মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

৭১টি লাল গোলাপে মোদিকে হাসিনার শুভেচ্ছা

৭১টি লাল গোলাপে মোদিকে হাসিনার শুভেচ্ছা

 

ডিজিটাল ই-কমার্স সেলপ্রধান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইভ্যালির গ্রাহকের পাওনা পরিশোধের দায়দায়িত্ব মন্ত্রণালয় নেবে না। লেনদেনের বিষয়টি শুধু গ্রাহক ও কোম্পানির বিষয়। তবে গ্রাহকের প্রতি মন্ত্রণালয়ের সহানুভূতি রয়েছে।’

 

আলোচিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও সিইও গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে, এই প্ল্যাটফর্মের বিপুলসংখ্যক গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনার কী হবে? গ্রাহকরা পণ্য ডেলিভারির জন্য যে আগাম অর্থ পরিশোধ করেছেন, তা কীভাবে তারা ফেরত পাবেন? যেসব মার্চেন্ট পণ্য ডেলিভারি দিয়েছে, তাদের পাওনারই-বা কী হবে?

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজিটাল ই-কমার্স পরিচালনসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহক ও মার্চেন্ট এবং অন্যান্য সেবা সংস্থার কাছে ইভ্যালির দেনা ৫৪৩ কোটি টাকা। অপরদিকে বৃহস্পতিবার র‌্যাবের হাতে আটকের পর শুক্রবার সংস্থাটির কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটির কাছে গ্রাহকের সার্বিক পাওনার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।

ইভ্যালির বর্তমান আর্থিক প্রতিবেদন চিত্র পর্যালোচনার পর দেখা যায়, এ দেনা পরিশোধের সক্ষমতা বা পাওনা পরিশোধে সমপরিমাণ নগদ অর্থ কিংবা সম্পত্তি কোনোটাই নেই ইভ্যালির হাতে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ইভ্যালির বর্তমান পরিচালন থেকে অর্জিত মুনাফা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের বিপুল পরিমাণ পাওনা পরিশোধ সম্ভব হবে বলে তারা মনে করেন না।

এ প্রসঙ্গে দেশে ডিজিটাল ই-কমার্স সেলপ্রধান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইভ্যালির গ্রাহকের পাওনা পরিশোধের দায়দায়িত্ব মন্ত্রণালয় নেবে না। লেনদেনের বিষয়টি শুধু গ্রাহক ও কোম্পানির বিষয়। তবে গ্রাহকের প্রতি মন্ত্রণালয়ের সহানুভূতি রয়েছে। সে জন্য মন্ত্রণালয় চেষ্টা করবে নিরপেক্ষ কোনো থার্ড পার্টি অডিটর প্রতিষ্ঠান দিয়ে কোম্পানিটির ওপর নিরীক্ষা চালানোর মাধ্যমে তাদের প্রকৃত আর্থিক চিত্র বের করে আনতে। এতে যদি আরও কিছু বাড়তি সম্পদ বা অর্থের হদিস মেলে, সেটি হবে গ্রাহকদের জন্য মঙ্গল, যা গ্রাহকদের পাওনা ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজে আসবে।

‘তবে থার্ড পার্টি অডিটর নিয়োগের প্রক্রিয়াটিও সরাসরি মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই। এর জন্য মন্ত্রণালয়কে আইনি দিক পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। আইনে সেটি অনুমোদন না করলে আদালতের অনুমতি নিয়ে করতে হবে। আমরা এর জন্য আদালতের অনুমতি নেয়ার চেষ্টা করব।’

এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ইভ্যালির বিষয়ে এখন আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। ইভ্যালির ব্যবসা চালু থাকবে কি না, থাকলে সেটি কোন প্রক্রিয়ায় হবে, আদালত জনস্বার্থে সেখানে কাস্টডিয়ান নিয়োগ দেবে, নাকি ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জামিন দিয়ে তাদের মাধ্যমেই কোম্পানি পরিচালনা করাবে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে গ্রাহকদের পাওনা কিংবা পণ্য ও অর্থ পরিশোধ করবে, সেটি নির্ধারণ করবে।’

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডিকে আইনের আওতায় নেয়ার মাধ্যমে ই-কমার্স খাতে বিদ্যমান একটা অনিশ্চয়তা বন্ধ করা হয়েছে। তবে এটাও ঠিক, এর মাধ্যমে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা অনিশ্চয়তার দিকে চলে গেছে।’

গ্রাহকের পাওনা ফেরতের অনিশ্চয়তা দূর করার উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইন আইনের মতো চলুক। তবে একই সঙ্গে গ্রাহকের স্বার্থে ইভ্যালির ব্যবসাটা চালু রাখা হোক। কারণ ইভ্যালি বন্ধ করে দেয়া কোনো সমাধান হতে পারে না। আস্থার কিছু ঘাটতি থাকলেও আমি মনে করি, দেশে ইভ্যালির একটা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রাহক সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা উদ্ধারের স্বার্থে সরকার থেকে যদি ইভ্যালিতে প্রশাসকের মতো কিছু বসায় অথবা একটি পরিচালনা কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে চালু রাখা হয় এবং তারা ডিজিটাল ই-কমার্স খাতে সম্প্রতি জারি করা এসওপি অনুযায়ী পরিচালনা করে, তাহলে ইভ্যালি রান করতে সক্ষম।

‘তখন এর থেকে যে মুনাফা হবে, তা দিয়ে আস্তে আস্তে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা পরিশোধ করা যাবে। যদিও এতে অনেক দিন সময় লাগবে। এতে হয়তো কিছু গ্রাহক তার পাওনা ফেরত না-ও পেতে পারে, কিন্তু অনেক গ্রাহক তার পাওনা ফিরে পাবে। তবে পুরো বিষয়টিই নির্ভর করছে আদালত ও সরকারের ওপর।’

ইভ্যালির গ্রাহকদের পাওনা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করেন শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘আজকের ডিল’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর। তিনি বলেন, ‘ওই টাকা আগেই হাওয়া হয়ে গেছে।’

ফেরত পাওয়ার উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন তদন্ত করে দেখা উচিত ইভ্যালির মালিকপক্ষ কোথাও টাকা সরিয়েছে কি না। যদি কোথাও কোনো গোপন সম্পদ থাকে বা টাকা গচ্ছিত রাখে, তা উদ্ধারের ব্যবস্থা নিতে হবে, যা পাওনাদারদের মাঝে বণ্টন করা যেতে পারে।’

ইলেকট্রনিক কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহাব উদ্দিন শিপন বলেন, ‘গ্রাহকরা পাওনা পাবে কি পাবে না, সে বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি। বিষয়টি এখন আদালতের হাতে। নিশ্চয়ই আদালত এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেবে।’

তবে তিনি ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরে বলেন, ‘র‌্যাবের ব্রিফিং থেকে শুনলাম ইভ্যালির এখন দেনার পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকা। এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেয়া হিসাবের দ্বিগুণ। শুনে শুধু আশ্চর্যই হয়েছি।’

শাহাব উদ্দিন শিপন বলেন, ‘এই বিপুল পরিমাণ দায়ই বলে দিচ্ছে গ্রাহকরা এর থেকে খু্ব বেশি রিটার্ন পাবে বলে মনে হয় না। কারণ দেশে শুধু ই-কমার্স কেন, এখনও এমন কোনো অর্গানিক ব্যবসা গড়ে ওঠেনি, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দৈনন্দিন ব্যবসা করে তার মুনাফা দিয়ে হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারবে। এটা অসম্ভব একটি বিষয়।’

দেনা ও গ্রাহকের সংখ্যা কত?

গত ২৭ আগস্ট ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক-১-এর কাছে লিখিত প্রতিবেদনে ইভ্যালির এমডি মো. রাসেল জানান, ১৫ জুলাই পর্যন্ত ইভ্যালির কাছে গ্রাহকদের মোট পাওনা ৩১০ কোটি ৯৯ লাখ ১৭ হাজার ৮০২ টাকা। ২ লাখ ৭ হাজার ৭৪১ গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির এই দেনা রয়েছে।

এর আগে প্রথম দফায় দেয়া সম্পদ ও দায় বিবরণীসংক্রান্ত পত্রে রাসেল জানান, ‘গত ১৫ জুলাই ২০২১ তারিখ পর্যন্ত গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম, সরবরাহকারীদের কাছে দেনা, ব্যবসায়িক ব্যয়সংক্রান্ত দেনাসহ অন্যান্য সব দেনা বাবদ ইভ্যালির মোট চলতি দায়ের পরিমাণ ৫৪২ কোটি ৯৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮২ টাকা।’

সবশেষ গত ২ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে ইভ্যালির কাছে মার্চেন্টদের পাওনা ২০৫ কোটি ৮৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩ টাকা বলে জানান রাসেল।

চিঠিতে সমুদয় পাওনা আগামী ৫ মাসে স্বাভাবিক ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে তার থেকে অর্জিত মুনাফা থেকে পরিশোধ করবেন বলে দাবি করেন তিনি।

দৈনিক বগুড়া