বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় ঈদকে ঘিরে সাদা সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

বগুড়ায় ঈদকে ঘিরে সাদা সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

বগুড়ার সাদা সেমাইয়ের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। এ সেমাইকে চিকন সেমাইও বলা হয়। ঈদ উল ফিতরকে সামনে রেখে সাদা সেমাই তৈরি করে তা কড়া রোদে শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তবে এবার ময়দার দাম বৃদ্ধি হওয়ায় অনেক কারখানা বন্ধ রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বগুড়ার তৈরি চিকন সেমাই নওগাঁ, নাটোর, ঢাকা, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বগুড়ার শাজাহানপুরের মাদলা, সদরের বেজোড়া এলাকার সেমাই কারখানায় রোদে সেমাই শুকানোর কাজ করছেন শিউলি বেগম, অপেরা খাতুন, মরিয়ম খাতুনরা। কেউ তীব্র রোদে চটের বস্তার ওপর সেমাইয়ের চাকা শুকাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ শুকানো ওজন করে সেমাই বাঁশের খাঁচি বা টোপায় করে বিক্রির জন্য বাঁধাই করছেন।

বগুড়া সদর ও শাজাহানপুর এলাকার সেমাই ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বগুড়ায় অন্তত তিন শতাধিক চিকন সেমাইয়ের কারখানা রয়েছে। ময়দাসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক সেমাই কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি কারখানা রয়েছে বগুড়ার মাদলা, বেজোড়া, ঢাকন্তা, বনানী, সুলতানগঞ্জপাড়া, চেলোপাড়া, শ্যামলাকাঁথি, নারুলী, নুরানী মোড় ও বৃন্দাবনপাড়ায়।

সেমাই তৈরির সাথে জড়িতরা বেশির ভাগই মৌসুমি ব্যবসায়ী। দুই ধরনের সাদা সেমাইয়ের মধ্যে একটি সুতার মত চিকন এবং অন্যটি তুলনায় একটু মোটা। খোলা বাজারে সেমাই দুটি বিক্রি হচ্ছে প্রায় একই দামে। বাজারে ময়দার তৈরি সাদা সেমাই বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর সাদা সেমাই ভেজে প্যাকেটজাত করে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজিতে।

বগুড়া শহরের বেজোড়ার সেমাই কারিগর রাশেদা বেগম জানান, সব সময় এই সেমাইয়ের কাজ হয় না। রোজার শুরুর দিকে সেমাই তৈরির কাজ শুরু হয়। এক বস্তা ময়দার সেমাই তৈরি করে মজুরি হিসেবে একশত টাকা পাই। তবে, রোদ না থাকলে কাজ বন্ধ থাকে। আরেক কারিগর সহিদা বেগম জানান, সংসারের কাজ করার পর যে সময়টুকু বসে থাকি তখন কারখানায় কাজ করি। এখান থেকে যা মজুরি পাই সেটা দিয়ে সংসারে একটু সহযোগিতা হয়।

বগুড়ার শহরের বেজোড়ার শ্যামলাকাঁথি গ্রামের সেমাই কারখানার মালিক আব্দুর রশীদ জানান, ঈদের আগে সাদা সেমাইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন সাদা সেমাই নিতে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পার্সেল করে পাঠাতে হয়। চলতি বছর ২৫ কেজি ওজনের এক খাচি সেমাই বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা করে। ভালো মানের সেমাই পাইকারি বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

আরেক নারী সেমাই ব্যবসায়ী তাজলিন সুলতানা জানান, ময়দার দাম বেড়েছে।গত বছর ময়দা প্রতি বস্তার দাম ছিল ২২শ টাকা থেকে ৩২শ টাকা। এ বছর দাম বেড়েছে প্রতি বস্তায় গড়ে ৬শ টাকা করে। এর ফলে অনেক সেমাই কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেকে পরিমাণে কম উৎপাদন করছে।

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ সভাপতি মাফুজুল ইসলাম রাজ বলেন, সারাদেশে বগুড়ার সাদা সেমাইয়ের কদর রয়েছে। বগুড়ায় এবার ময়দার দাম বৃদ্ধি হওয়ায় অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী তাদের কারখানা বন্ধ রেখেছে। তবে জেলায় তৈরি সাদা সেমাই দিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ: