শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গারো পাহাড়ে সাম্মাম চাষ করে সফল আনোয়ার

গারো পাহাড়ে সাম্মাম চাষ করে সফল আনোয়ার

মরুভূমির ফল সাম্মাম বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে সফল হয়েছেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী গোমড়া গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন। দেশে কয়েকবছর আগে থেকে এই ফলের আবাদ শুরু হলেও গারো পাহাড়ে এবারই প্রথম চাষ হচ্ছে সাম্মাম।

সম্প্রতি বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সুতা দিয়ে বানানো মাচায় ফুলে-ফলে ভরপুর সাম্মাম। বিভিন্ন আকারের কাঁচা-আধাপাকা কয়েকশ ফল ঝুলছে। সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করছে বেশকিছু ফল। গাছের গোড়ার অংশের মাটি মালচিং পেপার দিয়ে ঢাকা। একজন সহকর্মী নিয়ে আনোয়ার গাছের পরিচর্যা করছেন।

উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন জানান, ইউটিউব দেখে নিজের ১০ শতাংশ জমিতে বীজসহ সব কিছু মিলিয়ে তার খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে খেতে আসে কাঙ্ক্ষিত ফল। এখন পর্যন্ত তিনি ৫০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছেন। তার আশা, বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার ওপরে বিক্রি হবে সাম্মাম।

তিনি আরও জানান, পড়াশুনা শেষ করে বেসরকারি একটি সংস্থাতে চাকুরি নেন। চাকরির সঙ্গে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি। অবশেষে চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর চলে আসেন নিজ গ্রামে। এসে বাবার সঙ্গে কৃষি কাজে যুক্ত হন। এরপর চিন্তা করেন ব্যতিক্রম কিছু চাষাবাদের। এজন্য ইউটিউব দেখে মরুভূমির এই ফল চাষে আগ্রহ হয়ে ওঠেন তিনি। পরে ৪ হাজার টাকা দিয়ে রাজধানী থেকে বীজ সংগ্রহ করে নিজের ১০ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ করেন। এতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। এরপর টানা দুই মাস রক্ষণা-বেক্ষণা শেষে বাগানজুড়ে দেখা দেয় কাঙ্ক্ষিত ফল।

আনোয়ারের বাবা মোজাম্মেল হক জানান, ফলটির দু’টি জাতের মধ্যে একটি জাত লাগিয়েছে আনোয়ার। এ জাতের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরের অংশ হলুদ। খেতে খুব মিষ্টি ও রসালো। প্রতিটি সাম্মাম ২ কেজি পর্যন্ত ওজন হচ্ছে।

ভিনদেশি রসালো ফল উৎপাদনের খবরে প্রতিদিন তার খেত দেখতে আসছেন আশপাশের কৃষকরা। তারা জানান, আগামীতে চাষ করবেন মরুভূমির এই লাভজনক ফল। আর পাইকারাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন ফল নেওয়ার।

পাইকাররা বলেন, এ ফল তিন থেকে চারশ টাকা কেজিতে বিক্রি করা সম্ভব। এবং এলাকায় আরও অনেকে চাষ করলে শেরপুরসহ আশেপাশের জেলায় বাজার ধরা যাবে।

আগ্রহী কৃষক জামাল মিয়া বলেন, আমাদের এ পাহাড়ি এলাকায় কাকরোল, করলা, বরবটি, চিচিঙ্গা, বেগুন চাষ করি। ভাতিজা আনোয়ার যে ফলটা লাগাইছে, সেটা খুব মিষ্টি। পাইকাররাও আসছে দেখতে, তাই চাহিদা থাকায় সামনের মৌসুমে আমি ১০ কাঠা জমিতে চাষ করবো এই ফল।

আরেক কৃষক জুলহাস আলী বলেন, আমরা বর্ডার এলাকার মানুষ। ধানের আবাদ তো ঘরে তুলতেই পারি না পাহাড়ি ঢল আর হাতির আক্রমণে। বিভিন্ন সবজি চাষ করি আমরা। আনোয়ার বিদেশি যে ফলটা চাষ করছে, সেটা খেতে খুব মিষ্টি। সামনের বার আমিও চাষ করমু এ ফলটি।

ছানোয়ার হোসেন নামে এক যুবক এসেছেন শেরপুর পৌর শহরের মোবারকপুর মহল্লা হতে। তিনি বলেন, আমি খবরটি শুনতে পেরে দেখতে আসলাম। এ ফলটি গতবছর রাজধানীর একটি সুপারমল হতে তিন কেজি ১২শ টাকায় কিনেছিলাম। খুব সুস্বাদু ও রসালো ফল।

কৃষি গবেষক ড. মোহিত কুমার দে বলেন, সাম্মাম মূলত মরুঅঞ্চলের ফল। আমাদের দেশে ফলটি সাম্মাম হিসাবে পরিচিতি পেলেও অনেকে এটাকে রকমেলন বা হানিডিউ মেলনও বলে। আমাদের দেশে এর খুব একটা চাষ হয় না। তবে অনেক কৃষক এখন বিদেশি এই ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেনকে সার্বিকভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ আগামীতে সাম্মাম ফল চাষ এলাকায় ছড়িয়ে দিয়ে বেকারত্ব কমানোর চিন্তা করছে।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিবানী রানী নাথ বলেন, সাম্মাম বা রকমেলন জাতীয় ফলগুলো জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। পানি আটকে থাকলে গাছের গোড় পঁচে গাছ মারা যাবে। তাই এগুলো মরুভূমিতেই আবাদ হয়। তবে আমাদের গারো পাহাড়ের মাটির একটি বিশেষ গুন রয়েছে, তা হলো পানি আটকে থাকে না। তাই এখানে সাম্মাম বা রকমেলন জাতিয় ফলগুলো চাষ করা যাবে।

দৈনিক বগুড়া