পার্বত্য খাগড়াছড়ির পাহাড়ের গায়ে নজর কাড়ছে সোনালি রঙের ধান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন সবুজের বুক জুড়ে সোনালি ধানের হাসি। জুমের সোনালি পাকা ধানে ছেয়ে গেছে পাহাড়ের পর পাহাড়। সূর্যের মিষ্টি রোদে বাতাসে দুলছে পাকা ধানের শীষ।
এদিকে, জুমের ফসল ঘরে তুলতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন জুমিয়ারা। ভোর থেকে শুরু হয় কাটার কাজ। ধান কাটা শেষে জুমঘরেই তা মাড়াই করছেন। মাড়াই শেষে থুরংয়ে করে ধান নিয়ে বাড়ি ফিরছেন চাষিরা। মৌসুমের শেষ দিকে এমন ব্যস্ততা চোখে পড়ছে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন জনপদে।
জুমিয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর এপ্রিল মাসের শেষ দিকে শুরু হয় জুম চাষের প্রক্রিয়া। প্রথমেই পাহাড়ে আগুন দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করা হয়। তারপর জমি খনন করে বীজ বপন করা হয়। বীজ লাগানোর তিন থেকে চার মাস পরিচর্যার পর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু হয়। ধান কাটা চলে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত।
খাগড়াছড়ির গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, লক্ষীছড়ি, মহালছড়ি, দীঘিনালা, পানছড়ি ও রামগড় উপজেলায় বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজনের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস জুম চাষ। নিজেদের চাহিদা মেটানোর পর কিছু ফসল তারা বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অন্য ব্যয় মিটিয়ে থাকেন।
তবে জুম চাষে সার-বীজের পাশাপাশি সরকারি প্রণোদনা দাবি করেছেন পাহাড়ের জুমিয়ারা। তাদের মতে, এবছর বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন কম হবে। অন্যদিকে, জুম ধানের ক্ষেতে পোকার আক্রমণে ভালো ফলন না পাওয়ারও আশঙ্কা পাহাড়ের স্বল্প পুঁজির জুমিয়াদের। আবার অনেক জুম চাষি ভালো ফলন পাওয়ারও আশা করেছেন।
সবুজ পাহাড়ের ধান ছাড়াও জুমে হলুদ, মারফা, আদা, মরিচ, কচু, মিষ্টি কুমড়া, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ বিভিন্ন জাতের সবজির চাষাবাদ হয়ে থাকে। জুমে উৎপাদিত খাদ্য শস্য দিয়েই চলে তাদের সংসার। এমনটাই জানিয়েন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এসব জুমিয়ারা।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, জুমে উৎপাদিত ফসল এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। আদি পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক পদ্ধতিতে জুম চাষ করলে উৎপাদনের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়বে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।
চলতি বছর খাগড়াছড়িতে ১ হাজার ৭৮০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে জুম ধানের আবাদ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৯২ টন।
দৈনিক বগুড়া