• রোববার ০১ অক্টোবর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১৬ ১৪৩০

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

বাগান করে সফল ঠাকুরগাঁওয়ের ব্যাংক কর্মকর্তা শাজাহান

দৈনিক বগুড়া

প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২৩  

বিস্তৃর্ণ মাঠে আম্রপালি, সূর্যাপুরি, হিমসাগর, বানানা ম্যাংগোসহ বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি প্রজাতির আম, লিচু, সুপারি বাগান এবং পেঁপে, চিচিঙ্গা চাষ করেছেন। গাছ ও প্রকৃতিকে ভালোবেসে আম, লিচু, সুপারি, পেঁপেসহ বিভিন্ন ধরণের ফল ও সবজির বাগান করে সফল হয়েছেন রূপালী ব্যাংক ঠাকুরগাঁও শাখার অফিসার ও সদর উপজেলার ভেলাজান এলাকার শাজাহান।

একজন ব্যাংক কর্মকর্তা হয়েও বিভিন্ন ধরণের ফল ও সবজির বাগান করে এলাকার মানুষের মাঝে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে বেশ সাড়া ফেলেছেন। তাকে দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অনেকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রাম এলাকার বিস্তৃর্ণ মাঠে আম্রপালি, সূর্যাপুরি, হিমসাগর, বানানা ম্যাংগোসহ বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি প্রজাতির আম, লিচু, সুপারি বাগান এবং সবজি হিসেবে পেঁপে, চিচিঙ্গা চাষ করেছেন। সবমিলিয়ে তিনি ৫০ শতকের ১০ থেকে ১২ বিঘা জমিতে এসব বাগান করেছেন। 

এবার প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে লিচু তেমন সুবিধাজনক না হলেও তার বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার লিচু বিক্রি করেছেন তিনি। এছাড়াও আম বাগান থেকে এবার প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী বছর এসব বাগান থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন এই উদ্যোক্তা।

সদর উপজেলার ৭ নম্বর চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান মহাজন পাড়া গ্রামের বেলাল উদ্দিনের ছেলে শাজাহান। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি, হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে পাস করেন। স্কুলজীবন থেকেই তার গাছ ও প্রকৃতির প্রতি একটা অন্যরকম টান ও ভালোবাসা ছিল। তখন থেকেই একটা দুইটা করে গাছ রোপণ করতেন তিনি। পরে চাকরি জীবনে এসে বৃহৎ পরিসরে বাগান করেন। 

সচরাচর চাকরির পাশাপাশি এমন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারেন না অনেকে। ব্যাংকে কাজ করার পরেও বিভিন্ন বাগান করে সাড়া ফেলেছেন শাজাহান। তার দেখে এলাকার অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে বাগান করেছেন বলে ঢাকা মেইলকে বলেন মোস্তফা কামাল।

একই গ্রামের যুবক রেজু আহাম্মেদ রোহান বলেন, শাজাহান ভাই বিভিন্ন ধরণের ফলের বাগান করে সফল ও লাভবান হচ্ছেন। তার দেখে আমাদের এই দিকে অনেক যুবক বাগানে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

আনোয়ার হোসেন নামে আরেকজন বলেন, শাজাহানকে দেখে আসছি সে ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমী ও গাছ এবং প্রকৃতি প্রেমী। বতর্মানে সে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। ব্যাংকে সারাদিন পরিশ্রম করার পরেও সে ছুটির পরে আবার বাগানে পরিশ্রম করে। এতে যেমন ফলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে তেমনি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখছে শাজাহান। তার এমন কর্মকাণ্ড এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। আশা করি সে ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করতে পারবে।

বাগানে কাজ করা শ্রমিক আব্দুস সামাদ ঢাকা মেইলকে বলেন, মৌসুমের সময় তারা এসব বাগানে কাজ করে আয় করছেন অন্তত ১৫-২০টি পরিবার। এতে তাদের সংসারও ভালো চলে। এছাড়াও পুরো বছরেই বাগানে কাজ করে থাকেন তিনি।

ব্যাংক কর্মকর্তা ও সফল উদ্যোক্তা শাজাহান ঢাকা মেইলকে বলেন, ভালোলাগা থেকে ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার্থে এসব বাগান করা। যদিও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে এসব বাগান করেননি তিনি। কিন্তু এখন আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমি ব্যাংকের কাজ শেষ করে এসেই বাগানে সময় দেই। আর ছুটির দিনে সম্পূর্ণ সময় বাগানেই চলে যায় আমার। এবার লিচু বাগান থেকে লক্ষাধিক টাকার লিচু বিক্রি করেছি। খরা আবহাওয়া না থাকলে এর থেকেও বেশি টাকার লিচু বিক্রি করতে পারতাম। এছাড়াও এবার আম বাগান থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকার আম বিক্রি হবে বলে আশা করছি। আগামী বছর এসব বাগান থেকে কমপক্ষে ৫ লক্ষাদিক টাকার ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেছেন তিনি।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আলমগীর কবির ঢাকা মেইলকে বলেন, কৃষি বাণিজ্যিকীকরণসহ তারুণ্যের ছোঁয়ার উদাহরণ হচ্ছে এই ব্যাংক কর্মকর্তা ও সফল উদ্যোক্তা শাজাহান। সরকারি চাকরির পাশাপাশি এমন সফল কৃষি উদ্যোক্তা অন্যান্য চাষিদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বলে মনে করেন তিনি। কৃষির সঙ্গে সম্পৃক হওয়ায় তার সফলতাও কামনা করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

দৈনিক বগুড়া
দৈনিক বগুড়া