শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

৩ ডিসেম্বর ১৯৭১: নোয়াখালীর দখল নেয় মুক্তিযোদ্ধারা

৩ ডিসেম্বর ১৯৭১: নোয়াখালীর দখল নেয় মুক্তিযোদ্ধারা

সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত অধ্যায়ে প্রবেশ করে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর। এ দিন পাকিস্তান ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলা শুরু করার পর ভারত ও বাংলাদেশ মিলে পাল্টা বিমান হামলা পরিচালনা করা হয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ফলে সর্বাত্মক রূপ লাভ করে মুক্তিযুদ্ধ।

৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর দিনটি ছিল শুক্রবার। এ দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কোলকাতার ব্রিগেড প্যারেড ময়দানে বিশাল জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় ভারতের বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে পাকিস্তানের বিমান হামলা শুরু হয়। অবিলম্বে তিনি দিল্লি ফিরে যান। ভারত জুড়ে জারি হয় জরুরি অবস্থা। ঘোষিত হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড।

পাকিস্তানের উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারতের মধ্যকার যুদ্ধ বলে চালিয়ে দেওয়া। তবে তৎকালীন পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন জানায়, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে যেকোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তারা ভেটো দেবে।

ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী এবং বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর আক্রমণে কোণঠাসা হতে থাকে হানাদাররা। ৩ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে বরগুনা শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বরগুনার বিভিন্ন জায়গায় পাক হানাদার বাহিনী পৈশাচিক নারী নির্যাতন ও গণহত্যা চালায়।

এ দিন মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালীর মাইজদি, সোনাইমুড়ি, কুমিল্লার মিয়াবাজার, দখলে নেয়। বিজয়ের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যান বাঙালিরা।

বৈশ্বিক ঘটনাবলি

ভারতে বিমান হামলার মাধ্যমে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু করার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাতে বেতার ভাষণে বলেন, এই যুদ্ধ বাংলাদেশের এবং একই সঙ্গে ভারতের। ভারতবাসীকে তিনি দীর্ঘ কৃচ্ছ্র ও আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বের কাছে তিনি একটি জনগোষ্ঠীর উচ্ছেদ বন্ধ করার সমাধান চেয়েছিলেন। এ জনগোষ্ঠীর একমাত্র অপরাধ ছিল গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটদান। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শান্তি চাই, কিন্তু স্বাধীনতা ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের অর্লি বিমানবন্দরে ৩ ডিসেম্বর সকালে জ্যঁ ক্যুয়ে নামে এক ফরাসি যুবক পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করেন। ‘সিটি অব কুমিল্লা’ নামের বোয়িং-৭২০ বিমানটি ৩ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে যাত্রা করে। প্যারিস, রোম ও কায়রো হয়ে এটির করাচি যাওয়ার কথা ছিল।

প্যারিস থেকে এটিতে পাঁচজন যাত্রী ওঠেন। নিরাপত্তাব্যূহ পেরিয়ে তাদের সঙ্গে ২৮ বছর বয়সী যুবক জ্যঁ ক্যুয়েও বিমানটিতে উঠে বসেন। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে পাইলট বিমান চালু করতেই জ্যঁ ক্যুয়ে পিস্তল বের করে তাকে ইঞ্জিন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বলেন, নির্দেশ না মানলে বোমা দিয়ে বিমান উড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর তিনি বাংলাদেশের যুদ্ধরত ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের জন্য বিমানটিতে ২০ টন ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী তুলে দেওয়ার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

বিমানবন্দরে দুটি ওষুধ ভর্তি গাড়ি হাজির হয়। চারজন পুলিশ গাড়ির স্বেচ্ছাসেবকের পোশাকে বিমানে ঢুকে রাত আটটায় জ্যঁ ক্যুয়েকে আটক করেন। ফরাসি লেখক আঁদ্রে মালরোর বক্তব্যে অনুপ্রাণিত জ্যঁ ক্যুয়ে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার উপায় খুঁজতে গিয়ে জুন মাসে বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন।

 

সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ