শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পারস্পরিক সুসম্পর্ক নষ্ট করা কি গুনাহ?

পারস্পরিক সুসম্পর্ক নষ্ট করা কি গুনাহ?

সুসম্পর্ক হোক তা আত্মীয়তার কিংবা অনাত্মীয়ের। হ্যাঁ পারস্পরিক এ সুসম্পর্ক নষ্ট করা মারাত্মক অপরাধ ও গুনাহের কাজ। শুধু তাই নয়, এতে রিজিকের বরকত কমে যায়; এমনকি তারা জান্নাতেও যেতে পারবে না। কোরআন-সুন্নাহর আলোকে বিষয়টি সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হলো। মহান আল্লাহ আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক নষ্টকারীদের অভিশাপ দিয়ে ঘোষণা করেন-

فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِن تَوَلَّيْتُمْ أَن تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ - أُوْلَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ

‘ক্ষমতা পেলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে কলহ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ দেন। (এমনকি) এরপর তাদের বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন করে দেন।’ (সুরা মুহাম্মাদ : আয়াত ২২-২৩)

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। এমনকি তিনি ঘোষণা করেন-

হজরত যুবাইর ইবনে মুতয়িম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।' (বুখারি ও মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ও পরকালে বিশ্বাস করে সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারি)

প্রতিটি সম্পর্কের বন্ধন আল্লাহর আদালতে অভিযোগ পেশ করবে। বিষয়টিও হাদিসে পাকে এভাবে ওঠে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহ বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আত্মীয়তা আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে বিচ্ছিন্ন করা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনার সময় এটা। আল্লাহ বলেন, হ্যাঁ, তবে তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখব এবং যে তোমাকে ছিন্ন করবে আমি তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করব? তা শুনে আত্মীয়তা বলল, অবশ্যই। তখন আল্লাহ বললেন, তোমার জন্য এরূপই করা হবে। (বুখারি ও মুসলিম)

মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে সম্পর্ক রক্ষা করে চলার ব্যাপারে তাকে ভয় করার কথা বলেছেন। এ বিষয়টি কুরআনুল কারিমের এভাবে এসেছে-

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيراً وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا

হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দুই জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর এবং আত্মীয়তার সম্পর্কের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ০১)

সুসম্পর্ক বজায় রেখে আল্লাহর কাছে পুরস্কার পেতে এ হাদিসের ওপর আমল খুবই জরুরি। তাহলো-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, আমার কিছু আত্মীয় এমন আছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক যতই ঠিক রাখতে চাই ততই তারা ছিন্ন করে। যতই সৎ বা ভালো ব্যবহার করি তারা ততই দুর্ব্যবহার করেন। সহনশীলতা অবলম্বন করলেও তারা বুঝতে চান না।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'যদি ব্যাপারটি এমনই হয়, যেমন তুমি বললে তাহলে তুমি তাদের অতি কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করলে। আর তুমি তাদের সঙ্গে যেভাবে ব্যবহার করছ, তা যদি অব্যাহত রাখতে পার তাহলে আল্লাহ সর্বদা তোমার সাহায্যকারী থাকবেন।’ (মুসলিম)

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব অনেক বেশি। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্ক বজায় রাখাকে রিজিক বৃদ্ধির উপায় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত হওয়া এবং মৃত্যুর সময় পিছিয়ে দেয়া কামনা করে, তার উচিত আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।’ (বুখারি)

তাই মুমিন মুসলমানের উচিত, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো মারাত্মক কবিরাহ গোনাহ থেকে নিজেদের হেফাজত করা। কুরআন-সুন্নাহ দিকনির্দেশনা মোতাবেক আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায রাখার মাধ্যমে কুরআনের এ নির্দেশের বাস্তবায়ন করা। যেমনটি এসেছে কুরআনে-

وَاعْبُدُواْ اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالاً فَخُورًا

‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না এবং সদয় ব্যবহার কর-

১. বাবা-মার সঙ্গে,

২. আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে,

৩. ইয়াতিমের সঙ্গে,

৪. মিসকিসের সঙ্গে,

৫. প্রতিবেশির সঙ্গে,

৬. আর অনাত্মীয় অসহায় মুসাফির,

৭. নিজের সঙ্গী -সহচর এবং

৮. পথচারীদের সঙ্গে।

৯. আর তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে; তাদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা দাম্ভিক-অহংকারীকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৬)

মনে রাখতে হবে

আত্মীয় কিংবা প্রতিবেশি যে-ই হোক; সুসম্পর্ক নষ্ট করলে কেবল গুনাহ বা বড় গুনাহ হবে এমনটিই নয় বরং তাতে রিজিকের বরকত কমে যায়; এমনকি সে ব্যক্তি জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক আত্মীয়তার সম্পর্ক যথাযথভাবে রক্ষা করে হারাম বা কবিরাহ গোনাহ থেকে বিরত থাকা। এ বন্ধন সুদৃঢ় রাখার মাধ্যমে দুনিয়ায় রিজিকের বরকত এবং পরকালে জান্নাত যাওয়ার পথকে সহজ করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব সময় আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। হারাম ও কবিরাহ গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

দৈনিক বগুড়া