বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজ ৪ নভেম্বর, ধুনটের গণহত্যা দিবস

আজ ৪ নভেম্বর, ধুনটের গণহত্যা দিবস

আজ ৪ নভেম্বর, বগুড়ার ধুনট উপজেলার শোকাবহ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা ধুনট উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৯জন নিরহ বাঙালীকে হত্যা করে। পরে গণহত্যার শিকার ২৯জন ব্যক্তির মৃতদেহ ধুনট পৌর এলাকার পশ্চিম ভরনশাহী গ্রামে দু’টি কবরে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। যা বর্তমানে গণকবর হিসেবে পরিচিত। 

গণহত্যা দিবসে নিহতরা হলেন, ভরনশাহী গ্রামের জহির উদ্দিন, কান্তনগর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান, মাজবাড়ি গ্রামের একই পরিবারের দুই ভাই জিল্লুর রহমান, ফরহাদ আলী ও পর্বত আলী, চাঁন্দার পাড়ার গ্রামের আব্দুল লতিফ, শিয়ালী গ্রামের নরুল ইসলাম। এছাড়া গণহত্যার শিকার ২১জনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। 

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, একাত্তুরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পাক সেনারা ধুনট থানায় ক্যাম্প করে। তারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত টহল দিতে থাকে। বাছাইকৃত কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের 
খবর অনুসন্ধানের জন্য পাক সেনারা রাজাকারদের দায়িত্ব দেয়। ১৯৭১ সালের ৩ নভেম্বর রাতে রাজাকারদের তথ্য নিয়ে মাঠে নামে পাক সেনারা। রাজাকারদের সহযোগিতা নিয়ে উপজেলার কয়েকটি স্থানে হানা দেয় পাক বাহিনী। তারা মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার আশ্রয়দাতাসহ মোট ৩০জন লোককে আটক করে থানা ক্যাম্পে নিয়ে আসে। গভীর রাত পর্যন্ত আটককৃতদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালায় পাক সেনারা। এদের মধ্যে অজ্ঞাত একজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। 

পশ্চিম ভরনশাহী গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, একাত্তুরের এই দিনে থানা ভবন থেকে আটক ব্যক্তিদের পাকসেনারা সেখানে নিয়ে আসে। এরপর সেখানে গর্ত তৈরী করে তার মধ্যে আটককৃতদের নামানো হয়। এমন সময় মাটির গর্তে থাকা নিরহ 
বাঙ্গালীদের ব্র্যাশ ফায়ার করে হত্যা করে পাক সেনারা। 

শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রেজাউল হক মিন্টু বলেন, পাক সেনারা মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৯জন নিরহ বাঙালীকে হত্যা করে গণকবর দিয়েছে। গণকবর দু’টি সংরক্ষণ এবং সাধারণ মানুষের পরিদর্শনের পরিবেশ তৈরী করতে হবে। গণহত্যায় শহীদ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের পরিচয় অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, গণহত্যার নির্মম ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে আনতে হবে। এজন্য গণহত্যা দিবসটি উদযাপন করা এবং শহীদদের স্মরণ করার উদ্যোগ নেওয়ার দাবী জানাই। 

ধুনট উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, ইতিপূর্বে গণকবরে যাওয়ার নিজস্ব কোন সড়ক ছিলো না। চলতি বছর উপজেলা প্রশাসন সড়ক নির্মাণের জন্য জায়গা ক্রয় করেছে। তবে সড়কটির নির্মাণকাজ এখনো শুরু হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ধুনটের গণহত্যা দিবস ঘিরে বিশেষ কোন আয়োজন নেই। তবে জাতীয় দিবস গুলোতে গণকবরণ জিয়ারত করা হয়।

দৈনিক বগুড়া