শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাসুন্দিতে স্বাবলম্বী বগুড়ার নারীরা

কাসুন্দিতে স্বাবলম্বী বগুড়ার নারীরা

অল্প বিনিয়োগে কাসুন্দি তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন বগুড়ার নারীরা। বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ২০ থেকে ২৫টি পরিবার কাসুন্দি তৈরি করে থাকে। সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ঘরে বসে কাসুন্দি তৈরি করে আয় করছেন তারা। কাসুন্দির অপর নাম কাসন। এটি তৈরি হয় ঝাঁজাল সরিষা ব্যবহার করে। জানা গেছে, উপজেলার ৩নং ভাটরা ইউনিয়নের হাটধুমা হিন্দুপাড়ার নারীদের তৈরি কাসুন্দি বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার হাটবাজারে ও গ্রামে গিয়ে ফেরি করে বিক্রি করেন পরিবারের পুরুষরা।

এ বছর বিভিন্ন জেলাসহ সরাসরি রাজধানী ঢাকায় যাচ্ছে কাসুন্দি। গ্রামে গিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি অর্ডার অনুযায়ী কাসুন্দি তৈরি করে নিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে কাসুন্দি তৈরি হলেও হঠাৎ হাটবাজারে কাসুন্দির চাহিদা বেড়েছে। ভাত, মুড়ি, আম, আনারস, পেয়ারাসহ টক-মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন ফল ও খাবারের স্বাদ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় কাসুন্দি। সরেজমিন গিয়ে হাটধুমা হিন্দুপাড়ার সোহাগী বালা, কাঞ্চনী বালা, অনন্ত বালা, নিরমলা বালা ও দেবলা বালাসহ ২০ থেকে ২৫ পরিবারের নারীদের সাথে কথা হয়।

তারা জানান, বাজার থেকে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে সরিষা ক্রয় করে বাড়িতে এনে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নেয়া হয়। শুকনো সরিষা এবং শুকনো হলুদ গোটা ঢেঁকিতে গুঁড়া করা হয়। অন্যদিকে চুলায় কড়াই এবং পাতিল বসিয়ে পানি গরম করা হয়। পরে অন্য পাতিলে গরম পানি ঢেলে সরিষা এবং হলুদ গুঁড়া মিশ্রণ করা হয়। এরপর পাতিলের মুখ পাতলা কাপড় দিয়ে বেঁধে তিন থেকে চার দিন রেখে দেয়া হয়।পাতিলগুলো প্রতিদিন রোদে রাখে। তারপর বোতলজাত করার পূর্বে আলাদাভাবে পানি গরম করে পাতিলে নেয়া হয়। সেই পানি ঠান্ডা হলে পাতিলের জমানো মিশ্রিত সরিষা-হলুদের সাথে মিশ্রণ করা হয়।

শেষে গুঁড়া মরিচ, লবণ, জিরা, ধনিয়াসহ বিভিন্ন গুঁড়া মসলা মিশ্রণ করে পরিষ্কার বোতলে কাসুন্দি ভরে রাখা হয়। তবে উন্নতমানের কাসুন্দির ক্ষেত্রে পৃথক পানি মিশ্রণ করে না। উন্নতমানের কাসুন্দিতে পানির পরিবর্তে সরিষার তেল মিশ্রিত থাকে। ১ কেজি সরিষা থেকে ঘণ কাসুন্দি আড়াই কেজি থেকে ৩ কেজি হয়। পাতলা করলে ৪ কেজি হয়। বাজারে কাসুন্দি নরমাল ৬০ টাকা কেজি এবং উন্নত মানের কাসুন্দি বিক্রি হয় ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। নিভা বালা নামের একজন মহিলা বলেন, ঢাকা থেকে অর্ডার আসে।

সে অনুযায়ী কাসুন্দি তৈরি করে পাঠাচ্ছি। অনেকে গ্রামে এসে অর্ডার দিয়ে নিজেরাই নিয়ে যাচ্ছেন। দামও ভালো পাচ্ছি। সংসারের কাজের ফাঁকে ঘরে বসে কাসুন্দি তৈরি করেন হাটধুমা হিন্দুপাড়ার নারীরা। সোনালি বালা নামের এক গৃহিণী বলেন, পরিবারে ছেলেমেয়েসহ চার থেকে পাঁচজন সদস্য। মেয়ে বৃষ্টি বালা দশম শ্রেণিতে এবং ছেলে বিশাল কুমার পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। কাসুন্দি বিক্রির টাকায় সংসারের খরচ ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচের পরও আয় থাকে। গোপেশ চন্দ্র মহন্ত নামের আরেকজন বলেন, আগে বাপ-দাদারা কাসুন্দি তৈরি করেছেন, এখন আমরা করি। নিজের উপজেলার হাটবাজার ও নিজ জেলা বগুড়ার পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কাসুন্দির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

দৈনিক বগুড়া