হাতে ছেলের ছবি। সারি করে রাখা মৃতদেহগুলোর ওপর ঝুঁকে ২২ বছর বয়সী সন্তানকে খোঁজার চেষ্টা করছিলেন এক দম্পতি। সাদা কাপড়ে আদ্যোপান্ত ঢাকা মরদেহের ভিড়ে নিজের সন্তানকে চিনে নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। একটি মরদেহের কাছে এসে কান্না চেপে রাখা দু’জোড়া চোখ হঠাৎই আটকে গেল।
সাদা কাপড়ের ফাঁক দিকে গলার লকেটটা দেখতে পেয়েছিলেন ওই দম্পতি। ক্ষতবিক্ষত গলায় ঝুলে থাকা ওই লকেটই চিনিয়ে দিয়েছিল তাদের ছেলেকে। এবার কান্না চেপে রাখতে পারলেন না তারা। ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে যে কান্না চেপে রেখেছিলেন, মৃতদেহের সারিতে তাকে খুঁজে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন এই অসহায় বাবা-মা। সম্প্রতি ভারতে এক ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে বাহানগা হাই স্কুল। ওই স্কুলকে অস্থায়ী মর্গ বানানো হয়েছে। সেখানে মরদেহ থেকে স্বজনদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। ওই অস্থায়ী মর্গের দায়িত্বে আছেন অরবিন্দ আগরওয়াল নামের এক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, যে মৃতদেহগুলো এখানে আনা হচ্ছে, সেগুলোর খুব খারাপ অবস্থা। তার মধ্যে গরমে মরদেহ আরও বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। তাই এই অবস্থায় মৃতদেহ শনাক্ত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগরওয়ালের পাশেই ল্যাপটপ নিয়ে বসে কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবক সিদ্ধার্থ জেনা। কত মরদেহ উদ্ধার হলো তা নথিভুক্ত করছেন তিনি।
একের পর এক মরদেহে ভরে উঠছিল স্কুলের বারান্দা। স্কুলের চারপাশের বাতাসে পচা মাংসের গন্ধে ভরে উঠেছে। যারা ছবি দেখে স্বজনদের শনাক্ত করছেন তাদের হাতে একটি করে চিরকুট ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই চিরকুটের মাধ্যমেই মৃত ব্যক্তিকে দেখার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
মরদেহ শনাক্ত হওয়ার সেগুলো স্বজনদের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা রণজিৎ নায়েক। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ১৭৯টি মরদেহ এসেছে। কিন্তু মাত্র ৪৫ জনকে শনাক্ত করা গেছে। সাদা কাপড়ে ঢাকা যে মরদেহগুলো শনাক্ত হয়েছে সেগুলোতে ‘শনাক্ত’ এবং যেগুলো শনাক্ত হয়নি সেগুলোতে ‘অশনাক্ত’ ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
নায়েক বলেন, এমনও মরদেহ এসেছে যেখানে শুধু একটি অঙ্গ রয়েছে। তিনি আরও জানান, কোন মরদেহের মুখ পুরো জ্বলে গেছে, কোনটির মাথা থেঁতলানো বা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, এগুলো শনাক্ত করাও অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
স্বজনরা যেন এসব মরদেহ শনাক্ত করতে পারেন সেজন্য শনিবার রাত থেকেই মরদেহগুলো সংরক্ষণের জন্য একটি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। তারপর সেখান থেকে শহরের মর্গে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উড়িষ্যার বালেশ্বরের ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। বালেশ্বেরের বাহানগা স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। ২১টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে বহু মানুষ প্রাণ হারায়। শনিবার সন্ধ্যায় রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই দুর্ঘটনায় ২৮৮ জন নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা আটশোরও বেশি।
দৈনিক বগুড়া