শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

আয়মূলক কর্মকান্ডে পাল্টে যাচ্ছে চরের মানুষের জীবনমান

আয়মূলক কর্মকান্ডে পাল্টে যাচ্ছে চরের মানুষের জীবনমান

সংগৃহীত

কুড়িগ্রামে বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের ফলে প্রতিবছর অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। নষ্ট হয়ে যায় চরের মানুষের কৃষি ফসল। ফলে কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো পড়ে যায় চরম সংকটে। ওইসব বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের শিকার ৭৫০টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ। তারা দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার পাশাপাশি পারিবারিকভাবে আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে এগিয়ে এসেছে। আর তাদের সহযোগিতায় এসব পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে তাদের জীবনমান।

সরেজমিনে গিয়ে জনা যায়, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ছোটবড় ১৬টি নদ-নদী দ্বারা বেষ্টিত জেলা। আর এসব নদীর বুক জুড়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪শতাধিক চর। প্রতিবছরবন্যা ও নদী ভাঙ্গনের ফলে নিঃস্ব হয় এসব চরের বেশির ভাগ পরিবার। ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্য থেকে চিলমারী, রৌমারী ও সদর উপজেলার ২৫টি চরের ৭৫০টি দরিদ্র পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা দিয়ে উন্নয়নমুখী হতে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষনসহ পরিবারগুলোকে শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে শাক সব্জির বীজ দেওয়া হয়। এছাড়াও অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বি করতে ওইসব পরিবারে ১টি করে ভেড়া বিতরন করা হয়েছে। বিভিন্ন দুর্যোগে তাদেরকে সহায়তা প্রদান করা হয়। বন্যাকালীন সময়েও যাতে সবজি উৎপাদন অব্যাহত থাকে সে জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে সংস্থাটি। সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ভার্মি কম্পোষ্ট উৎপাদন এবং ব্যবহারে সহায়তা প্রদান বরছে। পরিবারগুলোর বন্ধন অটুটরাখার জন্য পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ ও আইনগত বিষয় নিয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়।

গতকাল রবিবার রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের জিঞ্জিরাম নদীর অববাহিকায় চর লালকুড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই গ্রামের ৩০টি বন্যাকবলিত পরিবার পারিবারিক আয়বৃদ্ধিমুলক কর্মকান্ড ছাড়াও সামাজিক উন্নয়ন মুলক কাজে যুক্ত রয়েছেন।

এ সময় কথা হয় ওই গ্রামের ছাইদুর রহমান ও মতিউর রহমানের সাথে তারা জানান, আমাদের গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র রাস্ত্মাটি বন্যায় ভেঙ্গে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পরে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সহায়তায় রাস্ত্মাটি মেরামত করেছি। এখন এই রাস্ত্মা দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল করতে পারে। আমাদের উৎপাদিত শাক-সবজি সহজে হাট-বাজারে বিক্রি করতে পারি। সন্ত্মানরা সহজেই স্কুলে যেতে পারে।

ওই গ্রামের আয়শা বেগম জানান, আমাদেরকে সুশাসন সম্পর্কে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। আমরা পারিবারিক নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিবাহ, পারিবারিক দ্বন্দ, সংবিধান, সংসদ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এখন কোনো আইনি পরামর্শ প্রয়োজন হলে আমরা ফ্রেন্ডশিপের সহায়তা নিই এবং তারা আমাদেরকে বিনা মূল্যে আইনি পরামর্শ প্রদান করেন। একই গ্রামের চায়না খাতুন ও নবিরন বেগম বলেন, আগে হাট থেকে রাসায়নিক সার কিনে আনতাম, এখন আমরা জৈব সার তৈরি করে ব্যবহার করি, ফেরোমন ফাঁদ দিয়ে পোকা মারছি। সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতে বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করতে শিখেছি। এই গ্রামের লাকি আক্তার জানান, ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশন ফান্ড প্রকল্প থেকে আমাকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে একটি ভেড়া দিয়েছিল। একটি থেকে এখন ৫টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে শাক-সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষন পাওয়ার পর আমার বসতবাড়ীতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর ২২ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি; যা আমার সাংসারিক ব্যয় ভার বহন করেও কিছু টাকা স য় করতে পেরেছি। এ থেকে আবার ৩ হাজার টাকা দিয়ে দশটি মুরগী ক্রয় করেছি। এখন আর স্বামীর একার আয়ের উপর নির্ভর হতে হচ্ছে না।

ফ্রেন্ডশিপের ট্রান্সজিশন ফান্ড (এএসডি) প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল ইসলাম মলিস্নক জানান, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ এর সহায়তায় সদস্যদের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্ন্‌য়ন,সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে কুড়িগ্রামের সদর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলার মোট ২৫টি চরে ৭৫০ জন সদস্যকে উক্ত প্রকল্প সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইউনুছ আলী জানান, কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী এবং রৌমারী উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রানজিশন ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে ৭৫০টি পরিবারকে ভেড়া প্রদান করেছে এবং প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে; ফলে পরিবারগুলোর ভেড়া পালনের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রাণীসম্পদ দপ্তর থেকে প্রত্যেকটি ভেড়াকে টিকা এবং কৃমিনাশক বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চর এলাকা ভেড়া পালনের জন্য উপযুক্ত তাই ভেড়া পালনের মাধ্যমে চরা লের মানুষ খুব তারাতারি স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।

সর্বশেষ: