মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুই যুগে বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে মিলেছে ৫১টি জাত

দুই যুগে বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে মিলেছে ৫১টি জাত

বাঙালির খাবারে মসলা ছাড়া ভাবাই যায় না। এই উপাদানের পিছনে দেশে আমদানী ব্যয়ের পরিমাণও চোখে পড়ার মতো। তবে দেশে এখন মসলা উৎপাদন হচ্ছে। একাজে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মসলা গবেষণা কেন্দ্র। গত দুই যুগে এই গবেষণা কেন্দ্র থেকে ১৫৬টি মসলা ফসলের প্রযুক্তি ও  ৫১টি জাত উদ্ভাবন হয়েছে। এতে করে আমদানী নির্ভরতা কমছে দেশে। 

১৯৯৬ সালে বগুড়া থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তরে মহাস্থানগড়ের অদূরে শিবগঞ্জের রায়নগর এলাকায় ৭০ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে এই মসলা গবেষণা কেন্দ্র। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) অধিনে এ গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত হয়। কেন্দ্রটি মসলার বহুমুখী জাত উদ্ভাবন করে সকলের নজরে এসেছে। এ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে ৩টি আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র ও ৪টি উপ-আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। আঞ্চলিক মসলা কেন্দ্র মাগুরা, কুমিল্লা ও গাজীপুরে। উপ-আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র লালমনিরহাট, ফরিদপুর, সিলেট ও খাগড়াছড়িতে। 

শিবগঞ্জ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য মতে, এ গবেষণা কেন্দ্র এ পর্যন্ত উচ্চ ফলনশীল (উফশী) নানা জাতের মসলা উদ্ভাবন করেছে। এ পর্যন্ত ৪৬ টি মসলা ফসল নিয়ে গবেষণা করে ১৫৬টি মসলা ফসলের প্রযুক্তি ও  ৫১টি জাত উদ্ভাবন করেছে এ গবেষণা কেন্দ্র। এর মধ্যে পেঁয়াজের ৭টি, পাতা পেঁয়াজের ১টি, মরিচের ৪টি, অর্নামেন্টাল মরিচের ২টি, রসুনের ৪টি, আদার ৩টি, হলুদের ৫টি, ধনিয়ার ২টি, বিলাতি ধনিয়ার ১টি, কালোজিরার ১টি, মেথীর ৩টি, ফিরিঙ্গী ১টি, মৌরির ২টি, শলুক ১টি, রাধুনী ১টি, জাউন ১টি, একাঙ্গীর ১টি, চিভের ১টি, পুদিনার ২টি, আলুবোখারার ১টি, দারুচিনি ১টি, তেজপাতা ১টি, গোলমরিচের ১টি, পানের ৩টি, এবং জিরার ১টি জাত। যা বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে ব্যপকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। 

চলতি মসলার সঙ্গে গবেষণাধীন অন্যান্য অপ্রচলিত মসলা ফসলগুলো হলো: শলুক, তেজপাতা, রাঁধুনী, জোয়ান, ফিরিঙ্গি, চুঁইঝাল, একাঙ্গি, পিপুল, শঠি, দই রং, বচ, পুদিনা, পোলাও পাতা, লেমনগ্রাস, আম আদা, মিঠা তুলশি, পান, সুপারি, জিরা, কাবাবচিনি, চিভস, অলস্পাইস, কারিপাতা, পান বিলাস, লবঙ্গ, পেস্তা বাদাম, জয়ফল, জৈয়ত্রী, ভ্যানিলা, রোজমেরী, বিলাতি ধনিয়া ইত্যাদি।

মসলা গবেষকরা বলছেন, দেশে মসলার মোট চাহিদা ৫৮ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে আমদানি হয় ৪৪ দশমিক ৯৬ লাখ মেট্রিক টন। এরপরেও ঘাটতি থেকে যায় আরও ১৩ দশমিক ৫৪ লাখ টন। ২০১৯-২০২০ সালে দেশে শুধু মসলা আমদানিতে ব্যয় হয়েছিলো প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। কৃষকদের মসলা চাষে স্বাবলম্বী করতে পারলে আমদানিবাবদ প্রচুর টাকা সাশ্রয়ী করা সম্ভব।

শিবগঞ্জ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ড. মো. মাসুদ আলম বলেন, এ গবেষণা কেন্দ্রের অধিনে উদ্ভাবিত আদা-রসুনের গুড়া, পিয়াজের গুড়া, কাঁচা মরিচের গুড়া ইত্যাদি বানিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে মসলার ঘাটতি কিছুটা কমে যাবে ও দেশের আমদানী নির্ভরতা হ্রাস পাবে। উদ্ভাবিত সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তিগুলি মসলা গবেষণার কেন্দ্রের বড় ধরণের সাফল্য।

মসলা গবেষণা কেন্দ্রে কৃষকদের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন আছে। এখানকার গবেষকরা বিভিন্ন সময়ে কৃষকদের মাঝে এসব প্রযুক্তিগত চাষব্যবস্থার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। 

এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তি হলো, ঢিবি পদ্ধতিতে আদা রোপণের উন্নত প্রযুক্তি,জিংক ও বোরন প্রয়োগে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের বীজ ধারণ, ফলন এবং গুণগত মান বৃদ্ধি, গ্রীষ্মকালীন মরিচ ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আন্তফসল চাষ, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আদার কন্দ পঁচা রোগ নিয়ন্ত্রণ, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আদার কন্দ পঁচা রোগ দমন, সমন্বিত পুষ্টি ও সেচ ব্যবস্থাপনায় রসুনের ফলন বৃদ্ধি, বিনা চাষে মালচ ব্যবহার করে মান সম্পন্ন রসুন উৎপাদন, চুন এবং বোরন প্রয়োগে রসুনের ফলন এবং সংরক্ষণ যোগ্যতা বৃদ্ধি, চারার মাধ্যমে হলুদ উৎপাদন, হলুদ ও মরিচের আন্তঃফসল চাষ, রোগের সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা, স্টোরে পিঁয়াজের রোগজীবানু ও বিভিন্ন জাতের পিয়াজের কন্দের পঁচন ও গজানোর হার  নির্ণয়। 

শিবগঞ্জ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান জানান, ‘দেশের একেক এলাকার মাটি একেক ধরনের মসলা উৎপাদনের জন্য উপযোগী, শিবগঞ্জ মসলা গবেষণা কেন্দ্র যে যে মসলা উদ্ভাবন করছে তা মাঠ পর্যায়ের কৃষকের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে, এ মসলা গবেষণা কেন্দ্র বর্তমানে জিরা, ইসবগুল ও উচ্চ মূল্যের ভ্যানিলাসহ মসলা ফসলের আরো নতুন জাত উদ্ভাবনের উপর গবেষণা কাজ চলছে, এছাড়াও গ্রীষ্মকালীন পিয়াজকে কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তোলা ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো এবং রাইজম পচাঁ প্রতিরোধী আদার জাত উদ্ভাবনে এ কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে।’ 

শিবগঞ্জ মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ জুলফিকার হায়দার প্রধান বলেন, মসলা প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় ৫ হাজার ৬০০ জন বিজ্ঞানী, কৃষি কর্মকর্তা, বিএডিসি কর্মকর্তা, এনজিও কর্মী ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ গবেষণা কেন্দ্রে বিশাল পরিসরে গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য কর্মরত বিজ্ঞানীর সংখ্যা অপ্রতুল। দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ফেলোশিপ ও উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। সিরিয়াল ফুড ও ভেজিটেবল চাষের আধিক্যের কারণে মসলা চাষের জমির স্বল্পতা রয়েছে। এ কেন্দ্রে বিদেশি মসলা জার্মাপ্লাজম সংগ্রহের সুযোগও কম। আবহাওয়াগত সমস্যা ও প্রশিক্ষিত জনবলের এখনো অভাব রয়েছে। এছাড়াও কীটপতঙ্গ, রোগ, খরা ও লবনাক্ত জেনোটাইপের অভাব রয়েছে। এ কেন্দ্র থেকে উদ্ভাবিত সকল জাত ও প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে কাজ করে থাকে। মসলার ঘাটতি কাঙ্খিতভাবে কমিয়ে আনতে এ কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন
ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চিরতরে বন্ধ হবে: রেলমন্ত্রী
ঈদের ছুটিতে বগুড়ায় যমুনার পাড়ে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল
১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়
বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিত
তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতে
নেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ
বো*মের মতো সিলিন্ডার বি*স্ফোরণ, করণীয় কী
আয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
স্মার্টফোন থেকে ছবি মুছে গেলে উদ্ধার করবেন যেভাবে
বৈসাবি উৎসবের আমেজে ভাসছে ৩ পার্বত্য জেলা
জুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেই