কম খরচে ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় কলা চাষে সফলতা পেয়েছেন কৃষক আনোয়ার হোসেন আনার। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের বাদে শোলাকিয়া গ্রামে কলা চাষে বছরে কমপক্ষে ৯ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এই কৃষকের। এই প্রথম চম্পা কলা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। বাগান থেকে প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা কিনে নিচ্ছেন কলা। কয়েক দিন পরে বিক্রি করতে পারবেন চারাও। এতে কলা চাষে আগ্রহ তৈরি হয়েছে এলাকার অন্য চাষিদের।
জানা গেছে, স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে ফিশারির সামনের পতিত জমিতে চম্পা কলার চারা সংগ্রহ করে চাষ করেন কৃষক আনোয়ার হোসেন আনার। দেড় একর জমিতে ১৬০০ চম্পা কলা গাছ রোপণ করেন। এতে খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকার মতো। বাগান থেকেই ব্যবসায়ীরা প্রতি ছড়া কলা কিনে নিচ্ছেন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। প্রথম বছরই বিক্রি হবে ১২ লাখ টাকা। এতে তার আয় হবে প্রায় ৯ লাখ টাকা।
কৃষক আনোয়ার হোসেন আনার বলেন, ‘স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাছিরুজ্জামান সুমনের পরামর্শে চম্পা কলার চাষ করেছি। যে কোনো ফসলের চেয়ে কলা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। এতে অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়। অন্য ফসলের চেয়ে কলার দামও বেশি। কলা বাগানে কীটনাশকমুক্ত কলা চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে এবং আকারও অনেক বড় হয়েছে। কলা বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে না। বাগান থেকেই বেপারিরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমবারই যে পরিমাণে ফলন হয়েছে, আশা করছি ৯ লাখ টাকা লাভ হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমার বড় একটি ফিশারি আছে। তাতে অনেক কলাপাতা লাগে। কলা বাগান থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ পাতা কাটা হয়, তা আমার ফিশারির মাছের খাদ্য হিসেবেও কাজে লাগে। এখানেও আমার লাভ হচ্ছে। এছাড়া কয়েকদিন পরে কলার চারাও বিক্রি করতে পারবো। তাতেও লাভ হবে।’
কলা বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন রুবেল মিয়া। তিনি বলেন, ‘এ বাগানের শুরু থেকে আমি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। প্রতিদিন আমার হাজিরা ৫০০ টাকা। এ আয় দিয়েই আমার সংসার চলে।’
কলা ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি ৩০ বছর ধরে কলার ব্যবসা করি। আনার ভাইয়ের বাগানের চম্পা কলা যে বড় হয়েছে, এত বড় ও পুষ্ট হতে আমি আগে দেখিনি। বাগান থেকে প্রতি কলার ছড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে কিনে নিচ্ছি। কলা পাকলে আমরা ছড়া প্রতি ১০০০ বা ১১০০ টাকা বিক্রি করতে পারবো।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাছিরুজ্জামান সুমন বলেন, ‘উপজেলায় এত বড় কলার বাগন আর নেই। এ ধরনের কলার চাষাবাদে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া হবে নতুন উদ্যোক্তাদের। গাছ লাগানো থেকে শুরু করে ১১ মাসের মধ্যে কলা কাটা যায়। বাগান দেখে এলাকার অনেক চাষি কলা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারা চারা নিতে প্রতিনিয়তই যোগাযোগ করছেন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাহিমা আক্তার ফাহিম বলেন, ‘নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৬০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা চাষ হয়েছে। কোনো রোগবালাই না দেখা দেওয়ায় চলতি মৌসুমে সদর উপজেলায় কলার বাম্পার ফলন হয়েছে।’
দৈনিক বগুড়া