শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

৫০টি চাকরির পরীক্ষায় ব্যর্থ, কলা চাষে সফল বগুড়ার শাকিল

৫০টি চাকরির পরীক্ষায় ব্যর্থ, কলা চাষে সফল বগুড়ার শাকিল

স্নাতক পাস করার পর থেকে দীর্ঘ ১০ বছর চাকরির পিছনে ঘুরেছেন শাকিল আহম্মেদ। অন্তত ৫০টি চাকরি পরীক্ষায় বসেছেন তিনি। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি কোন চাকরি জোটেনি তাঁর ভাগ্যে। বাধ্য হয়ে চাকরির আশা ছেড়ে দিয়ে বেছে নেন চাষাবাদ।

করোনাকালীন সময়ে সবাই যখন প্রায় ঘরবন্দি জীবন যাপন করছিল, সেসময় তিনি ২২ শতাংশ পৈত্রিক জমিতে শুরু করেন জি-৯ জাতের কলা চাষ। সেই যে শুরু আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। জি-৯ (গ্রান্ড নাইন) জাতের ইসরায়েলি কলা চাষ বদলে দিয়েছে তাঁর ভাগ্য।

প্রথমবার ২৭০টি চারা লাগিয়ে ১১ মাস পর কলা বিক্রি করেছেন এক লাখ ১৫ হাজার টাকা। প্রথমবার তার খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। জি-৯ কলা গাছের চারা একবার রোপণ করলে সেখান থেকেই পরপর তিনবার ফলন পাওয়া যায়। পরের বছর ওই জমি থেকেই কলা বিক্রি করেছেন এক লাখ ১৫ হাজার টাকা। পাশাপাশি সাথী ফসলও চাষ করেছেন একই জমিতে।

এরপর গত বছর অক্টোবর মাসে ৫০ শতাংশ জমিতে জি-৯ কলার চারা রোপণ করেছেন ৫০০ টি। একমাস পর থেকে কলা বিক্রি শুরু করবেন তিনি। এবার তিন লাখ টাকার কলা বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন শাকিল। এই জমিতে কলা চাষ ছাড়াও সাথী ফসল হিসেবে ফুল কপি ও মরিচ চাষ করে আয় করেছেন আরো দেড় লাখ টাকা।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে শাকিল আহম্মেদ। তিনি এখন হয়ে উঠেছেন কৃষির আইকন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা তাঁর উদাহরণ টানেন এখন বিভিন্ন মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে। শাকিলের কলা চাষ দেখে গ্রামের আরো দশজন উদ্বুদ্ধ হয়ে জি-৯ কলা চাষ শুরু করেছেন। শাকিল আহম্মেদ বলেন, এই এলাকায় আগে সাগর কলা চাষ হতো। সাগর কলা প্রতি কাঁদিতে ৮০ থেকে ১০০ পিস পাওয়া যায়। এক কাঁদি সাগর কলা কাঁচা অবস্থায় হাটে বিক্রি করা হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। সেখানে জি-৯ কলা এক কাঁদি থেকে পাওয়া যায় ১৭০ থেকে ১৮০ পিস। হাটে প্রতি কাঁদি ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা বিক্রি করা যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ইসরায়েল থেকে ১৯৯৫ সালে জি-৯ কলা চাষ ভারতে শুরু হয়। এরপর অনেক দেরিতে হলেও ২০১৮ সালের দিকে জি-৯ কলাচাষ স্বল্প পরিসরে বাংলাদেশে চাষ শুরু হয়। টিসু কালচার চারা হওয়ার কারণে জি-৯ কলা গাছ রোগ মুক্ত হয়।

এছাড়াও এজাতের কলার ফলন বেশী, সুস্বাদু এবং রোগ প্রতিরোধী।

শাকিল আহম্মেদ আরও জানান, এখনও ভারত থেকে জি-৯ কলা গাছের চারা বাংলাদেশে আসে। জি-৯ কলা চাষে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন এনজিও ও কৃষি বিভাগ বিনামুল্যে চারা সরবরাহ এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার আল মুজাহিদ সরকার বলেন ,জি-৯ কলা উচ্চ ফলনশীল, জিংক সমৃদ্ধ ছাড়াও অনেক পুষ্টি গুণ রয়েছে। চারটি কলা খেলে একজন মানুষের পেট ভরে যাবে। আফ্রিকার অনেকে দেশে মানুষ ভাতের পরিবর্তে জি-৯ কলা খেয়ে থাকেন। জি-৯ কলা চাষে কৃষক আগ্রহী হচ্ছে। অনেক গ্রামেই দেশি জাতের কলা চাষ ছেড়ে জি-৯ কলা চাষ শুরু করেছেন।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ: