বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্ন ফাঁসের সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছর কারাদন্ড

প্রশ্ন ফাঁসের সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছর কারাদন্ড

প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত হলে বা করলে সর্বোচ্চ ১০ বছর ও সর্বনিম্ন তিন বছরের কারাদন্ডের বিধান রেখে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) আইনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিসভায়।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বৈঠকে 'জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১' এবং 'চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদ আইন, ২০২১'-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ই-কমার্সের নিবন্ধনের ওপর গুরুত্বারোপ এবং পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে রেজিস্টার্ড গেটওয়েতেই পেমেন্ট করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় জড়িতদের 'অবশ্যই ধরতে হবে' উলেস্নখ করে 'যত দ্রম্নত সম্ভব' তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব ডক্টর খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, 'সাম্প্রতিক সময় ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যত দ্রম্নত সম্ভব অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে বলেছেন।'

পাবলিক সার্ভিস কমিশন

(পিএসসি) আইন নিয়ে সচিব বলেন, ১৯৭৭ সালের একটি অধ্যাদেশ দিয়ে পিএসসি চলে আসছে। একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের জন্য এর খসড়া পেশ করা হয়েছে। আইনে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত হলে বা করলে সর্বোচ্চ ১০ বছর ও সর্বনিম্ন তিন বছরের কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাৎক্ষণিকভাবে এই সাজা দিতে পারবে- আইনে সেই ক্ষমতাও দেওয়া হচ্ছে।

'জাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব বলেন, জাকাত তহবিল গঠন করা হবে। তহবিলের অর্থ সরকারিভাবে সংগৃহীত হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত অর্থ যেকোনো তফসিলি ব্যাংকের জাকাত ফান্ডে জমা দিয়ে জাকাত আদায় করতে পারবেন। আর একটি বোর্ড থাকবে। ধর্মমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী এটার চেয়ারম্যান থাকবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'সুরা তাওবায় প্রিসাইসলি সাতটি ক্যাটাগরি করে দেওয়া হয়েছে, প্রত্যেক ব্যক্তি যে জাকাতযোগ্য, সেই সাত ক্যাটাগরির যেকোনো একজনকে জাকাত দিতে পারবেন। বিভিন্ন ইসলামিক দেশগুলোতে বোর্ড আছে। অনেকেরই হয়ত ব্যক্তিগতভাবে দেওয়ার সুযোগ থাকে না, সে হয়ত জাকাত ফান্ডে দিয়ে দিল। তখন জাকাত ফান্ড তার পক্ষে জাকাত আদায় করে দেবে।'

তিনি বলেন, 'এটা তো কোরআনেও পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, তোমার যখন সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা ওই পরিমাণ টাকা যদি এক বছর থাকে, তাহলে আড়াই শতাংশ জাকাত দিতে হবে। সেটা যদি ব্যক্তিগতভাবে দিল তো দিল, না হলে সরকারের ফান্ডে দিলে সেটাও দিতে পারবে।'

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'আপনি যখন হজে যাবেন, আপনি কিন্তু কোরবানি করতে যাবেন না। আপনি টাকা জমা দিয়ে দেবেন ব্যাংক একটা টাইম দিয়ে দেবে ১০ তারিখ এতটার সময় আপনার কোরবানি হয়ে যাবে। সে জন্য এই সিস্টেমটা পুরো পৃথিবীতেই আছে।'

আইনটিতে ১৪টি ধারা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'সরকারিভাবে জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ করা হবে এবং আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারিভাবে জাকাতদানে উদ্বুদ্ধকরণ, জাকাত সংগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন, জাকাতদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের জাকাতযোগ্য সম্পদের বিষয় খসড়া আইনে রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'জাকাত বোর্ডে সদস্য থাকবে ১০ জন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করে দেবে ইসলামি ফাউন্ডেশন বা ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে। কালেকশন ও ডিস্ট্রিবিউশনটা তারা করবেন। কাকে কাকে কীভাবে দেবে, এটা তারা ঠিক করবে। তাদের একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে, সেখান থেকে তারা সংগ্রহ করবে।'

এ ছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে ই-কমার্স নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে ই-কমার্স বন্ধ করা যাবে না উলেস্নখ করে সেগুলোর নিবন্ধনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'ই-কমার্স নিয়ে বেশকিছু আলোচনা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময় ই-কমার্সের যে বিষয়গুলো ঘটে গেছে, সে বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সভাপতিত্বে মিটিং করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা এক মাস সময় নিয়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন দেবেন।'

ই-কমার্স বন্ধ করা যাবে না উলেস্নখ করে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'আমরা তাদের সবাইকে রেজিস্ট্রেশন ও মনিটরিংয়ের আওতায় আনার ব্যবস্থা করে ফেলেছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে বেশকিছু দিন ধরে কাজ করছি। আশা করছি, দেড়-দুই মাসের মধ্যে ভালো একটা ডেভেলপমেন্ট আসবে।'

ই-কমার্সে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, 'এগুলো নিয়ে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটি দুটি মিটিং করে ফেলেছে। প্রিসাইজলি একটি সিদ্ধান্ত আসবে।'

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি জনগণকেও উদ্বুদ্ধ করতে হবে যে, আপনি কী জাতীয় প্রস্তাবে সাড়া দিচ্ছেন। আমার মোবাইলে অফার দিচ্ছে পাঁচ লাখ টাকার মোটরবাইক আড়াই লাখ টাকায় দেওয়া হবে। আমি শুনেই ঝাঁপিয়ে পড়ব এবং আড়াই লাখ টাকা জমা দিয়ে দেব? আমার নিজেরও তো একটা বিচার-বিবেচনা থাকা দরকার যে, পাঁচ লাখ টাকার জিনিস কীভাবে আমাকে আড়াই লাখ টাকায় দেবে। সুতরাং, জনগণকেও এটা একটু সচেতন করতে হবে।

দৈনিক বগুড়া