সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১

গায়েবানা জানাজা কি জায়েজ?

গায়েবানা জানাজা কি জায়েজ?

সংগৃহীত

‘গায়েবানা জানাজা’ নিয়ে বেশ তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলছে জায়েজ, আবার কেউ বলছে এই জানাজা জায়েজ নেই। আসলে এ বিষয়ে শরিয়ত কি বলে? 

কেউ মারা গেলে অপর মুসলিমের জন্য তার জানাজা কাফন-দাফন করা আবশ্যক। এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী (রা.)-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে আলী! ৩টি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না। ১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না’। (তিরমিজি ১/২০৬)

জানাজা নামাজ আদায়ের জন্য মৃতের লাশ সামনে উপস্থিত থাকা জরুরি। লাশ সামনে রেখে ইমাম দাঁড়াবেন এবং তার বরাবর পেছনে লাইনে দাঁড়াবেন মুসল্লিরা। এটাই মূলত জানাজা নামাজের নিয়ম।

অর্থাৎ জানাজা নামাজ আদায়ের জন্য মৃতের লাশ সামনে উপস্থিত থাকা জরুরি। অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাজা নামাজ সহিহ নয়।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় তার অসংখ্য সাহাবি মদিনার বাইরে শহিদ হয়েছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাদের গায়েবানা জানাজা পড়ার প্রমাণ নেই।

অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের জানাজার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন এবং তিনি ঘোষণাও দিয়েছিলেন যে, তোমাদের যে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে জানাবে। কারণ আমার জানাজা নামাজ তার জন্য রহমত। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৩০৮৩)

অনেক সময় ব্যক্তি বিশেষের মৃত্যুর পর গায়েবানা জানাজা পড়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ বিষয়ে ফেকাহ শাস্ত্রের প্রখ্যাত ইমাম, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও তার অনুগামী সব ইমাম এবং ইমাম মালেক (রহ.) এর মতে- গায়েবানা জানাজা জায়েজ নেই। চাই দাফনের আগে হোক বা পরে। মাইয়্যিত শহরের ভেতরে থাক বা বাইরে। (মাবসূতে সারাখসী- ২/৬৭, দারুল কুতুবিল ইলমিয়া, বৈরুত, মানহুল জালীল- ১/৩৭৬ পৃষ্ঠা)

তবে রাসূল (সা.) এর জীবনে আবিসিনিয়ার বাদশা নাজাশীর মৃত্যুর পর একটি ব্যতিক্রমী আমল দেখা যায়। বাদশা নাজাশী মারা যাওয়ার পর তিনি তার উদ্দেশ্যে গায়েবানা জানাজার নামাজ পড়েন।

ফেকাহবিদ আলেমদের মতে, শুধু নাজাশীর জানাজা পড়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে গায়েবানা জানাজা জায়েজ হওয়াকে প্রমাণ করে না। এছাড়া মুসনাদে আহমদ ও সহিহ ইবনে হিব্বানে নাজাশীর জানাজা সম্পর্কিত একটি হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, নাজাশীর লাশ কুদরতিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনেই উপস্থিত ছিল।

ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের ভাই নাজাশী ইন্তেকাল করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাজা আদায় করো। ইমরান (রা.) বলেন, অতঃপর রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। আর আমরা তার পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতঃপর তিনি তার জানাজা পড়ালেন। আমাদের মনে হচ্ছিল যে, নাজাশীর লাশ তার সামনেই রাখা ছিল। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস ২০০০৫;সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৩০৯৮)

এছাড়া অনেক মুহাদ্দিসগণ নাজাশীর জানাজা সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এ ঘটনাটি বিশেষ এক প্রয়োজনের কারণে সংঘটিত হয়েছিল। তা হলো, নাজাশীর মৃত্যু হয়েছিল এমন এক ভূখণ্ডে যেখানে তার জানাজা পড়ার মতো কোনো (মুসলিম) ব্যক্তি ছিল না। তাই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ নিয়মের বাইরে তার জানাজা পড়িয়েছেন।

তাই, বিভিন্ন পরিস্থিতির আলোকে আলেমদের মতামত হলো, নাজাশীর জানাজা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের স্বাভাবিক রীতি বহির্ভূত মাত্র একটি ঘটনা। এর ওপর ভিত্তি করে ব্যাপকভাবে প্রচলিত গায়েবানা জানাজাকে বৈধ বলার সুযোগ নেই। কেননা অনুসৃত সুন্নাহর সঙ্গে এটির কোনো মিল নেই।

এছাড়া যে লাশের কোথাও জানাজার ব্যবস্থা আছে এবং তার জানাজা হয়েছে বা হচ্ছে তার গায়েবানা জানাজা পড়ার একটি ঘটনাও হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায় না।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

সর্বশেষ: