• রোববার ০১ অক্টোবর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১৬ ১৪৩০

  • || ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

কেমিক্যাল মুক্ত ফল চাষ করে স্কুল শিক্ষকের দৃষ্টান্ত

দৈনিক বগুড়া

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০২৩  

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউপিতে কেমিক্যালমুক্ত ফল চাষ করে সারা দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্কুলশিক্ষক শামছুল আলম।  দাখিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও ঘাটাইল এস.ই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ক শিক্ষক শামছুল আলম তার নিজ গ্রাম রসুলপুরে সাড়ে ৭ একর জমির ওপর দেশি-বিদেশি ১১৯ প্রজাতির ফলদ গাছ লাগিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন।

পেশায় কৃষি শিক্ষক হওয়ার সুবাদে কৃষি কাজের প্রতি রয়েছে তার সীমাহীন আগ্রহ ও অদম্য চেষ্টা।

৯ বছর ধরে পাহাড়ি মাটিতে কেমিক্যালমুক্ত মাল্টা, লটকন, সৌদি খেজুর, মালয়েশিয়ার ডোরিয়ান, ফোর কেজি আম, ড্রাগন, রামভুটান কমলা, বারি-৪ মালটা, বাতাবি লেবু, আতা, আমড়া, জাম, বারোমাসি কাঁঠাল, চায়না-৩ লিচু, আপেল, ডালিম, তাল, লেবু, কলা, জামরুল, শরিফা, পেয়ারা, আতা, ডালিম, কামরাঙা, জলপাই, নারিকেল, মালবেরি, লেবু, পেঁপে, কদবেল, কালফল, বেল, বিলম্বি, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, মোসম্বি, ছাগলনাদা, তিতি জাম, লুকলুকি, তীনফল, কালো আঙ্গুর, আপেল, নাসপাতি, এগফ্রুড, দুরিয়ান, অ্যাভোকাডো ম্যাংগো স্টিন, কফি, মিরাক্কেল, জাপাটিকাবা, থাই বাতাবিলেবু, চায়না কমলা, থাই পেয়ারা, লকেট, সুদানী সরিফা, আলু বোখারা, প্লামফল, পামওয়েল, বিলেতি গাব, সাকরা, ব্রুনাই কিং আম (কেজিয়াম), আমলকী, চালতা, কাঠলিচু, গাব, পিচফল, জামানফল, চেরিফল, হেমফল, কাইফল, মিষ্টিগাব, প্লামফল, ছবেদা, অরবরই, আলো বোখড়া, আনারস, সৌদি খেজুর, অ্যানোনিয়া, সাতকরা, কিং আম, ব্যানানা ম্যাংগো, কিউজাই আম, অ্যামেরিকান সুন্দরী আম, কাঁঠাল, আনারস, আমলকী, জামরুল, শরিফা, করমচা, কাউফল, হেমফল ও লুকলুকিসহ ১১৯ প্রজাতির মিশ্র ফল এবং মশলা জাতীয় কালো এলাচ, তেজপাতা, পোলাওপাতা চাষ করছেন।

ঔষধি গাছ- কালোমেঘ, তুলসি, শতমুলি, ধুতুরা, গ্যাস্টিক গাছ চাষ করে কৃষি সেক্টরে আমূল পরিবর্তন এনে এ দেশের কৃষকের মনে আশা জাগিয়েছেন। তার এই কর্মযজ্ঞ দেখে অনেক কৃষক বাগান করার জন্য আগ্রহ পোষণ করেছেন।

শামছুল আলম কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষক হওয়ায় তার নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকতর শিক্ষার পাশাপাশি কৃষি বিষয়ের ওপরে হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রথমে শখের বসে ফলের বাগান করেন। এ বাগান করার সুবাধেই মনে প্রবল আগ্রহ দেখা দেয় বাণিজ্যিকভাবে কেমিক্যাল মুক্ত ফল চাষ করার।

পরবর্তীতে উপজেলা ও জেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সাড়ে ৭ একর জায়গায় ওপর ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নিজে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গড়ে তোলেন দেশি-বিদেশি ১১৯ প্রজাতির ফলদ বৃক্ষের বিশাল বাগান।

এ ছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনায়ও রয়েছে নানা প্রজাতির ফল ও ফুলের গাছ। বর্তমানে প্রায় সব গাছেই ফল আসা শুরু হয়েছে। এ বছর তিনি বাণিজ্যিকভাবেও ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন।

সরকারিভাবে সাহায্য ও সহযোগীতা পেলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কেমিক্যাল মুক্ত ফল চাষের ব্যাপক বিস্তার ঘটাতে পারবেন বলে মনে করেন স্কুল শিক্ষক শামছুল আলম। তার বাগানের সাড়ে ৭ একর জমিতে ৬৮ প্রজাতির বিদেশি ও ৫১ প্রজাতির ফলদ বৃক্ষ রয়েছে। সরেজমিন গেলে শামছুল আলম বাগান ঘুরে প্রতিটি প্রজাতির ফলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন ও খোলামেলা কথা বলেন।

তিনি বলেন, সিলেট শহরের মোহাম্মদ মকন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ছিলাম।  পরে অনেক চেষ্টা করে বদলি হয়ে ঘাটাইলে আসি। এখানে এসেই পুরোদমে বাগানের পরিচর্যায় মনোনিবেশ করি। বর্তমানে সফলতার মুখ দেখছি। প্রতিদিন অনেক লোকজন বাগান দেখতে আসেন। আমি চাই আমার দেশের মানুষ ভেজালমুক্ত, বিষমুক্ত কেমিক্যালমুক্ত ফলমূল ও শাক-সবজি পাক যাতে বিদেশি ফলমূলের ওপর নির্ভরশীল না হতে হয়। আমার মূল উদ্দেশ্য ও আন্দোলনই হচ্ছে ভেজালমুক্ত কেমিক্যালমুক্ত ফল চাষ করা।

ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিসার দিলশাদ জাহান বলেন, শামছুল আলমকে বিভিন্নভাবে সাহায্য, সহযোগিতা-পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। যার কারণে তিনি উৎসাহিত হয়ে কেমিক্যালমুক্ত ১১৯ প্রজাতির ফল চাষাবাদ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে তিনি আজ সফল হয়েছেন।

আমার জানা মতে, এটিই সকল জাত ও প্রজাতীর ব্যক্তি মালিকানা সবচেয়ে বড় বাগান। আশা করি শিক্ষক শামছুল আলমের এই বাগান গোটা দেশের মানুষের কাছে একটা দৃষ্ঠান্ত হয়ে থাকবে।

দৈনিক বগুড়া
দৈনিক বগুড়া