বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সমন্বিত খামারে সফল সোহান, বছরে লাভ ১৫ লাখ

সমন্বিত খামারে সফল সোহান, বছরে লাভ ১৫ লাখ

২০১৫ সালের শুরুর দিকে কৃষি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন এক তরুণ। তার স্বপ্ন এমন কিছু করবেন, যাতে নিজের পাশাপাশি অন্যেরও কর্মসংস্থান হবে। সেই ভাবনা থেকেই শুরু করেন সমন্বিত খামার গড়ে তোলার কাজ। বাবার দেওয়া ২ বিঘা জমি আর ৫০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা। লাভের মুখও দেখা শুরু করেন দ্বিতীয় বছর থেকে। তা-ই নয়, মাত্র ৭ বছরের মাথায় দেখেন অভাবনীয় সফলতা। এখন সব খরচ বাদ দিয়ে তিনি বছরে লাভ করছেন ১৩-১৫ লাখ টাকা।

তিনি চুয়াডাঙ্গার উদ্যমী তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল কাদির সোহান। সমন্বিত খামার করে শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি, পাশাপাশি সুযোগ করে দিয়েছেন কয়েকজনের কর্মসংস্থানের। তাকে দেখে কৃষি ক্ষেত্রে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক।

সময়টা ২০০৮ সাল। মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত আব্দুল কাদির সোহান মাঝেমধ্যে বাবার সঙ্গে যেতেন ফসলের মাঠে। মাঠের চমৎকার ফল-ফসলের বাগানে মুগ্ধ হয়ে সেদিনই চিন্তা করেন খামার গড়ার। পড়াশোনা শেষ না করে খামার গড়ার সিদ্ধান্তে সে সময় সাড়া মেলেনি পরিবারের। সেদিন কিছুটা আশাহত হলেও থেমে থাকেননি তিনি।

আব্দুল কাদির সোহান বলেন, ‘এসএসসি পাস করে কৃষির ওপরে ডিপ্লোমা শুরু করি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার এমএস জোহা ডিগ্রি কলেজে। ২০১৫ সালে কৃষি ডিপ্লোমা শেষে করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে ব্যাচেলর অব এগ্রিকালচার এডুকেশন (বিএজিএড) ডিগ্রি অর্জন করি। বাবার ইচ্ছে ছিল, আমি ভালো কোনো স্কুল বা কলেজে চাকরি করি। কিন্তু আমি তা না করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য বাবার কাছ থেকে ২ বিঘা জমি এবং ৫০ হাজার টাকা নিয়ে সমন্বিত খামার গড়ে তোলার কাজ শুরু করি।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম বছর ২ বিঘা জমিতে বারোমাসী কাটিমন আম, থাই সিডলেস লেবু এবং থাই পেয়ারা দিয়ে শুরু করি। প্রথম বছর লাভের মুখ দেখতে না পারলেও দ্বিতীয় বছর কিছু বর্ধিত জমি লিজ নিয়ে তা থেকে কিছুটা লাভ করতে সমর্থ হই। কিছুদিন পর ৩০ বিঘা অর্থাৎ ১০ একর জমি নিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করি। বর্তমানে আমার খামারে বারোমাসী কাটিমন আম, ডকমাই আম, বারি৪ আম, কিউ যাই, পালমার ব্যানানা, সূর্য ডিম, আলফানচু, চাকাপাতা, ব্রুনাইটিং, গৌরমতী, আর টু ই টু জাতের আম, চাইনিজ কমলা, দার্জিলিং কমলা, বারি মাল্টা-১, ২, ভিয়েতনামি বারোমাসী মাল্টা, ফিলিপাইনস ব্ল্যাক সুগারক্যান, বিভিন্ন প্রজাতির ফুলসহ সিজনাল শাক-সবজি ও দেশীয় ফুল-ফলের চাষ করি।’

সোহান আরও বলেন, ‘৯ বিঘা জমিতে আছে মাছ চাষ। করোনাকালে আমার ‘মনমিলা গার্ডেন অ্যান্ড নার্সারি’ নামক সমন্বিত খামারের উৎপাদন ও মুনাফার হার কিছুটা কম হয়। বর্তমান ২০২২ সালের এপ্রিলে ১ বছরের আয়-ব্যয় হিসাব করে আমার লাভের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ লাখ টাকার মতো। খামারে এখন ১০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এরমধ্যে ৬ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী। তাদের জন্য প্রতিমাসে দেড়লাখ টাকা ব্যয় হয়। আমার ভালোই লাগে, খামার থেকে ১০ জন মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হচ্ছে। আমিও বাবা-মা, স্ত্রী ও দু’কন্যা নিয়ে স্বচ্ছল জীবনযাপন করছি।’

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহান সমন্বিত খামার গড়ে নিজে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন; তেমনি বেশ কিছু নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। আমাদের অফিস থেকেও তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। তিনি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ফল, ফুলের চারা এনে চাষ করছেন। আবার খামার থেকে উৎপাদিত চারা বিক্রি করে সফলতা অর্জন করেছেন।’

দৈনিক বগুড়া