শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবারে কুরবানির মাঠ কাঁপাবে মামা-ভাগ্নে

এবারে কুরবানির মাঠ কাঁপাবে মামা-ভাগ্নে

ঈদুল ফিতরের পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এই ঈদে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা পশু কোরবানি করে থাকেন। এবারের ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ী গ্রামের সবুজ গোলদার নামে এক কৃষক তার নিজ বাড়িতে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ‘মামা’ ও ‘ভাগ্নে’ নামে দুটি ষাঁড় কুরবানিতে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন।

এরই মধ্যে ২৬ মণ ওজনের মামা ও ২৪ মণ ওজনের ভাগ্নের দাম ১৫ লাখ টাকা হলেও বিক্রি করেননি গরুর মালিক সবুজ গোলদার। এদিকে ষাঁড় দুটিকে দেখতে প্রতিদিনই তার বাড়িতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা। আসছেন ক্রেতারাও।

জানা গেছে, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে সবুজ গোলদারের নিজের পালিত দুটি গাভী থেকে জন্ম নেয় অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের এই দুটি ষাঁড়। জন্মের পর থেকে ষাড় দুটিকে পরম যত্নে লালনপালন করে আসছেন মালিক সবুজ গোলদার ও তার ছেলে সৌরভ গোলদার। ষাঁড় দুটো দেখতে যেন এক একটা পাহাড়। কোনো প্রকার ওষুধ ছাড়া দেশীয় খাবার খাইয়ে এবারের ঈদের জন্য তাদের প্রস্তুত করা হয়েছে। 

ষাঁড় দুটির খাবারের তালিকায় নেই কোনো প্রসেস ফিড। খড়, ঘাস, রান্না করা খিচুড়িসহ ভুট্টা, ভুসি, কুড়া, ছোলা ও খৈল মিশ্রিত দানাদার খাবার দেওয়া হয় ষাঁড় দুটিকে। কোনো ধরনের মেডিসিন ছাড়াই প্রকৃতিক খাবার খেয়ে এদের হয়েছে পেশিবহুল শরীর। প্রতিবেলায় চার কেজি দানাদার খাবার, দুই আটি ঘাস ও খড় খায় ষাঁড় দুটি। প্রতিদিন প্রতিটি ষাড়ের খাবার খরচ প্রায় ৭০০ টাকা। 

প্রায় সাত ফুট লম্বা ও ছয় ফুট উচ্চতার ২৬ মণ ওজনের কালো রঙের দুষ্ট প্রকৃতির ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘মামা’। আর সাত ফুট লম্বা ও সাড়ে পাঁচফুট উচ্চতার কালো লালচে রঙের শান্ত প্রকৃতির ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘ভাগ্নে’। ষাঁড় দুটি সম্পর্কেও মামা-ভাগ্নে।

এরই মধ্যে মামার দাম ৮ লাখ টাকা ও ভাগ্নের দাম ৭ লাখ টাকা হলেও বিক্রি করেননি ষাঁড়ের মালিক সবুজ গোলদার। মামার দাম ১০ লাখ ও ভাগ্নের দাম ৯ লাখ টাকা হলে বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এতো বড় ষাঁড় দেখতে প্রতিদিনই সবুজ গোলদারের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে উৎসুক জনতা। এতো বড় ষাঁড় দেখে খুশি তারাও। দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন ক্রেতারা। 

পাশের গ্রাম থেকে ষাঁড় দেখতে আসা একজনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রাশের গ্রাম থেকে এসেছি। শুনেছি সবুজ ভাই নাকি দুটি বড় গরু বানাইছে। তাই দেখতে আসলাম। গরু দুটোকে দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছে। চোখের তৃপ্তি পেয়েছি। এতো বড় গরু আমি আগে দেখিনি। তিনি এবার দুটি গরু ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চাচ্ছেন। 

একই এলাকার রাসেল বলেন, এতো বড় গরু আশপাশের কয়েক গ্রামের ভেতর নেই। আমাদের এলাকায় এই দুটি গরুই আছে। এই গরু দেখতে প্রায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে, আমরা দেখি। প্রাইভেট কার নিয়েও আসে। অনেকেই দাম বলে। আবার অনেকেই শুধু দেখতে আসে। 

ষাঁড়ের মালিকের ছেলে সৌরভ গোলদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সাড়ে তিন বছর ধরে ষাঁড় দুটিকে আমি লালন পালন করে আসছি। সব সময় এদের দেখাশোনা করে আসছি। ওদের পিঠে উঠলেও ওরা আমাকে কিছু বলে না। কুরবানিতে বিক্রি হয়ে গেলে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগবে আমার। কারণ ওদের সঙ্গে থাকতে থাকতে একটা মায়া হয়ে গেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ওদের দেখি। 

ষাঁড়ের মালিক সবুজ গোলদারের স্ত্রীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা তাদের একদম নিজেদের সন্তানের মতন পালন করেছি। ওদের জন্য দুই বেলা আমি খিচুড়ি রান্না করে দেই। এছাড়া ও আমি ওদের দুইবেলা খাইতে দেই। কুরবানী তে যদি বিক্রি হয়ে যায় তাহলে সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগবে আমার। কারন আমি ওদের সন্তানের মতন পালন  করেছি। 

মালিক সবুজ গোলদার বলেন, আমার গরু দুটিকে ছোট থাকতেই প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে এতো বড় করছি। কোনো ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করিনি। আর এতো বড় গরুকে ওষুধ দিলে এই গরমে রাখা সম্ভব হতো না। ছোটবেলা থেকেই ওদের খড়, ঘাস, রান্না করা খিচুড়ি, ছোলা, ভুট্টা, ভুসি, খৈলসহ দানাদার খাবার দিয়ে আসছি। মামার ওজন প্রায় ২৬ মণ আর ভাগ্নের ওজন প্রায় ২৪ মণ। মামার দাম ১০ লাখ ও ভাগ্নের দাম ৯ লাখ হলে বিক্রি করে দেব। এর আগে মামা ও ভাগ্নের দাম উঠেছিল ১৫ লাখ টাকা কিন্তু আমি দেইনি। কুরবানিতে বিক্রি করব বলে। 

গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা গোবিন্দ চন্দ্র সেন বলেন, ষাঁড় দুটি ছোট থেকেই আমাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এদের একটার ওজন ২৬ মণ আর একটার ওজন ২৪ মণ। ষাঁড় দুটিকে একদম প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে এবারের ঈদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক খাবার না খাওয়ালে এই গরমে এতো বড় ষাঁড় বাঁচত না। এবারের কুরবানির ঈদে বিক্রির জন্য হাঁটে তুলবে বলে শুনেছি। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। 

দৈনিক বগুড়া