মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মহাকা‌শে কার জন্য পাঠা‌নো হ‌লো পিৎজা?

মহাকা‌শে কার জন্য পাঠা‌নো হ‌লো পিৎজা?

এবার মহাকাশে বসেই খেতে পারবেন পছন্দের পিৎজা। কি অবাক হচ্ছেন? মোটেও রসিকতা করছি না। সত্যি সত্যিই মহাকাশে অবস্থানকালে খেতে পারবেন আরো সব খাবারের সঙ্গে পিৎজাও।

বর্তমানে মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করছেন ৭ জন নভোচারী। তাদের মধ্যে ৩ জন আমেরিকান, ২ জন রাশিয়ান এবং একজন করে ফরাসি ও জাপানি। তাদের জন্য নরথ্রপ গ্রাম্যানের একটি কার্গো যান পাঠানো হয়েছে, যাতে রয়েছে পিৎজা ও কিছু প্রয়োজনীয় পণ্য। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব ভার্জিনিয়া থেকে এই কোম্পানির বিশেষ মহাকাশযান সিগনাস কার্গো শিপটি মঙ্গলবার ছেড়ে গেছে। এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পৌঁছবে বৃহস্পতিবার। 

গত মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) মার্কিন মহাকাশ কোম্পানি নর্থরোপ গ্রুম্যান আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ৭ জন নভোচারীর জন্য ৮ হাজার ২০০ পাউন্ড বা ৩ হাজার ৭০০ কিলোগ্রাম ওজনের বিভিন্ন জিনিসপত্র পাঠিয়েছে। এদের মধ্যে পিৎজাসহ ছিল টমেটো ও আপেলও। এ নিয়ে নাসার হয়ে ১৬ বারের মতো পণ্য পাঠাল নর্থরোপ। এর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় চালান। মহাকাশ স্টেশনে থাকা আমেরিকা, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সাত মহাকাশচারীর জন্যই মূলত পাঠানো হয়েছে আপেল, টমেটো, কিউই, চিজ স্মরগাসবোর্ড ইত্যাদি।

রকেটিটিতে আরো যেসব জিনিস রয়েছে তার মধ্যে মহাকাশ কেন্দ্রের ল্যাবের জাহাজের নতুন সোলার উইংয়ের জন্য একটি মাউন্টিং ব্রাকেট এবং আরো কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে। যার মাধ্যমে মহাকাশ কেন্দ্রে থ্রিডি প্রিন্টারে চাঁদের ধূলিকণা ও ক্ষুদ্র বস্তুকণা দিয়ে আগামী বছর জিনিসপত্র তৈরির চেষ্টা করা হবে।

নাসার জন্য মহাকাশে এ নিয়ে এটি নরথ্রপ গ্রাম্যানের ১৬তম যান এবং সর্ববৃহৎ সরবরাহ। নাসার ওয়ালোপ ফ্লাইট ফ্যাসিলিটি থেকে কোম্পানির রকেটে ক্যাপসুলটি ছাড়া হয়। ১৯৮৬ সালে চ্যালেঞ্জার উৎক্ষেপণের সময় দুর্ঘটনায় মারা যান মহাকাশে যাওয়া প্রথম এশিয়ান-আমেরিকান। তার নামেই ক্যাপসুলের নাম দেওয়া হয় ‘হাওয়াই ওনিজুকা’।

নাসার আরেক পরিবহন রকেট স্পেসএক্স আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে গ্রহাণু বেনু পরবর্তী দুই শতাব্দী পরে কোথায় গিয়ে অবস্থান করবে, তা ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আর কোনো সন্দেহ থাকল না। এই ভালো খবরটির পাশাপাশি খারাপ সংবাদটি হলো—উল্কাপিণ্ডের পৃথিবীতে আঘাত হানার আশঙ্কা আগে যা করা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি।

আবার আগামী শতাব্দীতে বেনু পৃথিবীতে হামলে পড়ার আশঙ্কা একেবারেই কম বলে বুধবার (১১ আগস্ট) জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সেন্টার ফর নিয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজের বিজ্ঞানী ডেভিড ফার্নোচিয়া বলেন, এটি নিয়ে আমাদের খুব একটা হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, আগামী এক কিংবা দু-শতাব্দীতে বেনুর আঘাত হানার আশঙ্কা দুই হাজার ৭০০-এর মধ্যে এক শতাংশ কিংবা এক হাজার ৭৫০-এর মধ্যে এক শতাংশ হতে পারে। নাসার ওসিরিস-রেক্স মহাকাশযানের বদৌলতে বেনুর গতিপথ নিয়ে বিজ্ঞানীদের অনেক ভালো ধারণা রয়েছে।

এই বিজ্ঞানীরা বলেন, আমি মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

বেনু হচ্ছে এপোলো গ্রুপের একটি গ্রহাণু। নাসার লিনিয়ার প্রজেক্টের মাধ্যমে এটি আবিষ্কৃত হয়। পৃথিবীর সঙ্গে এর সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। বেনু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য নাসা ওসিরিস রেক্স মিশন পরিচালনা করেছে, যা গ্রহাণুটির গঠনগত প্রকৃতি ও আকৃতি সম্পর্কে সুষ্ঠু ধারণা দিতে পারবে।

গ্রহাণু বেনুর ঘূর্ণায়মান ধ্বংসস্তূপ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরোক্ষ গতিপথে ফিরে আসছে ওসিরিস-রেক্স। সৌরজগতের পরিচিত বিপজ্জনক গ্রহাণুর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটির একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় বেনুকে। আরও দুবছর পর ২০২৩ সালে এই নমুনা পৃথিবীতে এসে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০১৮ সালে ওসিরিস-রেক্স বেনুতে আসার আগে গ্রহাণুর ভেতরকার বিষয়াদি নিয়ে নিখাদ ধারণা দিয়েছে বিভিন্ন দূরবীক্ষণ যন্ত্র। গ্রহাণুর ব্যাস এক মাইলের এক-তৃতীয়াংশ হতে পারে। ভবিষ্যতে গ্রহাণুর প্রদক্ষিণ পথ নিয়ে বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যদ্বাণীর সহায়তায় গত আড়াই বছরে যথেষ্ট উপাত্ত সংগ্রহ করেছে এই মহাকাশযান।

এ নিয়ে গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে ইকারোস সাময়িকীতে। এতে গ্রহাণুর গতিপথ নিয়ে মানচিত্র তৈরি করতে সহায়তা করবে এসব তথ্য-উপাত্ত। ভবিষ্যতে কখন আরেকটি বিপজ্জনক উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে, তা নিয়েও ভালো ধারণা পাবেন বিজ্ঞানীরা।

ওসিরিস-রেক্স ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগে বেনুর পৃথিবীতে আঘাত হানা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছেন বিজ্ঞানীরা। বলা হয়, ২২০০ সালে এটির আঘাত হানার শঙ্কা দুই হাজার ৭০০-এর মধ্যে এক শতাংশ। আর ২৩০০ সালে সেই আশঙ্কা এক হাজার ৭৫০-এর মধ্যে এক শতাংশ। আর এককভাবে সবচেয়ে ভয়ের দিনটি হচ্ছে ২১৮২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর।

২১৩৫ সালে বেনু পৃথিবীতে সবচেয়ে কাছাকাছি চলে আসতে পারে। তখন এটি চাঁদের অর্ধেক দূরত্ব দিয়ে অতিক্রম  করবে। নাসার গ্রহ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা লিন্ডলি জনসন বলেন, বেনু যদি পৃথিবীতে আঘাত হেনেই বসে, তবে প্রাণীজগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে না। বরং গ্রহাণুর চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বড় জ্বালামুখ তৈরি করতে পারবে।

দৈনিক বগুড়া