বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়গুলো শক্তিশালী হচ্ছে

যে কারণে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়গুলো শক্তিশালী হচ্ছে

বঙ্গোপসাগর ও আরবসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হঠাৎ কেন এত শক্তিশালী হচ্ছে, কেনই বা এই দুই সাগরের সৃষ্ট ঝড়ের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাচ্ছে? বিজ্ঞানীা বলছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। মূলত সে কারণেই ভারত মহাসাগরের চরিত্র বদলাচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে এই দুই সাগরের ওপর।

‘চেঞ্জিং স্টেটাস অফ ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস ওভার দ্য নর্থ ইন্ডিয়ান ওশন’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, ১৯৮২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রাবল্য ও সেগুলোর আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, ২০০১ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার বঙ্গোপসাগরে ৮ শতাংশ কমেছে।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজির আবহাওয়া বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথু কোল বলছেন, বর্তমানে যেসব ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে, সেগুলো অনেকদিন ধরে শক্তি সঞ্চয় করে রাখছে। একটি উদাহরণ হিসেবে আম্ফানের কথা বলা যেতে পারে। স্থলভাগে বিপুল শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়েছিল সেটি। যার ফলে ধ্বসংলীলাও হয়েছে অনেক। সমুদ্রের উপরিতল যত গরম হবে এবং তার সঙ্গে যদি হাওয়া অনুকূল হয়, ঘূর্ণিঝড় তত বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে পারে ও সেই শক্তি অনেক দিন ধরে রাখতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে সেটি। বিপুল শক্তিতে ঘণ্টায় ১৭৫ কিলোমিটার বেগে মোখার স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দ্য ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) বাংলাদেশ এবং মায়ানমারকে ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে যে, এই ঝড়ের গতি ভয়ানক থেকে আরও ভয়ানক হবে। তার জেরে জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ফলে নিচু এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

ভারতের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৫০-এর আগে এবং ১৯৫০-এর পরে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ৯৪ থেকে ১৪০ হয়েছে। অর্থাৎ, এই সময়ের মধ্যে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের হার ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে আরব সাগর অঞ্চলে ওই সময়ের মধ্যে ঝড়ের সংখ্যা ২৯ থেকে বেড়ে ৪৪ হয়েছে। অর্থাৎ ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) এক বিজ্ঞানী এমএম আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পদ্ধতিতে কোনও বদল আসেনি। আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের উপরিতলের উষ্ণতা বাড়ছে। এর সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে সমুদ্রের তাপ ধরে রাখার মাত্রা। ফলে সাম্প্রতিক অতীতে ঘূর্ণিঝড় দ্রুত গতিতে শক্তি বৃদ্ধি করছে।

বিশ্বে যত পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হয়, তার ৯০ শতাংশ যায় সমুদ্রগর্ভে। এর ফলে বৃদ্ধি পায় সমুদ্রের তাপমাত্রা। ২০২২ সালে সমুদ্রের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। এমনটাই বলছে ডব্লিউএমওর ‘স্টেট অফ দ্য গ্লোবাল ক্লাইমেট’-এর রিপোর্ট।

দৈনিক বগুড়া