বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টিকার সনদ ছাড়া মার্কেটে প্রবেশ ট্রেন-বিমান-লঞ্চ ভ্রমণে না

টিকার সনদ ছাড়া মার্কেটে প্রবেশ ট্রেন-বিমান-লঞ্চ ভ্রমণে না

করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার সনদ ছাড়া হোটেল-রেস্টুরেন্টের মতো শপিংমলে প্রবেশ করা যাবে না। একই সঙ্গে ট্রেন, বিমান এবং লঞ্চেও চলাচল করা যাবে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা ছাড়া ১২ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারবে না বলেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠক এ সিদ্ধান্ত হয়। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওমিক্রন নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সভা হয়েছে। সেখানে যেই বিষয়টি পয়েন্ট আউট করা হয়েছে, সেটা হলো ভ্যাকসিনটা আরও জোরদার করতে হবে। বুস্টারটা আরও কীভাবে কমফোর্ট্যাবল ও বিস্তৃত করা যায় সেটা দেখতে হবে। তিনি বলেন, ওমিক্রনের বিষয়ে বলা হয়েছে, আমরা এখন থেকে রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, বিমান, ট্রেন ও লঞ্চে যারা উঠবে, তাদের একটা টাইম দিয়ে, ডাবল ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ যাতে না ওঠে। সেরকম একটা চিন্তা-ভাবনার দিকে যেতে হবে। রেস্টুরেন্ট, শপিংমলে প্রবেশ এবং প্লেন, ট্রেন ও লঞ্চে ওঠার ক্ষেত্রে ডাবল ভ্যাকসিনেশনের একটা ইমপোজিশন টিকার দুই ডোজ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ আসতেছে। রেস্টুরেন্টে সনদ যাচাই কীভাবে মনিটর করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মোবাইলে সফট কপি থাকবে কিংবা হার্ড কপি থাকবে। কোনো দেশে পুরো জনসংখ্যা কোনোভাবেই চেক করা সম্ভব নয়, স্যাম্পল হিসেবে করা হয়। ভিজিল্যান্স টিম থাকতে প্রত্যেক শহরে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক আছেন তারা চেক করবেন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেক করবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একটা সময় দিয়ে দিতে বলেছে। টেকনিক্যাল লোকজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা টাইম দিয়ে এটা করা হবে। ওমিক্রন ঠেকাতে গেলে স্ট্রিক্ট ভিউতে আপনাতে যেতে হবে। গতকাল দেখলাম আমেরিকায় এক মিলিয়ন আক্রান্ত হয়েছে। ভারতেও খুবই সিভিয়ার অবস্থা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা সেবা নিতে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করা অলরেডি সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। টেকনিক্যাল লোকজনের সঙ্গে দু-একদিনের মধ্যে পরামর্শ করে সময় দিয়ে ইনশাআল্লাহ আমরা অর্ডার করে দিচ্ছি। এছাড়া বাড়ির বাইরে কোনোক্রমেই মাস্ক ছাড়া যাওয়া যাবে না।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, অলরেডি আমরা বলে দিয়েছি, এখন থেকেই মোটিভেশন ও প্রোমোশনার কাজ করবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হবে। করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা ছাড়া ১২ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আগামীতে নির্দেশনা জারি করবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রথম ডোজ টিকা না নেওয়া শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে পারবে মর্মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে। টিকা তো এখন একেবারে গ্রাম পর্যন্ত অ্যাভেইলঅ্যাবল হয়ে গেছে। এজন্যই এটা ইম্পোজ করে দেওয়া হচ্ছে। টিকা দিয়ে স্কুলে যাওয়া নিরাপদ হবে, প্রমোশন ক্যাম্পেইনে সেটাই বলা হবে। প্রমোশন ক্যাম্পেইনের জন্য স্বাস্থ্য, পিআইডি, স্থানীয় সরকার, প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইমাম সাহেবরাও যাতে খুতবায় টিকার কথা বলেন, সেটাও ধর্ম মন্ত্রণালয়কেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, যে শিক্ষার্থীরা ভ্যাকসিন না নেবে, তারা স্কুল-কলেজে আসতে পারবে না। টিকা নেওয়ার জন্য মোটিভেশনও করতে বলা হয়েছে, ইম্পোজিশনও করতে বলা হয়েছে। উনারা (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলেনি। বিশ্ববিদ্যালয় তো আলাদা কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, টিকা নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি বা যে কোনো একটি পরিচয়পত্র নিয়ে গেলেই তারা ভ্যাকসিন পেয়ে যাবে। গত ৩ জানুয়ারির মিটিংয়েই শিক্ষা মন্ত্রণালয় টিকা নেওয়ার বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে জানিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তারা ইতোমধ্যে মৌখিক নির্দেশনাও দিয়ে দিয়েছে। সচিব বদলি হওয়ায় হয়তো লিখিত নির্দেশনা দিতে দেরি হচ্ছে। ১২ বছরের নিচের বয়সিরা এখনো আমাদের দেশে টিকা দেয়ার জন্য কাউন্টে আসেনি। আমেরিকাতে খুবই রেস্ট্রেক্টেড কিছু হয়েছে, বাকি কোথাও হয়নি।’ সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগম সীমিত রাখতে হবে জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি বাধ্যতামূলক করতে হবে। আমরা কথা বলছি, আমাদের টেকনিক্যাল লোকজনরা একমত হলে এমনও হতে পারে, তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রেস্ট্রিকশন দিয়ে দেবে, এত সংখ্যকের বেশি থাকতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘বুস্টার ডোজের বিষয়ে তাদের (স্বাস্থ্য বিভাগ) চিন্তা করতে বলা হয়েছে। ৬০ বছর পর্যন্ত থাকবে নাকি কমানো যায়, যেহেতু আমাদের সাফিসিয়েন্ট আছে। গণপরিবহনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যদি সংক্রমণ আরও বাড়ে, তাহলে হয়তো ৫০ শতাংশ (আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন) করা হবে। ওটা এখনো হয়নি (চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত)।

গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নিলে ভাড়া বাড়ানো হয়। মানুষের আয় তো বাড়ে না। এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা বিআরটিএ কে বলে দেবো, কোনো ভাড়া বাড়ানো যাবে না। তিনি বলেন, লকডাউন নিয়ে সভায় কোনো আলোচনা হয়নি।

দৈনিক বগুড়া