চারা বিক্রি করে তাঁদের সংসারের আয়ও বেড়েছে।

সেলিমের ছাদবাগান দেখে কৃষিকাজে যুক্ত হওয়া স্থানীয় স্কুলশিক্ষক রায়হান হোসেন ও কলেজছাত্র রাব্বী হোসেন জানান, তাঁরা বাড়ির পাশের জমিতে সেলিমের কাছ থেকে নেওয়া উন্নত জাতের মাল্টা ও আঙুরের চারা লাগিয়ে সফল হয়েছেন। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, দেশে শৌখিন আঙুর চাষে প্রধান সমস্যা ছিল কম মিষ্টি আর বিচি হওয়া। এ কারণে ছাদে আঙুর চাষ জনপ্রিয় ছিল না। মিসরীয় জাতের আঙুরে এ সমস্যা দূর করেছে।

দৈনিক বগুড়া