বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এক ওভারে ৩৫ রান, টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্ব রেকর্ড বুমরাহর

এক ওভারে ৩৫ রান, টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্ব রেকর্ড বুমরাহর

ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ওভারের ৬ বলে ৬ ছক্কা মেরে ৩৬ রান তোলার রেকর্ড আছে বেশ কয়েকটি। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে এক ওভারে সর্বোচ্চ কত রান নেয়া যায়? যেখানে টেস্টে ব্যাট করতে হয় টুক টুক করে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে রেখে রান তুলতে হয়, যেখানে রান তোলার হার ৩ কিংবা তার বেশি হলেই অনেকে বাহবা দিতে থাকেন, সেখানে এক ওভারে সর্বোচ্চ কত রান হতে পারে?

টেস্টে বোলারকে পিটিয়ে এক ওভারে সর্বোচ্চ ২৮ রান পর্যন্ত নেয়ার রেকর্ড ছিল। তাও একটি নয়, তিনটি। সেই তিন রেকর্ডের সাথে জড়িয়ে ছিল ব্রায়ান লারা, জর্জ বেইলি এবং কেশভ মাহারাজের নাম।

এবার এদের সবাইকে এক সঙ্গে ছাড়িয়ে গেলেন ভারতের জসপ্রিত বুমরাহ। বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে চলমান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ইংলিশ বোলার স্টুয়ার্ট ব্রডকে পিটিয়ে এক ওভার থেকে ৩৫ রান তুলেছেন ভারতের অধিনায়ক বুমরাহ। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত এক ওভারে সর্বোচ্চ রান নেয়ার রেকর্ড এটি।

ভারতীয় ইনিংসের ৮৪তম ওভারের ঘটনা এটি। ৩৫ রান এলেও বুমরাহর ব্যাট থেকে এসেছে ২৯ রান। বাকি ৬ রান এসেছে অতিরিক্ত থেকে। ৮০তম ওভারের ৪র্থ বলে মোহাম্মদ শামিকে ফিরিয়ে দেন স্টুয়ার্ট ব্রড। এরপরই ব্যাট করতে নামেন বুমরাহ। ৮৪তম ওভার শুরুর আগে ৭ বল মোকাবেলা করে একটি রানও করতে পারেননি বুমরাহ। এ সময় ভারতের রান ছিল ৯ উইকেটে ৩৭৭।

৮৪তম ওভারে স্টুয়ার্ট ব্রডের করা প্রথম বলেই হুক করেন ভারতীয় টেল এন্ডের এই ব্যাটার। বাউন্ডারি থেকে এলো ৪ রান। পরের বল ওয়াইড, উইকেটরক্ষকও বলটি ধরে রাখতে পারেননি। বল বাউন্ডারির বাইরে, ওয়াইডের কারণে এলো ৫ রান।

পরের বলটি স্টুয়ার্ট ব্রড দিলেন নো। সঙ্গে আবারও হুক করে বলকে সোজা বাউন্ডারির ওপারে নিয়ে ফেলেন বুমরাহ। হলো ছক্কা। নো হওয়ার কারণে এই বল থেকে এলো ৭ রান। অর্থ্যাৎ, ১টি মাত্র বৈধ বল হলো, ততক্ষণে চলে এলো ১৬ রান।

পরের বলটি ছিল ফুল টস। আবারও ব্যাট চালালের বুমরাহ। এবার বাউন্ডারি। ২ বলে এলো ২০ রান। তৃতীয় বলটি ব্যাটের কানায় লেগে আবারও বাউন্ডারির বাইরে। ৩ বল শেষে হলো ২৪ রান।

চতুর্থ বলে আবারও বাউন্ডারি। ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে দিলেন ভারতীয় এই ব্যাটার। ৪ বলে ২৮ রান। আগের তিন বিশ্ব রেকর্ডের সমান রান করে ফেললেন বুমরাহ। ব্রায়ান লারা, জর্জ বেইলি কিংবা কেশভ মাহারাজকে ছুঁয়ে ফেললেন তিনি। অথচ, ২টি বল তখনও বাকি।

পঞ্চম বলটিকেও রক্ষা দিলেন না বুমরাহ। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে বল ভাসিয়ে দিলেন বাতাসে। চলে গেলো সোজা বাউন্ডারির বাইরে। ছক্কা। ৫ বল থেকে চলে এলো ৩৪ রান। শেষ বলটিতে বড় শট খেলতে পারেননি বুমরাহ। নিতে পারলেন কেবল ১ রান।

স্টুয়ার্ট ব্রডের ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের একটি ওভার শেষ হলো ৩৫ রান খরচায়। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (টি-টোয়েন্টি) প্রথমে এক ওভারের ৬ বলে ৬ ছক্কার যে রেকর্ড যুবরাজ সিং করেছিলেন, ওই ওভারের দুঃস্বপ্ন দেখা বোলারটিও ছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড।

১৫ বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে এক ওভারে সবচেয়ে বেশি রান হজম করা বোলারটিও হলেন ব্রড। দুটি বাজে রেকর্ডের সঙ্গে জড়িয়ে গেলো তার নাম। অথচ, এমন কোনো রেকর্ডের সাথে কখনোই কেউ চাইবেন না তার নিজের নাম জড়াক।

৮৩তম ওভারে ভারতের রান ছিল ৩৭৭, ৮৪তম ওভার শেষে তাদের রান হলো ৪১২। শেষ পর্যন্ত এন্ডারসনের বলে মোহাম্মদ সিরাজ আউট হতে ৪১৬ রানে শেষ হলো ভারতের ইনিংস।

২০০৩ সালের ডিসেম্বরে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রব্নি পিটারসেনকে পিটিয়ে ২৮ রান নিয়েছিলেন ব্রায়ান লারা। ২০১৩ সালের ডিনেম্বরে পার্থে জেমস অ্যান্ডারসনকে পিটিয়ে ২৮ রান নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জর্জ বেইলি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জো রুটের এক ওভার থেকে ২৮ রান নিয়েছেলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেশভ মাহারাজ।

দৈনিক বগুড়া