বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩০০ বছরের ঐতিহ্য বগুড়ার মহাস্থান হাট

৩০০ বছরের ঐতিহ্য বগুড়ার মহাস্থান হাট

দেশের বড় পাইকারি সবজি বাজারের অন্যতম বগুড়ার মহাস্থান হাট। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাট ৩০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে এখনো জমজমাট। এখানকার সবজি স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কঘেঁষা শিবগঞ্জের মহাস্থানগড়ের পাশে অবস্থিত এই হাটে প্রতিদিন ২ কোটি টাকার বেশি সবজি কেনাবেচা হয়।

বগুড়ায় বেশ কয়েকটি সবজির হাট থাকলেও জেলার অধিকাংশ কৃষক তাঁদের পণ্য বিক্রির জন্য মহাস্থান হাটকেই বেছে নেন।

এখানে আলু, বেগুন, পটোল, মরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, চিচিঙ্গা, মুলা, শসা, ঢ্যাঁড়সসহ সব ধরনের সবজি বেচাকেনা হয়। বগুড়া ছাড়াও গাইবান্ধা, রংপুর, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে সবজি কিনতে আসে হাজারো মানুষ। এ ছাড়া সিলেট, সুনামগঞ্জ, ঢাকা, খুলনা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা মহাস্থান হাট থেকে সবজি কিনে ব্যবসা করেন। শীতকালে প্রতিদিন সবজিতে ভরে যায় চার একরের এই হাট। তা ছাড়া খুচরা বাজারে কেনাকাটা হয় সপ্তাহে শনি ও বুধবার।

স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখরিত থাকে হাটটি। মহাস্থান থেকে প্রতিনিয়ত কয়েক হাজার টন সবজি ঢাকা, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। অন্য হাটের তুলনায় এই হাটের বিশাল জায়গা, পরিবেশ ও পণ্য সরবরাহ বেশি হওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করা যায়।

সবজিচাষি আইনুল ইসলাম বলেন, আবাদি জমি থেকে উৎপাদিত সবজি অন্য হাটের তুলনায় মহাস্থানে বিক্রি করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তাঁদের পূর্বপুরুষও এ হাটেই বেচাকেনা করেছেন। এ ছাড়া পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি আসায় কোনো পণ্য অবিক্রীত থাকে না।

মহাস্থান হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও রায়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, এই হাটে প্রতিদিন দুই কোটি টাকার বেশি কেনাবেচা হয়। হাটকেন্দ্রিক যানজট ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়াতে কর্তৃপক্ষ সজাগ থাকে।

এদিকে কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব পেলেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় পানি নিষ্কাশন কম হয় এই হাটে। ফলে মাঝেমধ্যে দুর্ভোগে পড়তে হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের। সামান্য বৃষ্টি হলে কাদার সৃষ্টি হয়। এ কারণে সবজি কেনাবেচার পরিবেশ আর থাকে না। ব্যবসায়ী মফিদুল বলেন, বৃষ্টির পর হাটে প্রচুর পরিমাণ পানি জমে থাকে। এর ফলে কাঁচা পণ্যগুলো অনেকটাই নষ্ট হয়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় হাটের পরিবেশ নষ্ট হয়।

হাটের ইজারাদার ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু বলেন, প্রতিবছর এই হাট থেকে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার। এ টাকা হাট উন্নয়নে ব্যয় করার কথা থাকলেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও পরিবেশ নিয়ে কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে কুলসুম সম্পা জানান, এ বছর মহাস্থান হাট থেকে প্রায় চার কোটি টাকা রাজস্ব এসেছে। হাটে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অসচেতনতার কারণে নালাগুলো ময়লায় অকেজো হয়ে যাচ্ছে। হাট উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। শিগগির বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

দৈনিক বগুড়া