শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার ঐতিহ্য মিষ্টি দই

বগুড়ার ঐতিহ্য মিষ্টি দই

দই নেবেন গো দই, ভালো দই আছে এমন হাঁক ডাক ছেড়ে এককালে, গ্রাম বাঙলার মেঠোপথ ধরে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে দই বিক্রি করতো ঘোষ সম্প্রদায়ের লোকজনেরা, এখন আর সেই ফেরি করে দই বিক্রির দৃশ্য এখন চোখে খুবই কম পরে। সেই ফেরি করে দই বিক্রির দৃশ্য এখন স্থান করে নিয়েছে শহরের আলোক সজ্জায় সজ্জিত নামিদামি শোরুমে।

গুণে, মানে ও স্বাদের কারণে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি গাবতলী উপজেলার কাগইল, শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলাসহ এই মিষ্টি দই উৎপাদন হচ্ছে। এই মিষ্টি দইয়ের সুখ্যাতি দেশ এবং দেশের বাইরে রয়েছে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ এই জেলায় বেড়াতে এলে দইয়ের স্বাদ আস্বাদন করা যেন চাই-ই চাই। আবার এখান থেকে বাইরে গেলেও তার সঙ্গী হয়, বগুড়ার মিষ্টি দই।

এছাড়াও ঈদ, পূজা, বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা, হালখাতাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দই যেন অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। এ অঞ্চলে অতিথি আপ্যায়নের তালিকায় দইয়ের নাম থাকাটা ঐতিহ্যের অংশও বটে।

এখানকার উৎপাদিত দই স্বাদে মানে অনন্য হওয়ায় বগুড়ার দই শব্দটি যেন একে অন্যের সমার্থক হয়ে উঠেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখানে বেড়েছে দইয়ের চাহিদা, জনপ্রিয়তা, উৎপাদন ও বিপণন। বর্তমানে দই তৈরির প্রক্রিয়ায়ও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

ঐতিহাসিক যুগে ঘোষ সম্প্রদায়ের লোকজন বগুড়া জেলার শেরপুর পৌরশহরের ঘোষপাড়ায় এই শিল্পের সূচনা করেন। ঘোষেদের সেই সুস্বাদু দই তৈরির ফরমুলা বা প্রস্তুত প্রণালি বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অনেকের হাতেই পৌঁছে গেছে। এতোদিনেও বগুড়ার দইয়ের স্বাদ ও সুনামে চির ধরাতে পারেনি কেউ।

 পাঠকদের জন্য দই তৈরির পদ্ধতি জানিয়েছেন বগুড়ার দই কারিগররা। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দই তৈরির জন্য প্রয়োজন: দুধ, চিনি, পানি, টিন, বালতি, মগ, কড়াই, ড্রাম, নাড়ুনি, চুলা, দক্ষ কারিগর, তেঁতুল গাছের লাকড়ি, বাঁশের তৈরি ছাউনি বা ছাতা ও দই রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের মাটির পাত্র।

মিষ্টি দই তৈরি পদ্ধতি: দই তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে কারিগর শ্রী সুজন ঘোষ এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রথমে ভালো মানের দুধ ক্রয় করতে হবে। এরপর সেই দুধ কড়াই বা ড্রামে ঢালার আগে ১০০ কেজি দুধের বিপরীতে ১০ কেজি পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর ফুটন্ত সেই পানির মধ্যে দুধ দিয়ে একটানা কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা জ্বাল দিতে হবে। পাশাপাশি অনেকটা বিরতিহীনভাবে সেই দুধ নাড়তে হবে। এই সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ পানি ও দুধের একটি অংশ জলীয়বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে।

এরপর জ্বলন্ত চুলায় ফুটন্ত সেই ১০০ কেজি দুধের মধ্যে ২০থেকে ২২কেজি চিনি ঢেলে দিয়ে আবারও জ্বাল চালিয়ে নিতে হবে। মাত্র ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে সেই চিনি সম্পূর্ণ গলে দুধের সঙ্গে মিশে যাবে। এ পর্যায়ে জ্বলন্ত কড়াই বা ড্রাম থেকে সেই দুধ বালতিতে ভরে মগে করে চুলার চারপাশে আগেই সারিবদ্ধভাবে রাখা মাটির পাত্রে ঢালতে হবে। তবে চাহিদা অনুযায়ী কাপ, বাটি ও ছোট আকারের ডুঙ্গিতেও দই ভরানো হয়। এসব প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়।

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় ধাপের শুরুতেই ওই পাত্রগুলো জ্বলন্ত চুলার পাশের রেখে ছাউনি বা ছাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। এদিকে ফুটন্ত দুধ পাত্রে ভরার আগে সেই কড়াই থেকে উৎপাদন চাহিদা অনুযায়ী ১০/১২ কেজি (একটু কমবেশি হতে পারে) দুধ আলাদা পাত্রে রাখা হয়। তবে মাঝে মধ্যেই ছাউনি উঠিয়ে দেখতে হয় যে পাত্রে দই ঠিকমতো জমছে কী না। আর দই সঠিকভাবে পাত্রে জমানোর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা একটি বড় বিষয়। এসময় খুব বেশি গরম হলেও সমস্যা, আবার ঠান্ডা হলে তো দই জমবেই না। তাই তাপমাত্রা নির্ধারণের কাজটি সাধারণত দক্ষ কারিগররাই ঠিক করেন।

এভাবে দুই ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর আলাদাভাবে রাখা ফুটন্ত সেই দুধের মধ্যে তিল পরিমাণ বীজ বা বিছন দই (আগের দিনে তৈরি দই) নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হয়। এরপর ছাউনি উঁচু করে রেখে পাত্রে আগে রাখা দুধের পরিমাণ বুঝে সেই বীজ মেশানো দুধ প্রতিটি পাত্রে কমবেশি করে দিয়ে আবারও ঢেকে দিতে হয়।

এরপর থেকে টানা ১০/১২ ঘণ্টা ছাউনি বা ছাতা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। তারপর ছাউনি উঠিয়ে সেই দইয়ের পাত্র গুলো বের করা আনা হয়। আর এভাবেই তৈরি হয় অত্যন্ত সুস্বাদু মিষ্টি দই। যা সঙ্গে সঙ্গে শো-রুম ও বিভিন্ন পাইকারের মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়। পাতলা দই তৈরির ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। কেবল চিনির পরিবর্তে একই পরিমাণ দুধের মধ্যে দুই তোলা পরিমাণ স্যাকারিন ব্যবহার করতে হয়।

তার দাবি, বগুড়ার মতো এতো সুস্বাদু ও মানসম্পন্ন দই দেশের কোথাও তৈরি হয় না। কেননা এখানকার আবহাওয়া দই তৈরির জন্য অত্যন্ত উৎকৃষ্ট। পানিও বেশ পরিশোধিত সবমিলে দক্ষ কারিগর ও তাদের নিপুণ হাতের যাদুকরি ছোঁয়ায় তৈরি হয় বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী সু-স্বাদু মিষ্টি দই।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চিরতরে বন্ধ হবে: রেলমন্ত্রী
ঈদের ছুটিতে বগুড়ায় যমুনার পাড়ে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিত
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
বো*মের মতো সিলিন্ডার বি*স্ফোরণ, করণীয় কী
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
স্মার্টফোন থেকে ছবি মুছে গেলে উদ্ধার করবেন যেভাবে
বৈসাবি উৎসবের আমেজে ভাসছে ৩ পার্বত্য জেলা
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই