বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় ঝড়ো হাওয়ায় তছনছ নিমপ্যাঁচার সংসার, ছানাদের আগলে রাখল মা

বগুড়ায় ঝড়ো হাওয়ায় তছনছ নিমপ্যাঁচার সংসার, ছানাদের আগলে রাখল মা

বৈশাখ মাসের ঝোড়ো হাওয়ায় হঠাৎ ভেঙে পড়ে নিম প্যাঁচার বাসা। সেখানে একটি পুরুষ ও স্ত্রী প্যাঁচা এবং তিনটি ছানা নিয়ে ছিল তাদের পরিবার। ঝড়ের সময় গাছের ডালের আঘাতে মারা যায় পুরুষ প্যাঁচাটি। স্ত্রী প্যাঁচাটি আহত হলেও আগলে রেখেছিল ছানাগুলোকে। ঝড় থামার পর এই দৃশ্য চোখে পড়ে পরিবেশবাদী সংগঠনের দুই সদস্যের। পরে তাঁদের তৎপরতায় মা প্যাঁচা ও তিন ছানাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বগুড়ার শেরপুরের শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকারটোলা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের পাশে এ ঘটনা ঘটেছে। আহত প্যাঁচাগুলো এখন স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন ‘পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থা’র তত্ত্বাবধানে আছে।

উপজেলার পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, প্যাঁচাগুলোকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাচ্চাগুলো সুস্থ আছে। নিমপ্যাঁচা এখন বাংলাদেশে খুব একটা দেখা যায় না। পাখিগুলোকে হস্তান্তর করার জন্য রাজশাহী বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতির সংরক্ষণ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় খন্দকারটোলা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের আশপাশের এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বইছিল। এ সময় ওই এলাকার বেশ কয়েকটি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে ঈদগাহ মাঠের পাশের একটি গাছে ভেঙে গেলে সেখানে একটি নিম প্যাঁচার বাসা তছনছ হয়ে যায়। এ সময় পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থার সদস্য শাহরিয়ার রহমান ও পারভেজ আহমেদ ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি আহত মা প্যাঁচার সঙ্গে তিন ছানাকে জবুথবু হয়ে থাকতে দেখেন। পরে তাঁরা ছানাসহ মা প্যাঁচাকে উদ্ধার করে সংগঠনের সভাপতি সোহাগ রায়ের কাছে হস্তান্তর করেন।

শেরপুরের পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থার সভাপতি সোহাগ রায় বলেন, এই প্রজাতির পুরুষ ও স্ত্রী প্যাঁচা দেখতে অনেকটা একই রকম। এরা বন, গাছের খাঁজ বা গাছের গুঁড়ির প্রাকৃতিক ফাঁপা বা কাঠঠোকরা দ্বারা পরিত্যক্ত গর্তে বাসা বাঁধে। নিম প্যাঁচা পুরোপুরি নিশাচর। তাদের খাবার তালিকায় আছে ফড়িং, টিকটিকি, গোবরে পোকা, ব্যাঙ, ইঁদুর ইত্যাদি। পাখিটি প্রকৃতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। গতকাল সন্ধ্যায় উদ্ধার হওয়া পাখিগুলোকে হস্তান্তর করার জন্য বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতির সংরক্ষণ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে রাজশাহীর বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, আহত অবস্থায় চারটি নিমপ্যাঁচা উদ্ধারের বিষয়ে শেরপুরের পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থা তাঁদের জানিয়েছে। পাখিগুলোকে নিয়ে আসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আহত পাখিগুলো সুস্থ করে পরে অবমুক্ত করে দেওয়া হবে।

জাহাঙ্গীর কবির বলেন, নিমপ্যাঁচা এখন খুব একটা দেখা যায় না। এসব পাখি রাতে শিকার করে। কৃষকের জন্য এই পাখি খুব উপকারী।

দৈনিক বগুড়া