মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

রূপলাল হাউজ চেনেন?

রূপলাল হাউজ চেনেন?

পুরান ঢাকা যদি ধূলোয় মাখা কোনো বই হয় তাহলে রূপলাল হাউজ একটি অধ্যায়। ভবনটির ইটের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে ইতিহাসের এক একটি ঘটনা। যা পড়লে ঢাকার এক সময়ের বিত্তবানদের ইতিহাসের বিভিন্ন কাহিনী স্মৃতির অন্দরে এসে ভিড় করবে।

জানেন কি? রূপলাল দাসের প্রতাপের কারণে ইংরেজ আমলের বড় লাট সাহেব ঢাকায় এসে নিয়ম মাফিক আহসান মঞ্জিলে যাওয়ার কথা থাকলেও উঠেছিলেন রূপলাল হাউজে। রাষ্ট্র ও আমলা তোষনের এগুলো বড় চিহ্ন হলেও এসব তখন সমাজে সম্মানিত হওয়ার মূল বিষয় ছিল। অহংকারের সেসব সৌধ থেকে গেল ইতিহাস হয়ে।

ভবনটি পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জে অবস্থিত। সেখানকার কাউকে যদি বলেন রূপলাল হাউজটা কোথায়? মাথা চুলকাবে! এখনকার অনেকেই জানে না এই বাড়ির ইতিহাস। অথচ আঠারো শতকে ঢাকা শহরে বল রুম ছিল শুধু আহসান মঞ্জিল আর রূপলাল হাউজে। ১৮৮৮ সালে কোনো এক সময় লর্ড ডাফরিন ঢাকায় এসেছিল। তার সম্মানে নাচ গানের আসর বসবে এই নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামে ঢাকার নবাব আর রূপলাল বাবুরা। সে সময় অনেক বেশি ভোটে বিজয়ী হয় রূপলাল হাউজ।

লালকুঠি থেকে বেশ কাছে এই রূপলাল হাউজ। আর্মেনিয়ান জমিদার আরাতুনের হাতেই ১৮২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমানের রূপলাল হাউজ। ১৮৩৫ সালে রূপলাল দাস এবং তার ভাই রঘুনাথ দাস বাড়িটি কিনে নেয়। তখন থেকেই নাম হয়ে যায় রূপলাল হাউজ। তৎকালীন সময় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান, ওস্তাদ ওয়ালী উল্লাহ খান এবং লক্ষী দেবী সহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সংগীতের মূর্ছনায় ডুবে থাকতো রূপলাল হাউজ। আজ সবই স্মৃতি।

এ ভবনটির ছাদ নির্মিত হয়েছিল কোরিনথীয় রীতিতে। এর ওপরে রয়েছে পেডিমেন্ট। যা রেঁনেসা যুগের পেডিমেন্টের অনুকরণে নির্মিত। দ্বিতীয় তলায় বিভিন্ন আয়তনের মোট ৫০টিরও বেশি কক্ষ রয়েছে। কথিত আছে যে সেই সময়কার বিদেশিরা ঢাকায় আসলে রূপলাল হাউজ ভাড়া করে থাকতেন। সেই যুগে রুম প্রতি ভাড়া গুনতে হতো ২০০ টাকা।

এখন কী আছে রূপলাল ভবনের সে রূপ? না! আকাশ-পাতাল ব্যবধান। দিন দিন দেয়াল থেকে চুন সুড়কির আবরণ খসে পড়ছে। ভবনের অনেকটা অংশ ভেঙেও গিয়েছে। দেয়ালে গজিয়েছে বটগাছ। উপরে ওঠার সিঁড়িগুলো অনেকটাই ভাঙা। এরকম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়ও সেখানে বসবাস করছে বেশ কিছু পরিবার। ভবনের নিচে গড়ে উঠেছে মসলার বাজার!

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ: