বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা পরিস্থিতিতেও শেরপুর পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ঋণ বিতরণ চলমান

করোনা পরিস্থিতিতেও শেরপুর পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ঋণ বিতরণ চলমান

সারা দেশের মানুষের ন্যায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত সাড়া থাকায় এ উপজেলাতেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের প্রকল্পগুলো। এই করোনাকালীন সময়েও উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে দরিদ্র মানুষের প্রত্যাশা পূরণে দৃশ্যমান প্রতীকে পরিণত হয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পটি। আর তাই এই করোনাকালীন সময়েও এ উপজেলায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৭৫ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়ছে বলে জানা গেছে। 

শেরপুর উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কার্যালয় সুত্র জানায়, দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতির মাঝেও গত ৯০ দিনে ৫% সুদে ১ বছর মেয়াদী বিভিন্ন ট্রেডের ১৮ জন উদ্যোক্তাকে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ৩ মাস মেয়াদী শস্য গোলা ঋণ হিসেবে ৬০ জনকে ২০ হাজার টাকা করে ১২ লাখ,  সাধারণ ঋণ হিসেবে ১১৩ জনকে ৪৯ লাখ ৫৩ হাজার সব মিলিয়ে ১৯১ জনকে ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের ঋণ গ্রহণ করছেন এক নারী। ঋণ বিতরণ করছেন (ডানে) শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী শেখ। (মাঝে) শেরপুর উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোঃ মিজানুর রহমান।

 

চলমান করোনা পরিস্থিতিতেও ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে শেরপুর উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোঃ মিজানুর রহমান  দৈনিক ডেল্টা টাইমস্ কে বলেন, গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খাবার আর পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে চায়। কিন্তু চলমান করোনা পরিস্থিতি যেন তাদের সেই স্বাভাবিক জীবনধারাকে বাধাগ্রস্থ করেছে। 

বাইরে কাজ নেই নেই অন্ন সংস্থান। এ পরিস্থিতিতে অনেকটাই অসহায় গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী। করোনাতেও যেন (বাড়ির অঙিনায় শাকসবজির আবাদ, হাঁস-মুরগী পালন, কুটির শিল্প, নার্সারী, মাছ চাষ, গবাদিপশু পালন) করে তাদের আয়ের পথ সচল থাকে সেই দিক বিবেচনা করে প্রকল্পের সমন্বয়ক বগুড়া জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং এ উপজেলার প্রকল্পের নিয়ন্ত্রক শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী শেখ স্যারের নির্দেশনা এবং বিশেষ সহযোগিতায় করোনা পরিস্থিতিতেও ঋণ দান কার্যক্রম  অব্যাহত রয়েছে।  তিনি আরো বলেন, মানুষের চলমান দুঃখ দূর্দশার কথা মাথায় রেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী শেখ স্যার ঋণ দানের ব্যাপারে ঋণ নিতে আগ্রহীদের সকল কাগজপত্র অফিসিয়াল অন্যান্য কার্যক্রমের সকল ব্যস্ততার মাঝেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সই স্বাক্ষর করেছেন। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী শেখ দৈনিক ডেল্টা টাইমস্ কে বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে কাজের অভাবে আয় নেই অনেকের। যারফলে ন্যূনতম মানসম্পন্ন জীবনযাপন করাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার কেউ কেউ পুঁজির অভাবে চাষাবাদসহ কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন উৎপাদনমূলক কাজে বিনিয়োগও করতে পারছেনা। ফলে পরিবারের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ পরিস্তিতিতে অনেকেই এনজিও’র দারস্থ হয়ে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে কিস্তির চাপে পড়বে। 

সরকারের নির্দেশে এসব দরিদ্র মানুষকে আত্মনির্ভরশীলতায় সক্ষম করে দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে চাষাবাদে পুঁজি বিনিয়োগসহ অন্যান্য আয় বৃদ্ধি করে তাদের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান ও জীবিকায়নের সমৃদ্ধি ঘটাতে উক্ত ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা এ ঋণদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। 

উল্লেখ্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি চালু হয়। পরবর্তীতে  প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় ও অনুশাসন বিবেচনা করে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ নাম বদলে প্রকল্পটির নাম দেয়া হয় ‘আমার বাড়ি আমার খামার’। প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগের শীর্ষে রয়েছে এই বিশেষ উদ্যোগটি। সেই থেকে ‘শেখ হাসিনার উপহার আমার বাড়ি আমার খামার, বদলাবে দিন তোমার-আমার’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে দারিদ্র্য নির্মূলে উদ্যোগটির যাত্রা শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সদস্যরা যাতে দুশ্চিন্তায় না পড়েন, সেজন্যই এ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনীতে সারা দেশের প্রত্যেক উপজেলায় গঠন করা হয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। এই প্রকল্পে যে তহবিল গঠিত হয়েছে তা রক্ষণাবেক্ষণ এবং সদস্যদের স্থায়ী লেনদেন করাই এ ব্যাংকের কাজ।

দৈনিক বগুড়া