বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী

দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের অদম্য অগ্রগতি কেউ থামাতে পারবে না। কারণ এ দেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠেছে। এ মর্যাদা বজায় রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা আর কখনো কেউ থামিয়ে দিতে পারবে না, সেভাবেই বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

গতকাল সকালে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) ‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২১-২২’-এর গ্র্যাজুয়েশন প্রদান অনষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সের এ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চাই, ২০৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ আমরা উদ্যাপন করব। কাজেই আমাদের নবীন ট্রেনিংপ্রাপ্ত অফিসারদের কাছে আমার আবেদন- ’৪১ সালের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিক হিসেবে কাজ করতে হবে। সব সময় মাথা উঁচু করে চলতে হবে এবং দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে। খবর বাসস।শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা করতে পারে না।

বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বদরবারে মর্যাদা পেয়েছে। এ মর্যাদা ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, ঠিক ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের পর যে সম্মান আমরা আন্তর্জাতিকভাবে পেয়েছিলাম এবং ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যে সম্মান আমরা হারিয়েছিলাম, আজ আবার আমরা সেই সম্মান পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, একসময় বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশে অনেক নেতিবাচক কথা ছিল। এখনো কিছু কিছু লোক বাংলাদেশ সম্পর্কে বদনাম করতেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ফলে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা এবং দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আমরা যে দক্ষতা দেখিয়েছি তার ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশে^ আজ উজ্জ্বল হয়েছে। তিনি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, সবাই স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলবেন। নিজেকে ও নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখবেন।

ডিএসসিএসসি কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। এবার প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১৮ দেশের ৪৭ জন বিদেশি কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পুলিশের তিনজন কর্মকর্তাসহ মোট ২৫১ জন পিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ‘ডিএসসিএসসি’ এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর মোট ১২৮টি কোর্স পরিচালনা করেছে এবং ৫ হাজার ৬৮৬ জনকে ডিগ্রি দিয়েছে। ৪৩টি দেশের ১ হাজার ২৫৫ জন অফিসার এখান থেকে ডিগ্রি পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি।

অ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ১৯৯৬ সালে যখন সরকারে আসি তখনই ‘বিপসট’ প্রতিষ্ঠা করে দিই।সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি- ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’-এর আলোকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, আমরা এ নীতিমালার কারণে সমগ্র বিশ্বে আজ একটা সম্মানজনক অবস্থান সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছি। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সব সময়ই বিপন্ন মানবতার ডাকে সাড়া দিয়েছে। তিনি এ প্রসঙ্গে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান এবং তাদের মিয়ানমারের নিজভূমিতে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করব না কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে আমরা চুপ করে থাকব না। আমরা প্রতিরোধ করব বা প্রতিবাদ করব- সেভাবেই আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে গড়ে তুলেছি।

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যে কোনো জাতীয় প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকেন এবং সহযোগিতা করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসকালে তাঁদের সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার প্রসঙ্গও টেনে আনেন। তিনি বলেন, তারা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। আমরা আবারও সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে গৌরবের স্থানটি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদন্ডে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে একটি। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি এবং মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি।

যোগাযোগব্যবস্থাকে অত্যাধুনিক করে যাচ্ছি, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছি।শেখ হাসিনা কোর্স সম্পন্নকারীদের উদ্দেশে বলেন, আজ আপনাদের জীবনের একটি বিশেষ দিন। এ দিনটির জন্য দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় করতে হয়েছে। আপনারা সমরবিজ্ঞান এবং সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছেন। আমার বিশ্বাস, এসব প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন এবং যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে। তিনি সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সব সময় বিশ্বে মাথা উঁচু করে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে চলার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমাদের যা সম্পদ আছে তাই দিয়ে আমরা নিজেদের বিশ্বে মর্যাদাশীল করে গড়ে তুলেছি।

দৈনিক বগুড়া