বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কিয়ামত সম্পর্কে কোরআন ও বিজ্ঞানের ভাষ্য

কিয়ামত সম্পর্কে কোরআন ও বিজ্ঞানের ভাষ্য

আসমান-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র সব কিছুই মহান আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহর আদেশ ছাড়া কোনো কিছুই তিল পরিমাণ স্থান পরিবর্তনেরও শক্তি রাখে না। সব কিছু মহান আল্লাহর হুকুমে নিজ নিজ কক্ষপথে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। যেদিন মহান আল্লাহর আদেশ হবে, সেদিন এগুলো সবই ধ্বংস হয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত সব কাজ পরিচালনা করেন। তারপর তা একদিন তাঁর কাছেই উঠবে। যেদিনের পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছর।’ (সুরা : সাজদা, আয়াত : ৫)

অর্থাৎ মহান আল্লাহ এই মহাবিশ্বের সব কিছুকে একদিন থামিয়ে দেবেন। যাকে বিজ্ঞানীদের ভাষায় বলা হয়, ‘বিগ রিপ’ থিওরি। ‘বিগব্যাং’ সংঘটিত হওয়ার পর আমাদের এ মহাবিশ্ব ক্রমাগত সমপ্রসারিত হচ্ছে। তবে মহাকর্ষিক বলের জন্য মহাজাগতিক বস্তুগুলো যেমন : গ্যালাক্সি, ক্লাস্টার ইত্যাদির সমপ্রসারণগতি একটা সময় পর কমার কথা। কিন্তু গতি না কমে বরং ক্রমে বেড়েই চলেছে। এরা যত একে অপরের কাছ থেকে দূরে যাচ্ছে, ততই তাদের দূরে যাওয়ার গতি বাড়ছে। যা দেখে উপলব্ধি করা যায়, মহাকর্ষ বলের বিপরীতে কোনো অজানা শক্তি এখানে কাজ করছে। এই অজানা শক্তিটির নামই বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন ‘ডার্ক এনার্জি’।

এই ডার্ক এনার্জির জন্য গ্যালাক্সিগুলো দূরে যেতে শুরু করলেও এর ভেতরে থাকা গ্রহ-নক্ষত্রগুলো মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে আবদ্ধ থাকে। কিন্তু বিগ রিপ থিওরি অনুযায়ী এমন একটা সময় আসবে, যখন ডার্ক এনার্জির প্রভাব এতটা বাড়বে, যার ফলে গ্যালাক্সির ভেতরে থাকা গ্রহ-নক্ষত্র তাদের মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে আর আবদ্ধ থাকবে না। এ বল তারা অতিক্রম করবে। ফলে গ্রহ-নক্ষত্রগুলো একে অন্য থেকে দূরে সরে যেতে থাকবে এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বা ছিঁড়ে যাবে। এতে এসব গ্রহ-নক্ষত্র টুকরা টুকরা হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে থাকা অণুগুলো ভেঙে যেতে থাকবে। এরা পরমাণুতে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এভাবে সমগ্র মহাবিশ্বই ভাঙতে ভাঙতে পরমাণুময় হয়ে যাবে। আকাশ ফেটে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘যখন আসমান ফেটে যাবে। আর তার রবের নির্দেশ পালন করবে এবং এটাই তার করণীয়।’ (সুরা : ইনশিকাক, আয়াত : ১-২)

উল্লিখিত আয়াতে দুটি জিনিস স্পষ্ট হয়। ১. এই মহাবিশ্ব সত্যি একদিন তার রবের হুকুমে ধ্বংস হয়ে যাবে। সময়ও তখন শেষ হয়ে যাবে, ২. যে অজানা শক্তিকে বিজ্ঞানীরা ‘ডার্ক এনার্জি’ নামে নামকরণ করেছেন, তা মূলত আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থেই গ্রহ-নক্ষত্রগুলো যত একে অপরের কাছ থেকে দূরে যাচ্ছে, ততই তাদের দূরে যাওয়ার গতি বাড়ছে। এবং তারা তাদের রবের হুকুমে একদিন ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।

পৃথিবী ধ্বংসের আগের মুহূর্তটা কতটা ভয়াবহ, সে ব্যাপারে কোরআন-হাদিসে বর্ণনা আছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি (আল্লাহ) জমিনের উপরিভাগকে (বিচার দিবসে) উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবি মিকদাদ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সূর্যকে মানুষের এত কাছে আনা হবে যে তা মাত্র এক অথবা দুই মাইল ব্যবধানে থাকবে। সুলাইম ইবনে আমির (রহ.) বলেন, আমি জানি না ওই মাইল দ্বারা যমিনের দূরত্ব জ্ঞাপক মাইল বোঝানো হয়েছে, না চোখের সুরমা লাগানোর শলাকা বোঝানো হয়েছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪২১)

এ বিষয়ে বিজ্ঞানের ভাষ্য হলো, এমন দিন আসবে, যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে শ্বাস নেওয়ার মতো বাতাস, অক্সিজেন থাকবে না। আদতে পৃথিবীকে ঘিরে থাকবে না কোনো বায়ুমণ্ডলই। সূর্যের প্রচণ্ড তাপে এবং ক্ষতিকর বিকিরণে ধ্বংস হয়ে যাবে ওজোনস্তর। ফলে অক্সিজেননির্ভর প্রাণের পক্ষে টিকে থাকা যেমন সম্ভব হবে না, তেমনি অসম্ভব হয়ে পড়বে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণও। মানুষ তো বটেই, অল্প কিছু অণুজীব ছাড়া কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ বাঁচতে পারবে না এই গ্রহে। ২৪০ কোটি বছরেরও আগে পরিস্থিতি যে রকম ছিল, পৃথিবী আবার ফিরে যাবে সেই অবস্থায়। পৃথিবী তখন ভরে যাবে অত্যন্ত বিষাক্ত মিথেন গ্যাসে। বিভিন্ন তাত্ত্বিক মডেল খতিয়ে করা সামপ্রতিক একটি গবেষণা এই অশনিসংকেত দিয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা নেচার জিওসায়েন্সে। গবেষকরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের ঔজ্জ্বল্যের বাড়া-কমার প্রবণতা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বায়ুমণ্ডলে কিভাবে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ কমে-বাড়ে, সেসবের সব তথ্যও বিশ্লেষণ করেছেন।

সুবহানাল্লাহ! বিজ্ঞানের এই গবেষণাগুলো প্রমাণ করে দেয়, কোরআন-হাদিস চির আধুনিক ও উন্নত।

দৈনিক বগুড়া