শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধুনটে অসাম্প্রদায়িকতার স্বাক্ষরে ঐতিহ্যবাহী ‘বউ মেলা’ অনুষ্ঠিত

ধুনটে অসাম্প্রদায়িকতার স্বাক্ষরে ঐতিহ্যবাহী ‘বউ মেলা’ অনুষ্ঠিত

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শারদীয় দুর্গা উৎসবের সমাপনী হয়ে থাকে। একারনেই বিসর্জনের বিকেল মন্ডপগুলো ভাসতে থাকে বিদায়ের সুর। এ সুর হৃদয়কে বিষাদময় করে তোলে। কিন্তু দেবী বিদায়ের এইক্ষণকে রাঙিয়ে তোলে বগুড়ার ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘বউ মেলা’। আর এ মেলা ঘিরেই হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক অনন্য চিত্র ফুটে ওঠে। দু’টি ধর্মের মানুষের সম্প্রতির এ বন্ধনে এবারও স্বাক্ষর রেখেছে ঐতিহ্যবাহী এই ‘বউ মেলা’।

সরকারপাড়া গ্রামের ৬৯ বছর যাবত শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করেন গ্রামবাসী। গ্রামের প্রমথনাথ কমল-কামিনী পূজা অঙ্গনের পাশেই রয়েছে ইছামতি নদী। ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া, দাসপাড়া, চরধুনট, ধুনট সদর, কলেজপাড়া ও কুঠিবাড়ী গ্রামের পূজা মন্ডপের প্রতিমা গুলো এই নদীতে বিসর্জন দিতেন সনাতন ধর্মালম্বীরা। একসঙ্গে অনেক গুলো প্রতিমা বিসর্জন দেবার এই দৃশ্য দেখতে ইছামতি তীরে সমবেত হোন কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। মানুষের এই সমাগম ঘিরে ইছামতির তীরে হরেক রকমের দোকানীরা পণ্যের পসরা সাজায়। এভাবেই সরকারপাড়া গ্রামের মেলাটি শুরু।

প্রতিমা বিসর্জন বেলার এ মেলাকে ঘিরে প্রতি বছর হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। যার কারনে গ্রামবাসী মেলায় শৃঙ্খলা রক্ষায় একটি সিদ্ধান্ত নেন। দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মেলার মূল অংশে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। শুধুমাত্র নারীদের জন্য মেলাটি সুরক্ষিত করা হয়। আর এখান থেকেই এ মেলা ‘বউ মেলা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

সরকারপাড়া গ্রামের পূজা উদযাপনের জন্য প্রতি বছরই একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির লোকজন পূজা পরিচালনায় ভ‚মিকা রাখেন। ওই কমিটির অধীনে ‘বউ মেলা’ পরিচালনার জন্য পৃথক একটি স্বেচ্ছাসেবক কমিটি করা হয়। সরকারপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের হিন্দু-মুসলমান পুরুষদের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক কমিটি হয়। স্বেচ্ছাসেবকরা মেলার মূল অংশে পুরুষদের প্রবেশ পথ বন্ধ রাখেন। মেলায় নারীরা অবাধে কেনাকাটার সুযোগ পাওয়ায় প্রতিবছর এ মেলায় নারী দর্শনার্থীদের সমাগম বাড়ছে।

মেলায় আসা শিক্ষার্থী রিয়া ভৌমিক, পূজা সরকার, তিথী ভট্টাচার্য, মৌ ভৌমিক, বিথী ভট্টাচার্য  জানান, বছর জুড়ে এ দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করি। শুধুমাত্র নারী কেন্দ্রীক মেলা হওয়ায় স্বাচ্ছন্দে মেলায় কেনাকাটার সুযোগ পাওয়া যায়। মেলাকে কেন্দ্র করে সকলে একত্রিত হই। মেলায় আসা আঞ্জুমান আরা বলেন, পূজা উপলক্ষ্যে মেলা বসলেও আমরা আসি। কারন মেলার মূল অংশে পুরুষরা থাকেন না। যারজন্য ইচ্ছামত মেলা করার সুযোগ পাই। তাছাড়া এলাকার হিন্দু বা মুসলমান ধর্মের পরিচিত নারীদের সঙ্গেও দেখা হয়। এতে আমরা নারীরা একসঙ্গে আনন্দ করার সুযোগ পাই। গৃহবধু সনি সরকার বলেন, বিজয়া দশমীর এ দিনটি সরকারপাড়াতেই থাকি। কারন পূজার আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয় এই বউ মেলা।

সরকারপাড়া গ্রামের পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ কুমার সরকার বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজা মন্ডপে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা স্বাভাবিক ভাবে একটি আতংকের সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন স্থানে পূজা ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতাও হয়তো সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু সরকারপাড়ায় পরিপূর্ণ ভাবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা এবং জমজমাট ভাবে ‘বউ মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের সৌহাদ্য-সম্প্রতির এক বন্ধন তৈরি করে ‘বউ মেলা’। এবারও মেলাটি সফল ভাবে আমাদের সম্প্রতির বন্ধন অটুট করতে ভূমিকা রেখেছে।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চিরতরে বন্ধ হবে: রেলমন্ত্রী
ঈদের ছুটিতে বগুড়ায় যমুনার পাড়ে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিত
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
বো*মের মতো সিলিন্ডার বি*স্ফোরণ, করণীয় কী
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
স্মার্টফোন থেকে ছবি মুছে গেলে উদ্ধার করবেন যেভাবে
বৈসাবি উৎসবের আমেজে ভাসছে ৩ পার্বত্য জেলা
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই