মো. ইকবাল হোসেন মিয়া একজন মৎস্য চাষি। প্রায় সাত বছর ধরে মধুমতী নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করছেন। বর্তমানে তাঁর সাতটি খাঁচা রয়েছে। গত বছর মাছ বিক্রি করে আয় করেন প্রায় ৮০ হাজার টাকা। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের টিটা গ্রামে।
ইকবাল হোসেন জানান, খাঁচা তৈরিতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। মাছের পোনা ও খাবার মিলে প্রায় ২ লাখ টাকা ব্যয় হয়। মাত্র পাঁচ-ছয় মাস পরে এসব মাছ বিক্রি করেন ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায়।
ইকবাল হোসেন মিয়া জানান, বাঁশ ও জাল দিয়ে মাছ চাষের খাঁচা তৈরি করতে হয়। খাঁচা পানিতে ভাসিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হয় প্লাস্টিকের খালি ড্রাম। খাঁচায় তেলাপিয়া, পাঙাশ, কই, শিং, মাগুর, গ্রাসকার্প, রুই, চিংড়ি, সরপুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা যায়। পুকুর বা বিলের মাছ থেকে মিঠাপানির
মাছের স্বাদ বেশি। এ কারণে বাজারে এসব মাছের চাহিদাও ভালো। তিনি বলেন, বর্তমানে তাঁর বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়ার ১৩টি খাঁচা রয়েছে। খুব শিগগির খাঁচার সংখ্যা দিগুণ করবেন বলে জানান তিনি।
একই গ্রামের বেকার যুবক ফয়সাল মিয়া জানান, মধুমতী নদীর বাঁওড়ে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে দেখে ১০টি খাঁচা দিয়ে এক বছর ধরে মাছ চাষ করছেন তিনি। এতে খরচ কম, মুনাফা বেশি। ১০টি খাঁচায় তার সর্বমোট খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। গত বছর মাছ বিক্রি করে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় হয়েছে। মাছের স্বাদ ভালো হওয়ায় নিজেরাই খাঁচা থেকে প্রয়োজন মতো মাছ ধরে খেয়েছেন। সারা বছর বাজার থেকে তেমন মাছ কিনতে হয়নি।
তাঁদের দেখে নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন অনেকে। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় মৎস্যজীবী ও বেকার যুবকরা। এতে মধুমতী নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুমন কুমার বেদনাথ জানান, ইকবাল হোসেন ও ফয়সাল মিয়াকে দেখে মধুমতী নদীর বাঁওড়ে ভাসমান মাছ চাষে যুবকদের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, অল্প খরচে অধিক লাভের মুখ দেখা যায় ভাসমান মাছ চাষে। তা ছাড়া যুবকরা এখন এই বাঁওড়ে ছোট আকারে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে পাঁচ-ছয় মাসে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পারছে। নদীতে ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে মৎস্যজীবী ও বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী হতে পারছেন। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে বেকারদের আগ্রহী করতে হবে। তাহলে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের পথ তৈরি হবে।
দৈনিক বগুড়া