বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যেসব কারণে মহানবী (সা.) রাগ করেছেন

যেসব কারণে মহানবী (সা.) রাগ করেছেন

মহানবী (সা.) কখনো ব্যক্তিগত কারণে কারো ওপর রাগ করেননি। কখনো ব্যক্তি আক্রোশের বশবর্তী হয়ে কারো ওপর প্রতিশোধ নেননি। তবে আল্লাহর বিধানের ব্যতিক্রম, অবান্তর চিন্তাধারা ও বাড়াবাড়ি দেখলে তখন তাঁর চেহারায় রাগের ছাপ প্রকাশ পেয়েছে। নিম্নে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো—

ঘরে প্রাণীর ছবি রাখা : ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি অঙ্কন এবং তা ঘরে টানিয়ে রাখা হারাম। তাই রাসুল (সা.) তাঁর ঘরে ছবিযুক্ত পর্দা দেখে রাগান্বিত হয়েছিলেন।  আয়েশা (রা.) বলেন, একবার নবী (সা.) আমার কাছে এলেন। তখন ঘরে একটি পর্দা ঝুলানো ছিল, যাতে ছবি ছিল। তা দেখে নবী (সা.)-এর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। এরপর তিনি পর্দাটি হাতে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) লোকদের মধ্যে বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে সেসব মানুষের, যারা এ সব ছবি অঙ্কন করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১০৯)

নামাজে রোগী-বৃদ্ধদের বিবেচনা না করা : নামাজে রোগী ও বৃদ্ধদের বিবেচনা না করে নামাজ বেশি লম্বা করায়ও মহানবী (সা.) রাগান্বিত হয়েছেন। আবু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, অমুক ব্যক্তি নামাজ দীর্ঘ করে। যে কারণে আমি ফজরের নামাজ থেকে পেছনে থাকি (অর্থাৎ জামাতে পড়তে পারি না)। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কোনো ওয়াজের মধ্যে সেদিনের চেয়ে অধিক রাগান্বিত হতে দেখিনি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঘৃণা সৃষ্টিকারী আছে। সুতরাং তোমাদের যে কেউ লোকদের নিয়ে নামাজ আদায় করে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কারণ তাদের মধ্যে রোগী, বৃদ্ধ এবং কাজের লোক থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১১০)

মসজিদ অপরিষ্কার করা : আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার নবী (সা.) নামাজ আদায় করেন। তখন তিনি মাসজিদের কিবলার দিকে নাকের শ্লেষ্মা দেখতে পান। এরপর তিনি তা নিজ হাতে খুঁচিয়ে সাফ করলেন এবং রাগান্বিত হয়ে বলেন, তোমাদের কেউ যতক্ষণ নামাজে থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তার চেহারার সম্মুখে থাকেন। কাজেই নামাজরত অবস্থায় কখনো সামনের দিকে নাকের শ্লেষ্মা ফেলবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১১১)

অহেতুক অতিরিক্ত প্রশ্ন করা : আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কতকগুলো বিষয়ে প্রশ্ন করা হলো, যা তিনি অপছন্দ করেন। লোকেরা যখন তাঁকে বেশি বেশি প্রশ্ন করতে লাগল, তিনি রাগাম্বিত হলেন এবং বলেন, আমাকে প্রশ্ন করো। তখন এক লোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার পিতা কে? তিনি বলেন, তোমার পিতা হল হুজাফা। এরপর আরেকজন দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার পিতা কে? তিনি বলেন, তোমার পিতা শায়বাহর আজাদকৃত গোলাম সালিম। ওমর (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারায় রাগের আলামত দেখে বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করছি।’ (বুখারি, হাদিস : ৭২৯১)

নফল নিয়ে বাড়াবাড়ি করা : জায়দ ইবনে সাবিত (রা.) বলেন, একবার নবী (সা.) খেজুরের পাতা দিয়ে, অথবা চাটাই দিয়ে একটি ছোট হুজরা তৈরি করলেন এবং ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ওই হুজরায় (রাতে নফল) নামাজ আদায় করতে লাগলেন। তখন একদল লোক তাঁর খোঁজে এসে তাঁর সঙ্গে নামাজ আদায় করতে লাগল। পরবর্তী রাতেও লোকজন সেখানে এসে হাজির হলো। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) দেরি করেন এবং তাদের দিকে বেরিয়ে এলেন না। তারা উচ্চ স্বরে আওয়াজ দিতে লাগল এবং ঘরের দরজায় কংকর নিক্ষেপ করল। তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে তাদের কাছে বেরিয়ে এসে বলেন, তোমরা যা করছ তাতে আমি ভয় করছি যে এটি না তোমাদের ওপর ফরজ করে দেওয়া হয়। সুতরাং তোমাদের উচিত যে তোমরা ঘরেই নামাজ আদায় করবে। কারণ ফরজ ছাড়া অন্য নামাজ নিজ নিজ ঘরে পড়াই উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১১৩)

নবীদের মর্যাদা নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হওয়া : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার এক ইহুদি তার কিছু দ্রব্য সামগ্রী বিক্রির জন্য পেশ করছিল, তার বিনিময়ে তাকে এমন কিছু দেওয়া হলো, যা সে পছন্দ করল না। তখন সে বলল, না! সেই সত্তার কসম, যিনি মুসা (আ.)-কে মানব জাতির ওপর মর্যাদা দান করেছেন। এ কথাটি একজন আনসারি শুনলেন, তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। আর তার মুখের ওপর এক চড় মারলেন। আর বলেন, তুমি বলছ, সেই সত্তার কসম! যিনি মুসাকে মানব জাতির ওপর মর্যাদা দান করেছেন, অথচ নবী (সা.) আমাদের মধ্যে অবস্থান করছেন। তখন সে ইহুদি লোকটি নবী (সা.)-এর কাছে গেল এবং বলল, হে আবুল কাসিম, নিশ্চয়ই আমার জন্য নিরাপত্তা এবং অঙ্গীকার আছে অর্থাৎ আমি একজন জিম্মি। অমুক ব্যক্তি কী কারণে আমার মুখে চড় মারল? তখন নবী (সা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন তুমি তার মুখে চড় মারলে? আনসারি লোকটি ঘটনা বর্ণনা করল। তখন নবী (সা.) রাগান্বিত হলেন। এমনকি তাঁর চেহারায় তা দেখা গেল। অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর নবীদের মধ্যে কাউকে কারো ওপর মর্যাদা দান করো না। কেননা কিয়ামতের দিন যখন শিঙায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন আল্লাহ যাকে চাইবেন সে ছাড়া আসমান ও জমিনের বাকি সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে। অতঃপর দ্বিতীয়বার তাতে ফুঁক দেওয়া হবে। তখন সর্বপ্রথম আমাকেই উঠানো হবে। তখনই আমি দেখতে পাব মুসা (আ.) আরশ ধরে আছেন। আমি জানি না, তুর পর্বতের ঘটনার দিন তিনি যে বেহুঁশ হয়েছিলেন, এটা কি তারই বিনিময়, নাকি আমার আগেই তাঁকে বেহুঁশি থেকে উঠানো হয়েছে?’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪১৪)

জায়েজ বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করা : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কাজকে জায়েজ করলেন, অন্য কিছু লোক তা খারাপ মনে করল। এ কথা নবী (সা.)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি রেগে গেলেন; এমনকি তাঁর মুখায়বে রাগ প্রকাশ পেল। তখন তিনি বলেন, লোকদের কী হলো যে আমার জন্য বৈধ একটা কাজে তারা আগ্রহ প্রকাশ করছে না। আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই আল্লাহ সম্পর্কে তাদের চেয়ে বেশি জানি এবং তাঁকে বেশি ভয় করি।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬০০৫)

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ:

শিরোনাম:

এবার উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে ঈদযাত্রা হবে স্বস্তির!
বগুড়ায় পানি নিষ্কাশনে ড্রেন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন
বগুড়ায় দাম কমেছে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের
বগুড়ার বিখ্যাত সাদা সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত কারিগর
স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক
চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ
এপ্রিলে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির
ঈদে ট্রেন যাত্রার পঞ্চম দিনের টিকিট বিক্রি শুরু
গাবতলীতে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালিত
সারিয়াকান্দিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা পালিত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু