বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিয়ের ওয়ালিমা বা বৌভাত কেমন হবে?

বিয়ের ওয়ালিমা বা বৌভাত কেমন হবে?

বিয়ের ক্ষেত্রে ওয়ালিমার আয়োজন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং বৈধ কাজ। এটি বিয়ের প্রচারণার অন্তর্ভুক্ত এবং আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করার শামিল। বিয়ের ওয়ালিমা কেমন হবে সে সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট ঘাষণা দিয়েছেন। কেমন হবে বিয়ের ওয়ালিমা?

বিয়ের ওয়ালিমা বৈধ ও সুন্নত কাজ। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামর্থ্য অনুসারে বরপক্ষকে ওয়ালিমা করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে-

১. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আব্দুর রহমান বিন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন বিয়ে করেছেন তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন, أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ ‘একটি ছাগল দিয়ে হলেও তুমি ওয়ালিমার আয়োজন কর।’ (বুখারি ৫১৬৬ ও মুসলিম)

২. হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, যখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় আসেন তখন আমার বয়স দশ বছর ছিল। আমার মা, চাচী ও ফুফুরা আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খাদেম হবার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। এরপর আমি দশ বছরকাল তাঁর খেদমত করি। যখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকাল হয় তখন আমার বয়স ছিল বিশ বছর। আমি পর্দা সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে অধিক জানি। পর্দা সম্পর্কীয় প্রাথমিক আয়াতসমূহ হজরত যয়নাব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহার সঙ্গে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাসর রাত যাপনের সময় অবতীর্ণ হয়েছিল। সেদিন সকাল বেলা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুলহা ছিলেন এবং লোকদের ওয়ালিমার দাওয়াত করলেন। সুতরাং তাঁরা এসে খানা খেলেন। কিছু লোক ছাড়া সবাই চলে গেলেন। তাঁরা দীর্ঘ সময় অবস্থান করলেন।... (বুখারি ৫১৬৬)

৩. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আবদুর রহমান ইবনু আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু একজন আনসারি নারীকে বিয়ে করলেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, কী পরিমাণ মোহর দিয়েছ? তিনি উত্তর করলেন, খেজুরের আঁটির পরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বলেন, যখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবীগণ মদিনায় আসলেন, তখন মুহাজিরগণ আনসারদের ঘরে অবস্থান করতেন। আবদুর রহমান ইবনু আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু সাদ ইবনু রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘরে অবস্থান করতেন। সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ’আবদুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, আমি আমার বিষয়-সম্পত্তি দু’ভাগ করে আমরা উভয়ে সমান ভাগে ভাগ করে নেব এবং আমি আমার দু’ স্ত্রীর মধ্যে একজন তোমাকে দেব। আবদুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহ তোমার সম্পত্তি ও স্ত্রীতে বারকাত দান করুন। তারপর আবদুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বাজারে গেলেন এবং ব্যবসা করতে লাগলেন এবং লাভ হিসেবে কিছু পনির ও ঘি পেলেন এবং বিয়ে করলেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন, একটি ছাগল দিয়ে হলেও ওয়ালিমাহ কর।’ (বুখারি ৫১৬৭)

৪. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো বিয়ে করেন, তখন ওয়ালীমা করেন, কিন্তু যাইনাব রাদিয়াল্লাহু আনহার বিয়ের সময় যে পরিমাণ ওয়ালিমার ব্যবস্থা করেছিলেন, তা অন্য কারো বেলায় করেননি। সেই ওয়ালীমা ছিল একটি ছাগল দিয়ে।’ (বুখারি ৫১৬৮)

৫. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে আজাদ করে বিয়ে করেন এবং এই আজাদ করাকেই তাঁর মাহর নির্দিষ্ট করেন এবং তার ’হায়স’(এক প্রকার সুস্বাদু হালুয়া) দ্বারা ওয়ালিমাহ’র ব্যবস্থা করেন।’ (বুখারি ৫১৬৯)

৬. হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এক সহধর্মিণীর সঙ্গে বাসর ঘরের ব্যবস্থা করলেন এবং ওয়ালিমার দাওয়াত দেওয়ার জন্য আমাকে পাঠালেন।’ (বুখারি ৫১৭০)

৭. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে, যায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহার বিয়ের আলোচনায় আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু উপস্থিত হয়ে তিনি বললেন, যায়নাব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহার সঙ্গে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিয়ের সময় যে ওয়ালিমার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার চেয়ে বড় ওয়ালিমার ব্যবস্থা তাঁর অন্য কোনো স্ত্রীর বিয়েতে আমি দেখিনি। এতে তিনি একটি ছাগল দ্বারা ওয়ালিমা করেন।’ (বুখারি ৫১৭১)

দৈনিক বগুড়া