শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় গ্রামের ছোট স্কুলের শিক্ষার্থীদের চমক

বগুড়ায় গ্রামের ছোট স্কুলের শিক্ষার্থীদের চমক

বগুড়া জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে গ্রামীণ জনপদে শিক্ষার আলো ছড়াতে গড়ে ওঠে আমতলী মডেল স্কুল নামে একটি বিদ্যালয়। ২৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে সেই বিদ্যালয়ের সাফল্যের কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বগুড়া জেলাজুড়ে। শিবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার অদূরে আমতলী বাজার-গাড়িদহ সড়কের পাশে এ স্কুল।

এবার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে শিবগঞ্জ ছাড়া জেলা শহরের অনেক নামীদামি স্কুলকেও টপকে গেছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এবার এই বিদ্যালয় থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে ৫৯ জনই জিপিএ-৫ পেয়েছে। বাকি একজন পেয়েছে ‘এ’ গ্রেড।

আমতলী মডেল স্কুল সূত্রে জানা যায়, মানসম্মত শিক্ষার আলো ছড়াতে ২০০৩ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন মীর লিয়াকত আলী। ২৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিদ্যালয়টির নাম দেওয়া হয় আমতলী মডেল স্কুল। মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করায় এখন বিদ্যালয়টি রীতিমতো মডেল স্কুল হিসেবে সুনাম ছড়াচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মীর লিয়াকত আলী সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনপদে মানসম্মত শিক্ষার আলো ছড়াতে এবং গ্রামের শিক্ষার্থীদের শহরের মানের জ্ঞানচর্চা নিশ্চিত করতে ১৯ বছর আগে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করি। শুরুতে ছিল শিশুদের পাঠশালা। এখন মাধ্যমিক স্তর চালু আছে। বিদ্যালয়ের আয়তন প্রায় সাড়ে তিন বিঘা। শিক্ষার্থীসংখ্যা ৭৫০ জন, শিক্ষক ৩৫ জন। মাধ্যমিক পর্যায়ে শুধু বিজ্ঞান বিভাগ চালু আছে।

শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার, প্রতিটি শ্রেণিতে দৈনিন্দিন ও সাপ্তাহিক পরীক্ষার ব্যবস্থা, শ্রেণিকক্ষে পাঠ বুঝে নেওয়ার ব্যবস্থা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সৃজনশীল জ্ঞানচর্চার নানা আয়োজন চালু আছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। 

বিদ্যালয়ে অস্বচ্ছল পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য চালু আছে শিক্ষাবৃত্তি। কণ্ঠশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাসের মা মঙলী দেবীর নামে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ১০০ জন শিক্ষার্থী এই শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে আসছে।

এই শিক্ষাবৃত্তি চালুর প্রসঙ্গে মীর লিয়াকত আলী বলেন, নকুল কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না। তিনি মা নিয়ে একটি গান গেয়েছিলেন। বগুড়া থেকে বাসে করে ঢাকায় যাওয়ার পথে সেই গান শুনে চোখে পানি আসে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মায়ের নাম জেনে নিই। এরপর তার মায়ের নামে চালু হয় এই শিক্ষাবৃত্তি।

তবে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করার ইচ্ছা নেই বলে জানালেন প্রতিষ্ঠাতা মীর লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, জাতীয়করণ হলে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এখানে প্রতি মাসে একজন শিক্ষার্থীর মাসিক বেতন সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। এ দিয়েই সব খরচ মেটানো হয়।

চমক দেখানো এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, ব্যক্তি–উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এবং বেসরকারিভাবে পরিচালিত এই বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো ১৭ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষার ফলাফলে ১৭ জনই জিপিএ-৫ পায়। এর পর থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সাফল্যের ধারা অব্যাহত আছে এই বিদ্যালয়ের।

দৈনিক বগুড়া