বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এক সপ্তাহে দু`বার সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ম্যাগডালেনা

এক সপ্তাহে দু`বার সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ম্যাগডালেনা

টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির জের ধরে গত সপ্তাহে দায়িত্ব গ্রহণের সাত ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। তবে, সোমবার নতুন করে পার্লামেন্টে ভোট হলে তাতে আবারও সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা অ্যান্ডারসন অল্প ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেন।

সুইডেনের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন, সম্প্রতি নির্বাচিত হওয়ার প্রথম দিনেই পদত্যাগের পর আবারও ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন।

টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির জের ধরে গত সপ্তাহে দায়িত্ব গ্রহণের সাত ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। সোমবার নতুন করে পার্লামেন্টে ভোট হলে তাতে আবারও সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা অ্যান্ডারসন অল্প ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেন।

আগামী বছর সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত একক দলীয় সরকারের নেতৃত্ব দিতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে, এ নিয়ে তার জোট সরকার ভেঙ্গে গেলে শেষ মুহূর্তে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে অ্যান্ডারসন সুইডেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, পদত্যাগ করেন এবং দ্বিতীয় ভোটের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসেন। 
কেন এসব ঘটনা ঘটছে এবং পরবর্তীতে কী ঘটতে পারে, এসব প্রশ্ন সুইডেনের বর্তমান আট-দলীয় জোট বিভক্ত রাজনীতিকে জটিল করে তুলেছে। 

কেন সুইডেনে নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজন?

২০১৪ সাল থেকে 'সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট-গ্রিন' জোট সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন স্টেফান লোফভেন। তবে তার অবসর গ্রহণের কারণে গত বুধবার পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য ভোটভুটি অনুষ্ঠিত হয়।

তার দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস, নভেম্বরের শুরুতে এক সম্মেলনে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসনকে পার্টির নেতা নির্বাচিত করে। কিন্তু সুইডেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর আসনে অ্যান্ডারসনকে বসতে সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

কী ছিল প্রথম ভোটের ফলাফল? 

সুইডেনের সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপিদের ভোট না পড়ে, তাহলেই তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে পারবেন। অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট পেতে হবে না, বরং সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট প্রার্থীর বিরুদ্ধে না পড়লেই হবে। মূলত এ কারণেই ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়ার সুযোগ পেয়েছেন।

সুইডেনের পার্লামেন্ট রিকসড্যাগের ৩৪৯ সদস্যের মধ্যে ১৭৪ জন ভোট দিয়েছেন অ্যান্ডারসনের বিপক্ষে। তবে ১১৭টি ভোট তার পক্ষে যাওয়ায় ও ৫৭ জন ভোটদানে বিরত থাকায় বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। 

এখন সুইডেনের ক্ষমতায় কে? 

সুইডেনের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ এক জটিল প্রশ্ন।

অনেক সংবাদিককেই প্রশ্ন করতে দেখা গেছে, "মাফ করবেন... তবে এই মুহূর্তে সুইডেনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কে?" 

এমন প্রশ্নের উত্তরে ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন ব্যাখ্যা করেছেন, তিনি মূলত নেতৃত্ব দেওয়ার কাজটি এখনও শুরু করেননি। সুতরাং, এই প্রশ্নের উত্তর হল,  স্টেফান লফভেনের নেতৃত্বে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে।

এ ধরনের বিশৃঙ্খলা কি অস্বাভাবিক?

রাজনীতিবিদদের মতে এটি অবশ্যই অস্বাভাবিক। এতটাই অস্বাভাবিক যে সুডেনের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অ্যান্ডারসনের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার দিনটিকে ব্যাঙ্গ করে 'সুপার ওয়েন্সডে' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। 

অ্যান্ডারসনের পদত্যাগের দিনটি সুইডেনের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে নাটকীয় ও ঘটনাবহুল একটি দিন।

নর্ডিক দেশ সুইডেনে সংসদীয় স্থিতিশীলতা ও কো-অপারেটিভ কোয়ালিশন রাজনীতির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যেখানে গত শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় ধরে আধিপত্য রয়েছে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের।

স্টকহোম ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড্রুড ডলরুপ বলেন, "স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশেগুলোয় সংখ্যালঘু সরকার খুবই সাধারণ। তবে, এই মুহূর্তে সুইডিশ পার্লামেন্টের পরিবেশ... খুবই প্রতিকূল এবং কোনো দল সত্যিই হার মানতে রাজি নয়।"

তিনি আরও বলেন, "সুইডেনের জন্য এটি খুব ভাল একটি দিন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এটা ছিল খুবই বিশৃঙ্খল ও অপ্রত্যাশিত।"

কীভাবে আবারও পদে ফিরে এলেন অ্যান্ডারসন?

সুইডেনের জাতীয় সংসদের স্পিকার সোমবারের মধ্যে দেশটির রাজনীতিবিদদের একদলীয় সরকারের প্রধান হিসেবে ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসনকে অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যানের আরও একটি সুযোগ দিয়েছিলেন। 

কিন্তু রাজনীতিবিদদের কেউই তাদের আগের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। পাশাপাশি বিরোধী দলের কারোরই বিকল্প সরকার প্রস্তাব করার জন্য যথেষ্ট সমর্থন ছিল না। তাই যথারীতি সোমবার আবারও অ্যান্ডারসনই বিজয়ী হন।

এর মাধ্যমে তার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টি প্রথমবারের মতো ১৫ বছরের জন্য এককভাবে দেশ শাসন করতে চলেছে।

৩০ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে সুইডেনের স্টকহোমে সুইডিশ পার্লামেন্ট রিকসড্যাগে সরকারী ঘোষণার পর, প্রধানমন্ত্রী ম্যাগডালেনা তার নতুন মন্ত্রীসভাকে এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেছেন।

কে এই ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন?

৫৪ বছর বয়সী ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন কর্মজীবনে একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। একজন সরাসরি বক্তা ও কৌশলী আলোচক হিসেবে তার অসামান্য খ্যাতি রয়েছে।

২০১৪ সাল থেকে তিনি স্টেফান লফভেন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। 

এমপি হওয়ার আগে তিনি ছিলেন একজন জুনিয়র সাঁতারু চ্যাম্পিয়ন। এছাড়া, রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে ও সুইডিশ ট্যাক্স এজেন্সিতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভূমিকাও পালন করেছেন অ্যান্ডারসন।

তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও স্টকহোম স্কুল অফ ইকোনমিকস থেকে পড়াশোনা করেছেন।

কী হতে চলেছে এরপর?

জাতীয়তাবাদী সুইডেন ডেমোক্র্যাট সহ তিনটি বিরোধী ডানপন্থী দলের বাজেট অনুসরণ করতে হবে অ্যান্ডারসনকে। একদলীয় সংখ্যালঘু সরকারের প্রধান হিসেবে ভবিষ্যতে যেকোনো নীতির নির্ধারণ ও এগিয়ে যাওয়া তার সামনে বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

যেহেতু সুইডেনে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছর সেপ্টেম্বরে, তাই জনসাধারণের কাছে নিজের সক্ষমতা প্রমাণের জন্য তার হাতে ৯ মাসের বেশি সময় রয়েছে।

সমীক্ষা বলছে, সুইডেনের অন্যান্য দলের নেতাদের তুলনায় ভোটাররা তার প্রতি বেশি আস্থা রাখেন। কিন্তু মিডিয়াতে তার প্রোফাইল এখনও পর্যন্ত তার দলের জন্য অতিরিক্ত সমর্থন জোগাতে পারেনি। তবে, পরবর্তী নির্বাচনে কে জয়ী হবেন তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এখনও তেমন শক্তিশালী অনুমান দিতে পারেননি।  

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডলরুপ বলেন, "আগামী নির্বাচনে কে জিতবেন, আমি অনুমান করতে পারছি না।"

দৈনিক বগুড়া