বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছে বগুড়ার কামার দোকানিরা

ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছে বগুড়ার কামার দোকানিরা

আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। আগামী ১০ জুলাই রবিবার উদযাপিত হবে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। পশু কোরবানির মধ্যদিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় দিনটিকে পালন করে থাকে। এ উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন বগুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার কামার দোকানিরা।

দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় এসব কামারদের। লোহা হাতুড়ির টুং টাং শব্দে দিনরাত জেগে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কামারদের হাতের সাহায্য নিয়ে কৃত্রিম বাতাসের তালে তারা পোড়াচ্ছেন কয়লা, জ্বালাচ্ছেন লোহা। সেই লোহাকে হাতুড়ি পেটা করে মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করছেন নানা প্রকৃতির ছুরি-চাকু-দা। এই ঈদে গরু, ছাগল, উটকে কোরবানি হিসেবে পশু জবাই করা হয়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কোরবানির পশু জবাই চলে।

এসব পশুর গোশত কাটতে দা-বটি, ছুরি-ছোরা, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। আর এসব চাহিদা মিটানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিরোলস ভাবে তৈরি করে যাচ্ছেন কামাররা। পশু জবাই থেকে শুরু করে চামড়া ছাড়ানো এবং মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত দা, ছুরি, চাপাতি, বটি ইত্যাদি সরঞ্জাম কেনার হিড়িক পড়েছে বগুড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শহরের ১.২.ও তিন নম্বর ঘুমটি, কাঁঠালতলা, চেলোপাড়া, কলোনিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অস্থায়ী দোকান বসিয়েও বিক্রি করা হচ্ছে কোরবানি পশু জবাইয়ের এসব সরঞ্জাম। কথা হয় শহরের দা-ছুরি বিক্রেতা ছাব্বির শেখের সঙ্গে, তিনি জানান ঈদ উপলক্ষে লৌহজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানীর পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি প্রতি পিস ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দা ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, বটি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পশু জবাইয়ের ছুরি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। বগুড়া সদর উপজেলার মগলিশপুর গ্রামের কামার বিরেন চন্দ্র মহন্তের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছর কাজ কম থাকে। স্বাভাবিকভাবে এ ঈদ এলে আমাদের কাজের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত একটানা কাজ করতে হয়। ক্রেতাদেরও কমতি নেই। একটু বেশি আয়ের উদ্দেশ্যে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয় আমাদের। তিনি জানান, লৌহজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি ছোরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, বিভিন্ন সাইজের চাকু ৬০ থেকে ১১০ টাকা, বটি ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, দা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। পুরনো যন্ত্রপাতি শান দিতে ছোট ছুরি থেকে শুরু করে বড় ছুরি ও চাপাতি সান দেয়ার জন্য ৫০ টাকা থেকে কাজের গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।

তবে মজুরী একটু বেশি হওয়ায় এখন অনেকেই লোহা এনে দা, চাকু ও ছুরি বানিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে হাসান আলী নামের এক ক্রেতা জানান, কোরবানি ঈদের কিছুদিন বাকি তাই আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার কাজটি সেরে ফেলছেন। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার ছুরি, চাকু, বঁটির দাম একটু বেশি। জানতে চাইলে বিরেন কামার বলেন, কুরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লা ও শ্রমিকের মূল্য বেড়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগেও প্রতি বস্তা কয়লার দাম ছিলো ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সেই কয়লা এখন আমাদের ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই আমরা চাপাতি, ছুরি ও দায়ের দাম একটু বেশি নিচ্ছি। তা না হলে আমাদের লাভ হবে না। এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন বাপ-দাদার পৈত্রিক পেশা ধরে রেখেছি। সারা বছর কাজের চাপ থাকে না। যা লাভ এই ঈদ মৌসুমেই। তাই ঈদে সামান্য একটু বেশি নিয়ে থাকি। তবে এবারের ঈদে চাপ বেশি, তাই দুজন কর্মচারীও সঙ্গে নিয়েছি।।

দৈনিক বগুড়া