হজ নারী-পুরুষ উভয়ের ওপর ফরজ। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তাদের ওপর আল্লাহর উদ্দেশে এ গৃহের হজ করা ফরজ। আর কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষী নন। (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)
ইসলামি শরিয়তে নারীদের হজ করার আলাদা নিয়ম কানুন রয়েছে। হজে যাওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের অতিরিক্ত শর্ত পূরণ হওয়া জরুরি। স্বামী বা মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের হজে গমন শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ নয়, এতে হজ মাকরুহের সঙ্গে আদায় হয়ে গেলেও মহিলা গুনাহগার হবে। (আল জাওহারা: ১/১৫০)
মাহরাম বলতে যাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম তাদেরকে বুঝায়। মানুষ তিন কারণে মাহরাম হতে পারে—১. রক্তের সম্পর্ক বা বংশের কারণে; যেমন—পিতা, পুত্র, আপন ভাই ও সত্ভাই, দাদা-নানা, আপন চাচা ও মামা, ছেলে বা নাতি ইত্যাদি। ২. বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে; যেমন—স্বামী, শ্বশুর, জামাতা ইত্যাদি। ৩. দুধ সম্পর্কের কারণে; যেমন—দুধভাই, দুধছেলে ইত্যাদি।
উল্লেখিত মাহরামদের সঙ্গে নারীরা হজের সফর করতে পারবেন। তবে একা একা দুধভাইয়ের সঙ্গে এবং যুবতি শাশুড়ির জামাতার সঙ্গে যাওয়া নিষেধ। (রদ্দুল মুহতার: ২/৪৬৪)
আর মাহরামের কোনো ব্যবস্থা না থাকলে, ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত হজ আদায় করা নারীদের জন্য শরিয়তসম্মত নয়। এমনকি যদি মৃত্যু পর্যন্ত মাহরামের ব্যবস্থা না হয়, তাহলে বদলি হজের অসিয়ত করে যাওয়া জরুরি, এর দ্বারা তার কর্তব্য আদায় হয়ে যাবে; হজ করতে না পারায় কোনো গুনাহ হবে না। হজ কাফেলার সঙ্গে মাহরাম ব্যতীত মহিলাদের হজে গমন করার ব্যাপারেও শরিয়তে অভিন্ন বিধান। (ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৫/৫৪০)
প্রসঙ্গত, অনেক নারী মাহরাম ছাড়া একাকি উড়োজাহাজে সফর করে থাকে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, মাহরাম পুরুষ তাদেরকে এয়ারপোর্টে বিমানে তুলে দেয় এবং পরবর্তী এয়ারপোর্টে আরেক মাহরাম তাদেরকে রিসিভ করে থাকে। আর সে তো উড়োজাহাজের মধ্যে নিরাপদেই থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যুক্তিটি অসার। কেননা তার মাহরাম তো প্লেনে তাকে উঠিয়ে দিতে পারে না। বড়জোর তাকে ওয়েটিং হলে বা ইমিগ্রেশন পর্যন্ত ছেড়ে আসতে পারে। কখনো প্লেন ছাড়তে দেরি হতে পারে। কখনো কারণবশত গন্তব্য এয়ারপোর্টে প্লেন অবতরণ করা সম্ভব হয় না। তখন এ নারীর কী অবস্থা হবে? কখনও হয়ত গন্তব্য এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণ করল ঠিকই কিন্তু মাহরাম ব্যক্তিটি তাকে রিসিভ করতে পারল না। হয়ত সে অসুস্থ হয়ে গেল কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা হলো ইত্যাদি যেকোনো কারণ ঘটতে পারে।
অথবা এমনও হতে পারে- প্লেনের মধ্যে তার সিটের পাশে এমন লোক বসেছে, যে আল্লাহকে ভয় করে না, ফলে সে নারীকে বিরক্ত করতে পারে বা নারীই তার প্রতি আসক্ত হতে পারে। তাহলেই তো নিষিদ্ধ ফেতনার বীজ বপন হয়ে গেল- যেমনটি কারো অজানা নয়।
মূলত মাহরাম ছাড়া সফর করা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাদিসের পরিপন্থী কাজ। মাহরাম ছাড়া সফরে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। এক হাদিসে নবীজি (স.) বলেছেন, কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে তার মাহরাম ব্যতিরেকে একাকি অবস্থান না করে। তখন এক ব্যক্তি উঠে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য নাম লিখিয়েছি। ওদিকে আমার স্ত্রী হজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে। নবীজি (স.) বললেন, ফিরে যাও। তোমার স্ত্রীর সাথে হজ করো। (সহিহ বুখারি: ৫২৩৩; সহিহ মুসলিম: ১৩৪১)
অতএব, নারীর ওপর ওয়াজিব হচ্ছে আল্লাহকে ভয় করা এবং কোনো মাহরাম ছাড়া কখনো সফরে বের না হওয়া। অভিভাবক পুরুষদের ওপরও ওয়াজিব হচ্ছে, হজে তাদের নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা, নারীদের ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় না দেওয়া। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সকল নারী-পুরুষকে সামর্থ্য অর্জন করলে অবিলম্বে হজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। নারীদের বিশেষ বিধি-বিধান যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
মহিলাদের হজ্জ করার শর্ত, নারীর হজ ও উমরা, মহিলাদের ওমরা পালনের নিয়ম, মাহরাম কারা, মাহরাম হজ, মহিলা হাজির সঙ্গী হতে পারবেন কে, হজে যাবার নিয়ম, মাহরাম তালিকা
দৈনিক বগুড়া