বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১

মানসিক শক্তি দিয়ে প্রতিবন্ধীতাকে জয় লিমনের

মানসিক শক্তি দিয়ে প্রতিবন্ধীতাকে জয় লিমনের

আর দশটা মানুষের মতো দুটো হাত থাকলেও তা অকেজো। কথা বলাতেও রয়েছে অস্পষ্টতা। প্রকৃতির রহস্যে জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী তিনি। কিন্তু তাতে কী! মনের অদম্য ইচ্ছে শক্তির মাধ্যমে পা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন পড়ালেখা। দিয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষা। সাবলীল ভঙ্গিতে ব্যবহার করেন কম্পিউটার।r

জন্মগত এমন সমস্যায় থেমে না যাওয়া এই তরুণের নাম রাকিবুল হাসান লিমন। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের বাগবাড়ি এলাকার শহিদুল ইসলাম রতনের ছেলে। তবে তাদের বর্তমান বসবাসস্থল গাতবলী পৌর এলাকার মাস্টারপাড়ায়।

স্থানীয় গাবতলী পূর্ব পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ ৪ দশমিক ১১ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন বগুড়া সদর উপজেলার গাবতলী তাহেরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে ২০২২ সালে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এইএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন রাকিবুল হাসান লিমন।

খোঁজ পেয়ে এ প্রতিভাধারীর সঙ্গে দেখা করা হয়। মুখের আড়ষ্টতায় কাঁপতে কাঁপতে রাকিবুল হাসান বলেন, ‘আমি পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। সব পরীক্ষায় ভালো হয়েছে। এবার ইচ্ছে আছে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে পড়াশোনা করার। আমি কম্পিউটার চালাতে পারি। ইচ্ছে আছে কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা করার।’

রাকিবুল ইসলাম লিমন জানান, আজিজুল হক কলেজে বিবিএ নিয়ে পড়াশোনা করতে চান। পাশাপাশি কম্পিউটার শিক্ষার ট্রেনিং পেলে এ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে তার। লিমনের স্বপ্ন একদিন স্বাবলম্বী হয়ে অস্বচ্ছল বাবার পরিবারের হাল ধরবেন। 
বাবা শহিদুল ও মা লতা খাতুনের বড় ছেলে রাকিবুল। তাহমিদ নামে রাকিবুলের ছোট এক ভাই আছে। তবে সে শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ। 

২২ বছরের রাকিবুল পলিওমাইলাইটিস উইথ মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত। এই রোগের কারণে তার হাত দুটোই অকেজো। ঠোঁটও বাঁকা। এ জন্য কথা অস্পষ্ট শোনা যায়। 

এ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা হতাশ হলেও ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছা ছিল লিমনের। বিষয়টি নজরে আসে তার অভিভাবকদের। প্রাথমিক সমাপনি, জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষাতে ভালো ফল করে লিমন। স্থানীয় গাবতলী পূর্ব পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৪ দশমিক ১১ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হয় বগুড়া সদর উপজেলার গাবতলী তাহেরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে ২০২২ সালে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এইএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন লিমন। 

এ প্রতিবেদকে নিজের পায়ের লিখনি দেখান লিমন। স্পষ্ট শব্দে নিজের নাম ও পরিচয় লিখে ফেলেন অল্প সময়ে। এরপর নিজ ঘরে থাকা কম্পিউটার চালু করে সে। নিজে পা দিয়ে কিবোর্ড ও মাউসে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একের পর এক প্রোগাম চালিয়ে দেখান কম্পিউটারে। অস্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে বলেন ইউটিউব নিয়ে থাকা তার নানা ধ্যান-ধারণা নিয়ে। আর এসবই লিমনকে করতে হয় দাঁড়িয়ে থেকে। এ সময় তার দু'হাত একটি উপর অপরটি রেখে বেঁধে দিয়ে হয় পরিবারের কাউকে। হাত খোলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না লিমন। এমনকি বসে থাকার মতো শক্তিও নেই তার। দীর্ঘসময় একটানা হাঁটতে পারেন না লিমন। 

এতসব শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে উৎফুল্লতার কমতি নেই লিমনের। প্রতিবেদকে জানায় তার ইচ্ছের কথা। 
লিমনের বাবা শহিদুল ইসলাম রতন পেশায় একজন পান দোকানদার। বগুড়া শহরের আল আমিন কমপ্লেক্সের নিচে  ছোট্ট এক দোকান দিয়ে চলে চার সদস্যর এ পরিবার। নুন আনতে পান্তা ফুরোন এ পরিবার তাই লিমনের চিকিৎসা করাতে পারেনি কখনও। 

লিমনের বাবা ও মা জানান, জন্মের পর লিমনের শারিরীক ত্রুটি বুঝতে পারেননি। তার বয়স একবছর হওয়ার পরে লিমনের প্রতিবন্ধকতা ধরা পরে। চিকিৎসকের কাছে গিয়েও তখন কোনো লাভ হয়নি। তবে ছেলের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তাদের কোনো কষ্ট নেই। 

সরকারের কাছে তাদের আবেদন থাকার জন্য ঘর ও ছেলের জন্য স্থায়ীভাবে আয়ের পথ তৈরি করে দিলে শান্তি পেতাম। লিমনের পড়াশোনা করাতেও আমার অনেক কষ্ট হয়। টাকার অভাবে ভালো ফলাফল করার পরেও তাকে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়াতে পারেননি। এবার এইচএসি পরীক্ষা দেওয়ার সময় প্রতিবার সিএনজি রিজার্ভ নিতে হয়েছে। প্রতিদিন আমার গড়ে ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকা আমার দুইদিনের আয়।

শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে আমার কাছে কোনো বোঝা নয়। তাকে খাওয়া দাওয়া থেকে সবকিছু আমার ও স্ত্রীর করতে হয়। লিমন চায় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে পড়াশোনা করতে। আমি মূর্খ মানুষ এরপরও আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হয়েও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে বিষয়টি আমার জন্যই গর্বের। 

শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, আমার পানের দোকান। দিন শেষে হাতেগোনা কিছু টাকা আয় করি। আমার নিজের কোন বাড়ি বা সম্পত্তি নেই। আমিতো চিরকাল বেঁচে থাকবো না, যখন থাকবো না তখন আমার ছেলের কি হবে এটাভেবেই বুক কেঁপে উঠে। 

বগুড়া সাইক মেডিকেল ইনস্টিটিউনের লেকচারার ডা. নাফিউজ্জামান চৌধুরী বলেন, রাকিবুল হাসান লিমন শারীরিকভাবে পলিওমাইলাইটিস উইথ মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত। জন্মগতভাবে এ রোগ হয়ে থাকে। চিকিৎসা করেও রোগী সুস্থ হতে পারেনা। তবে মুখের কথার অস্পষ্টতা ভালো হওয়া সম্ভব। 

নাফিউজ্জামান আরও জানান, এ ধরণের রোগীদের সার্বক্ষণিক নিবিড় পরিচর্যায় রাখা প্রয়োজন। কারও সহানুভূতি নয় মানুষ হিসেবে মানবিক সহায়তা পেলে তারাও তাদের জায়গা থেকে ভালো কিছু করতে পারেন। 

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চিরতরে বন্ধ হবে: রেলমন্ত্রী
ঈদের ছুটিতে বগুড়ায় যমুনার পাড়ে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিত
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
বো*মের মতো সিলিন্ডার বি*স্ফোরণ, করণীয় কী
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
স্মার্টফোন থেকে ছবি মুছে গেলে উদ্ধার করবেন যেভাবে
বৈসাবি উৎসবের আমেজে ভাসছে ৩ পার্বত্য জেলা
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই