শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব বাজারে পাল্লা দিচ্ছে বগুড়ার শাওইলের তাঁত শিল্প

বিশ্ব বাজারে পাল্লা দিচ্ছে বগুড়ার শাওইলের তাঁত শিল্প

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার শাওইয়ালের তাঁত শিল্পে তাদের উৎপাদিত পণ্যে এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। এখন শুধুশীত মৌসুমেই নয়, ভর বছর ব্যস্ত থাকছে কারিগররা। দেশ-বিদেশের ক্রেতা আসছে প্রত্যন্ত গ্রামের এই পল্লীতে। বিশ্ববাজারে পাল্লা দিচ্ছে উপজেলার শাওইলের তাঁত শিল্প। এখানে দিনবদলের পালায় হস্তচালিত খট খটি বা গর্ত তাঁতের পরিবর্তে এখন ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত তাঁত। এতে তাদের একদিকে যেমন সময় কম লাগছে অন্যদিকে উৎপাদনও বেড়েছে।

আগে শাওইল এলাকার তাঁতী সম্প্রদায়ের লোকেরা খট খটি বা গর্ত তাঁতে মশারি ও গামছা তৈরি করতো। সে মশারি ও গামছাগুলো পাইকারি ভাবে শাঁওইল ও সান্তাহারহাটে প্রতি সপ্তাহে বিক্রি হতো। রাতদিন সমান করে পরিশ্রম করার পরেও নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে হতো তাদের পণ্য। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এই অঞ্চলের হাজার হাজার তাঁতীদের। দরিদ্র তাঁতীদের সহযোগিতা করছে সরকারের এস এম ই ফাউন্ডেশন। আগের মতো শাঁওইল হাটে শুধু গামছা বা মশারি পাইকারি ভাবে বিক্রি হয় না। এখন এখানে গামছা-মশারির পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে শাল-চাদর, কম্বল ও সুতার দড়ি। এ অঞ্চলে শালচাদরের প্রচলন হয়েছে নব্বই দশকের শেষ দিকে।

বাংলাদেশে গামেন্ট্স ও সোয়েটার ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ শাল চাদরের আবির্ভাব ঘটে। আর আবির্ভাব ঘটার পিছনে কাজ করে সোয়েটার বা গামেন্টস ফ্যাক্টরির পরিত্যক্ত সুতা। এ শাল চাদর তৈরির প্রধান উপাদান বা কাঁচামাল হলো সোয়েটার ফ্যাক্টরির পরিত্যক্ত উলের সুতা। যে সুতাগুলো সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে ব্যবহারের অনুপযোগী বলে বিবেচিত হয় সেগুলো ঝুট হিসেবে বিক্রি হয় ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চিটাগাংসহ দেশের সোয়েটার তৈরি হয় এমন এলাকায়। শাঁওইল হাটে গড়ে উঠেছে এ রকম ঝুট থেকে বাছাই কৃত উলের সূতার একমাত্র বাজার। বাংলাদেশের যে যে অঞ্চলে উলের শালচাদর, মাফলার, কম্বল, সুতার দড়ি তৈরি হয় সেখানকার তাঁতীরা এ শাঁওইলহাট থেকে উলেরসুতা ক্রয় করেনিয়েযায়। আর এ ঝুট থেকে বাছাইকৃত উলেরসুতা দিয়ে আগে তাঁতীরা খটখটি/গর্ত তাঁত ও চিত্তরঞ্জন তাঁতে দুহাত দু পায়ের সাহায্যে সারাদিনে ৫/৭টি প্লেন শালচাদর, আর কেউ কেউ ডগির সাহায্যে হালকা নকশা শালচাদর তৈরি করতো। এতে করে তাদের সংসারে অভাব লেগেই থাকতো।

সেখানেই ভিং পদ্ধতিতে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা , মশারি, থ্রি পিছ, শালচাদর ইত্যাদি বস্ত্র তৈরি করতে পুরানো আমলের তাঁত ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে পাওয়ার লুমের যন্ত্রাংশ স্থাপনকরে তৈরি করা হয়েছে বিদ্যুৎ চালিত তাঁত বা সেমি পাওয়ারলুম। তাঁতি সমবায় সমিতির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন জানান, একটি শাল তৈরির বিভিন্ন ধাপ রয়েছে। এরমধ্যে ঝুট থেকে সুতা তৈরি, সুতা ডাইংকরা, চড়কার সাহায্যে নলি-ববিনভরা, ড্রামে তেনা জড়ানো, সানা-ব ও প্রক্রিয়া এবং নকশা তৈরির জ্যাকেট।

শাল চাদর বা শাড়িতে নকশা তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের জ্যাকেট ব্যবহার করা হয়। তাঁতীদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা গেছে, তাদের কেউ কেউ উলের শালচাদর, কেউ গামছা আবার কেউবা কম্বল তৈরি করতো। আর এসব তৈরির প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আদমদীঘি উপজেলার নসরৎপুর ইউনিয়নের শাওইল বাজারে পাওয়া যেতো। কিন্তুু তাঁতীদের পণ্য তৈরির প্রক্রিয়া ছিলো সনাতন পদ্ধতির। সেখানে ছিলোনা আধুনিক পদ্ধতির কোন বিদ্যুৎ চালিত তাঁত এবং প্রযুক্তির কোন ছোঁয়া। তৈরিকৃত শাল চাদরের গুণগত মান ও ভাল ছিলোনা। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও তাঁতীদের মতে, এই খাতে ২০০ কোটি টাকার বার্ষিক টার্ন ওভারের মধ্যে সুতার মার্কেটই ১২০ কোটি টাকার এবং উষ্ণ পোশাকের মার্কেট ৮০ কোটি টাকার। তবে অনেক ব্যবসায়ী আবার দাবি করে বলেছেন তাদের এই বাজারের বার্ষিক টানওভার ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চিরতরে বন্ধ হবে: রেলমন্ত্রী
ঈদের ছুটিতে বগুড়ায় যমুনার পাড়ে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিত
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
বো*মের মতো সিলিন্ডার বি*স্ফোরণ, করণীয় কী
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
স্মার্টফোন থেকে ছবি মুছে গেলে উদ্ধার করবেন যেভাবে
বৈসাবি উৎসবের আমেজে ভাসছে ৩ পার্বত্য জেলা
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই