বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন আজ

করোনা টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন আজ

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের এক জন নার্সসহ ২৫ জনকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে আজ বুধবার করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা সাড়ে ৩টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

তিনি ভিডিও কনফারেন্সেই প্রথম পাঁচ জনের ওপর টিকার প্রয়োগ প্রত্যক্ষ করবেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরোনিকা কস্তা প্রথম কোভিড-১৯ টিকা পাবেন। নার্স রুনুর পর তার সহকর্মী আরও দুই জন সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নি খাতুন ও রিনা সরকারকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

এছাড়া দেশে প্রথম চিকিৎসক হিসেবে টিকা পাবেন মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আহমেদ লুত্ফর মবিন। এদিন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সম্মুখসারির কোভিড যোদ্ধাদের (যেমন: নার্স, চিকিৎসক, সহকারী স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ ও সেনাসদস্য এবং সাংবাদিকসহ) মধ্যে থেকে ২৫ জনকে টিকা দেওয়া হবে।

নতুন শনাক্ত ৫১৫, মৃত ১৪: বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ; তা সোয়া ৫ লাখ পেরিয়ে যায় গত ১৪ জানুয়ারি। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ৫১৫ জনকে নিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৯১৬ জন হয়েছে। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ২৩ জানুয়ারি তা ৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৪ জনকে নিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ৫৫ জনে দাঁড়িয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫১ শতাংশ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল মঙ্গলবার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি দেখতে এসে সাংবাদিকদের বলেন, এই হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমেই সারা দেশে টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধন কার্যক্রমও চালু হয়ে যাবে। আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে সুরক্ষা অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপের মাধ্যমে কারা টিকা নিতে পারবে আর কারা পারবে না তা জানা যাবে। যারা অ্যাপসের গাইডলাইন মেনে নিবন্ধন করবে বা নিবন্ধন করতে সক্ষম হবে তারা সবাই টিকা পাবে।

এদিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এই পাঁচটি হাসপাতাল হলো—কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা হাসপাতাল। সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি। প্রথম যারা টিকা পাবেন, তাদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও পুলিশ, সেনাবাহিনী, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ থাকবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তার জন্য প্রতিটি হাসপাতালেই আলাদাভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান।

 

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকার যে ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনছে, তার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ সোমবার দেশে পৌঁছেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রথম চালানের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতিও দিয়েছে। এর আগে ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ২০ লাখ ডোজ পেয়েছে সরকার। বাংলাদেশে যেহেতু এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি, তাই প্রথম দফায় ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর প্রয়োগ করে দেখা হবে। সব ঠিক থাকলে ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে সারা দেশে টিকাদান। সেজন্য হাতে থাকা ঐ ৭০ লাখ টিকার বেশির ভাগ অংশ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারির কথা বলা হলেও আমরা ৭ তারিখেই সারা দেশে শুরু করার চিন্তা করছি।’

যারা এই টিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ‘বিভ্রান্তিকর’ কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশে জাহিদ মালেক বলেন, ‘টিকা আনা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে, শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। এজন্য গত ৯ মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। কাজেই করোনা ভাইরাসের টিকা সরকারের কাছে কোনো রাজনীতি নয়। এটা মানুষের জীবনরক্ষা করতে আনা হয়েছে। যারা এই টিকা নিয়ে বিরূপ প্রচার চালাচ্ছেন, তারা ভালো কাজ করছেন না।

দৈনিক বগুড়া