শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘প্রতিবন্ধী নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’

‘প্রতিবন্ধী নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী নারীদের ৯৬ শতাংশই মানসিক, শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে ৭৮ শতাংশ নারী ও মেয়ে শিশু নির্যাতনের শিকার হয় শুধু বাধা দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত হওয়ার কারণে। আর মাত্র ১ শতাংশেরও কম প্রতিবন্ধী মেয়ে শিশু স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়। 
প্রতিবন্ধী নারীদের নিয়ে কাজ করা ‘ওমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের’ (ডব্লিউডিডিএফ) পক্ষ থেকে শনিবার বগুড়ায় এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। ‘প্রতিবন্ধী নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক দুু’দিন ব্যাপী আলোচনা সভার প্রথম দিন শনিবার প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিয়িার ২০ সাংবাদিক অংশ নেন। 

আলোচনা সভায় প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি সহিংতার পেছনে দরিদ্রতাসহ ১১টি কারণ চিহ্নিত করা হয়। বলা হয়, দেশের ৯৯ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারী দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। আর নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি পারিবারিক, প্রশাসনিক এবং সামাজিক বাধা ও বৈষম্য তীব্রভাবে লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি আইনজীবী,  আদালত ভবন এবং আইনী প্রক্রিয়ায়ও প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য সহনীয় ও উপযোগী নয়।


শনিবার দুপুরে শহরের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সালাহউদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন ডব্লিউডিডিএফের সভাপতি শিরিন আক্তার। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি পাওয়ার পেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়ে শিশুদের জীবন-মান, তাদের প্রতি সহিংসতার পরিসংখ্যান, কেন তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এবং প্রতিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। 


আলোচনা সভায় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী। ২০১১ সালের জুন মাসে করা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ। যার অর্ধেক হলো নারী। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ বলছে দেশে প্রতিবন্ধী নারীর সংখ্যা ৮২ লাখ। 

বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী নারীদের জীবন-মান সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে সংস্থাটি বলেছে,  যেসব কারণে প্রতিবন্ধী নারীরা নির্যাতনের শিকার হয় তার অন্যতম হলো দারিদ্রতা। আরও যেসব কারণ প্রতিবন্ধী নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সেগুলো হলো- কুসংস্কার, লৈঙ্গিক ও সামাজিক বৈষম্য, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে আইনী অধিকার সম্পর্কে অল্প জ্ঞান, বিলম্বিত বিচার, মাদক গ্রহণ, পরকীয়া, বহুবিবাহ, যৌতুক প্রথা, যৌন কাজে অসম্মতি বা বাধা প্রদান এবং কন্যা শিশুর জন্মদান।


আলোচনা সভায় জানানো হয়, প্রতিবন্ধী নারীদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি ধর্ষণের মত যৌন ও মানকি নির্যাতনও চালানো হয়। নির্যাতিত প্রতিবন্ধী নারীদের ১৮ শতাংশ আবার বার বার নির্যাতনের শিকার হন।


আলোচনা সভায় জানানো হয়, প্রতিবন্ধী নারীদের প্রতি সহিংসতা দূর করতে ইউনাইটেড নেশন ট্রাস্ট ফান্ডের সহায়তায় ডবিøউডিডিএফ বগুড়া জেলার ৫টি উপজেলার মোট ২ হাজার অনগ্রসর ও অতি দরিদ্র প্রতিবন্ধী নারী ও কিশোরীদের কল্যাণে কাজ করছে।  আলোচনা সভায় মতামত দিতে গিয়ে সাংবাদিকরা প্রতিবন্ধী নারীদের জীবন-মানের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া নানা কর্মসূচীর কথা জানিয়ে বলেন, এসব কর্মসূচীর সুফল নিশ্চিত করতে তারা নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং আগামীতেও তা অব্যাহত রাখবেন।

সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বগুড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আরিফ রেহমান, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আমজাদ হোসেন মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক জে এম রউফ, দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার সমুদ্র হক, দৈনিক ভোরের কাগজ-এর বাদল চৌধুরী, এটিএন নিউজের চপল সাহা, দৈনিক করতোয়ার নাসিমা সুলতানা ছুটু ও দৈনিক সমকালের বগুড়া ব্যুরোর স্টাফ রিপোর্টার এস এম কাওসার।

দৈনিক বগুড়া